Advertisment

খড়্গপুর উপনির্বাচনে নিজের ঘরেই কি লুকিয়ে তৃণমূলের বিপদ?

দলের এই অংশ নামকা-ওয়াস্তে প্রচারে থাকছেন। এই অংশের অনুগামীরা কোনদিকে ভোট দেবেন? ভোটের দিন কী ভূমিকা নেবেন? সেই সব বিষয়ই চিন্তায় ফেলেছে রাজ্যের শাসকদলকে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
TMC Kharagpur

খড়্গপুরে নির্বাচনী প্রচার তৃণমূল কংগ্রেসের। ফাইল ছবি

খড়্গপুর শহরে প্রবেশ করলে যে কেউ স্বীকার করতে বাধ্য উপনির্বাচনী প্রচারে ধারে-ভারে এগিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস। তা ব্যানার-ফেস্টুন হোক বা মাইকিং। সভা-সমাবেশ, মিছিলেও অন্য়দের থেকে কয়েককদম এগিয়ে ঘাসফুল শিবির। খড়্গপুরে তৃণমূলের পক্ষে বইছে মৃদু হাওয়াও। এতদ সত্ত্বেও শুধু পদ্মকাঁটাও নয়, তৃণমূলের অন্দরমহল জয় নিয়ে কতটা নিশ্চিত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisment

তখন রাত সাড়ে এগারোটা। খড়্গপুরের ওল্ড সেটেলমেন্ট এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী কার্যলয়ে উপছে পড়া ভিড়। যুবদের উপস্থিতি অনেকটাই বেশি। নির্বাচন যে একেবারে দোরগোড়ায় তা এই অফিসের চিত্র মনে করিয়ে দিচ্ছিল প্রতি মুহূর্তে। নির্বাচনী ব্যস্ততা তুঙ্গে। তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকার ঘনঘন ছোট ছোট বৈঠক সেরে নিচ্ছেন দলীয় কর্মীদের সঙ্গে। পরের দিনের দলীয় কর্মসূচী কীভাবে রূপায়িত হবে তার নির্দেশ দিচ্ছেন প্রার্থী। রাত একটা-দেড়টা নাগাদ প্রার্থীর ফুরসত মিলছে এই অফিস থেকে বেরতে। প্রদীপবাবু নিজেই সেকথা জানালেন।

আরও পড়ুন- কেন লোকসভা ভোটে কোচবিহারে পরাজয়? কারণ বাতলালেন মমতা

এত তোড়জোরের পরও কি তৃণমূলের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে খড়্গপুরে তৃণমূলের অন্দরে। প্রার্থী নিজে একশো ভাগ নিশ্চিত এবার তৃণমূল খড়্গপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয় পাবেই। লোকসভা নির্বাচনের প্রায় ৪৫ হাজারের ব্যবধান কি ভাবে ঘোচাবেন? তা কি সম্ভব? প্রদীপবাবুর জবাব, "নিশ্চই পারব। খড়্গপুরের মানুষ আমাদের পুরসভার দ্বারা উন্নয়ন দেখেছে। ২০১৫-এর আগে কি ছিল খড়্গপুরে? এখন কি হয়েছে।  তা চাক্ষুস দেখছে শহরবাসী। প্রচারের বাজারে শুধু আমরাই আছি। কেউ নেই। এক একটি ওয়ার্ডে দেড় হাজার মহিলা হাঁটছে। ওদের মিটিং-এ ১০টা লোকও নেই। এবার আমরা ইতিহাস করব।"

pradip sarkar tmc খড়্গপুরের তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকার। ছবি -শশী ঘোষ

দলের একাংশের মতে, শহর তৃণমূল নেতৃত্বের একটা বড় অংশ এই উপনির্বাচনে অনেকটাই নিষ্প্রভ। খড়্গপুরের নির্বাচন নিয়ে কোনও তাপ-উত্তাপ নেই সেই অংশের। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের এক জাঁদরেল তৃণমূল নেতার গলায় সংশয়, "প্রচারে আমরা এগিয়ে ঠিকই, কিন্তু জয় পাব তো? অনেকেই তো প্রায় বসে গিয়েছেন এই নির্বাচনে।" তাঁদের মতে, দলে অনেক প্রবীণ নেতাই ছিল প্রার্থী হওয়ার যোগ্য়। প্রার্থী হতে না পারায় দলে থেকেও নির্বাচনে কাজ করায় কোনও মন নেই সেই নেতাদের অনুগামীদের। দলের এই অংশ নামকা-ওয়াস্তে প্রচারে থাকছেন। এই অংশের অনুগামীরা কোনদিকে ভোট দেবেন? ভোটের দিন কী ভূমিকা নেবেন? সেই সব বিষয়ই চিন্তায় ফেলেছে রাজ্য়ের শাসকদলকে।

আরও পড়ুন- মোদীর মুখে বিজেপির সমালোচনা, গুণ গাইলেন অন্য দুই দলের

খড়্গপুরের এই উপনির্বাচনে 'টিম পিকে' ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তাদের একটা বড় 'টিম' নানা ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসকে 'বুস্টিং' করছে। নির্বাচনী প্রচারের নানা কাজে সহযোগিতা করে চলেছে। এছাড়া তৃণমূল সূত্রের খবর, রাজ্য়ের দাপুটে যুব মন্ত্রীর প্রায় জনা ষাটেক অনুগামী দিন-রাত এক করে দলের হয়ে কাজ করছেন। জয় পেতে প্রভূত কৌশল নিয়েছে তৃণমূল। তা সত্বেও প্রচারের সঙ্গে নির্বাচনী ফলের কতটা সামঞ্জস্য় থাকবে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত।

তৃণমূলের অন্দরে ক্ষোভ-বিক্ষোভের কথা অবশ্য অস্বীকার করলেন খড়্গপুর শহর সভাপতি রবিশঙ্কর পান্ডে। যদিও তিনি মেনে নিয়েছেন মনের মতো প্রার্থী না পেলে অনেকেই বসে থাকেন। রবিশঙ্কবাবু বলেন, "দলের মূল স্রোত থেকে সরে গেলে তার কোনও গুরুত্ব থাকে না। তবে এটা কোনও ফ্য়াক্টর হবে না। যারা কাজ করছে না, দলের বিরুদ্ধে গিয়েছেন এমন প্রমাণ পাওয়া গেলে নিশ্চয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা প্রতি নির্বাচনেই হয়। দলের কেউ প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছে, এমনটা দেখিনি।"

west bengal politics All India Trinamool Congress
Advertisment