২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট শতাংশের হিসাবে বিজেপি ও বামেদের ফারাক ছিল বিস্তর। এমনকী বিজেপি যেখানে ৭৭টি আসন দখল করেছিল সেখানে বামেরা শূন্য। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনেও খালি হাতে থাকতে হয়েছিল বামেদের। পরবর্তীতে উপনির্বাচন, কর্পোরেশন ও পুরনির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে ভোট শতাংশের হিসাবে যুঝতে শুরু করে সিপিএম তথা বামদলগুলি। রাজ্যে এখন কে তৃণমূলের মূল বিরোধী শক্তি তা নিয়েও দাবি-পাল্টা দাবি চলছে।
সংসদীয় রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী দলের একটা মর্যাদা রয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রধান বিরোধী দল মানে শাসকবিরোধী মনোভাবাপন্ন মানুষের অধিকাংশের সমর্থনের দাবিদার সেই দল, এমনটাই মনে করে রাজনৈতিক মহল। বাস্তবে যে সব ক্ষেত্রে একাধিক বিরোধী শক্তি থাকে সেক্ষেত্রে প্রধান বিরোধী দল হয়ে সাধারণের নজর কাড়তে তৎপরতা বেড়েই যায়। বঙ্গ রাজনীতিতে গেরুয়া শিবিরের উত্থানের পর লাল ক্রমশ ফিকে হতে শুরু করে। তার মধ্য়েও ছাত্র-যুব শক্তির উপর ভর করে এগোনোর চেষ্টা চালাতে শুরু করে বামেরা। যার সূত্রপাত বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন থেকে। পুর নির্বাচনের পর রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তাঁরা মনে করছেন বিজেপিকে টপকে যেতে চলেছে বামফ্রন্ট। প্রকৃত কে বিরোধী শক্তি তা নিয়ে ধন্দে রয়েছে রাজনৈতিক মহল।
সদ্যসমাপ্ত পুর নির্বাচনে বামফ্রন্ট ১৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। বিজেপি পেয়েছে ১৩ শতাংশ ভোট। যদিও রাজ্যে বিজেপি একটি পুরসভাও দখল করতে পারেনি। সেখানে ১৫টি আসন সংখ্যা বিশিষ্ট তাহেরপুর পুরসভা বামেরা দখলে রাখতে সমর্থ হয়েছে। এদিকে ডান-বাম সব পক্ষই এবারের পুরনির্বাচনে ব্যাপক ছাপ্পা ও রিগিংয়ের অভিযোগ এনেছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। যদিও বিপুল সংখ্যক বুথে দুএকটি ক্ষেত্রে ঝামেলা হয়েছে বলে দাবি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। জনসমর্থন হারিয়ে বিরোধীরা এমন অভিযোগ করছে বলে তৃণমূলের দাবি। যদিও প্রথম স্থান অর্জনকারীর সঙ্গে দ্বিতীয়ের দূরত্ব বহু যোজন। এই দ্বিতীয় স্থান নিয়েও এখন টানাটানি চলছে।
২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই বামেদের হাত থেকে রাজ্যে বিরোধীর ব্যাটন চলে যেতে থাকে বিজেপির হাতে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে তার প্রমান মেলে। যদিও ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র ৩টে আসনে জয় পেয়েছিল বিজেপি। বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ১০ শতাংশ ভোট। বামেরা পেয়েছিল ২৬টি আসন। শতাংশের হিসাবে বামেদের জুটেছিল ২০ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস পেয়েছিল ৪২টি আসন। তবু বিরোধী দল হিসাবে ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছিল বামফ্রন্ট। এবার ঠিক তার উল্টো ঘটনা ঘটেছে। ১০ মাস আগে বিধানসভা নির্বাচনে ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়ে ৭৭টি আসন দখল করে বিজেপি। সিপিএমের ভোট শতাংশ নেমে যায় মাত্র ৫ শতাংশে। একটিও আসন জোটেনি বামেদের। কিন্তু এবার পুরভোটে ছাপ্পা-রিগিংয়ের অভিযোগ উঠলেও বিজেপির থেকে বামেরা শতাংশের হিসাবে বেশি ভোট পেয়েছে। যদিও বিজেপির দাবি, ছাপ্পা মারবার সময় তৃণমূল সিপিএমকে ভোট দিয়েছে। এই ধরনের কোনও অভিযোগ মানতেই নারাজ তৃণমূল কংগ্রেস। ভোট শতাংশের হিসাবে বিজেপির ভোট কমেছে, বামেদের ভোট বেড়েছে।
তৃণমূলের প্রধান বিরোধী কে তা নিয়ে গেরুয়া ও লাল শিবিরের লড়াই যে শুরু হয়ে গিয়েছে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এখন দুই যুযুধান পক্ষ তৃণমূল বিরোধী ভোট নিজেদের পকেটে পুরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, সেই ভোট প্রাপ্তি সম্ভব তখনই যখন সেই দল প্রধান তৃণমূল বিরোধী মুখ হয়ে উঠতে পারবে। তারই লড়াই চলছে বঙ্গ রাজনীতিতে।