ভোট মিটলেও ভাটপাড়ায় জারি 'মদনার্জুনে'র যুদ্ধ। যুদ্ধই বটে। গত ১৯ তারিখ অর্থাৎ উপনির্বাচনের দিন থেকে মুড়ি-মুড়কির মতো বোমা পড়ছে জগদ্দল, কাঁকিনাড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। এর জেরেই যেন কিছুটা ক্লান্ত ভাটপাড়ার 'জ্যেষ্ঠ' তথা তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্র। নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তাঁর জানা নেই, কিন্তু ভাটপাড়ার মানুষকে মদন যে 'জবান' দিয়েছেন, প্রয়োজনে তা 'জান' দিয়ে রক্ষা করবেন তিনি। ফলপ্রকাশের আগের দিন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে এমনটাই জানালেন মদন মিত্র।
সাম্প্রতিককালে বঙ্গ ফেসবুকের জনপ্রিয়তম ক্রাউড-পুলারের চেহারা অবশ্য গত দু-দিনে অনেকখানি বদলেছে। একে তো রোদে পুড়ে ভোটের প্রচার করতে হয়েছে, তার উপর গত কয়েকদিনের বোমাবাজির জেরে দৃশ্যতই বিধ্বস্ত রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রী। নিন্দুকদের মতে, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী তথা অধুনা প্রতিপক্ষ বিজেপি-র অর্জুন সিং-এর অনুগামীরা গত তিনদিন ভাটপাড়া, কাঁকিনাড়া, জগদ্দলে যে দাপট দেখিয়েছেন, তার জেরেই খানিকটা যেন মিইয়ে গিয়েছেন মদন।
আরও পড়ুন- "তাণ্ডব চালিয়ে মদনকে ভোট করতে দেয়নি, তবুও হারবে অর্জুনের ছেলে"
তবে নিন্দুকরা যে কথাই বলুক, মদন বলছেন, "অর্জুনের তো কোনও মানবিক চেতনাই নেই। ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছে! সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বোমাবাজি করছে, গুলি চালাচ্ছে, লোকের বাড়িতে আগুন দিচ্ছে। আমি ওর দাদার মতো, এতদিন একসঙ্গে রাজনীতি করেছি, ওকে বিপদ থেকে বাঁচিয়েছি বহুবার। এখন আমার দিকে তাক করে বোমা ছুড়ছে! এমন করে কেউ!" অতীতের কথা বলতে গিয়ে 'জ্যেষ্ঠ' মদন রীতিমতো স্মৃতিমেদুর। তবে 'ভ্রাতৃত্বে'র অতীত ধাক্কা খেয়া খান খান হয়ে যাচ্ছে বোমা বন্দুকের বাস্তবে। আর তারপরই প্রাক্তন পরিবহনমন্ত্রী বলছেন, "অর্জুন রাস্তা আটকে দিচ্ছে, ট্রেন অবরোধ করে যাত্রীদের পেটাচ্ছে। সাধারণ মানুষ বাড়ি থেকে বেরতে পারছে না। এমন অসভ্যের সঙ্গে যুদ্ধ করা অত্যন্ত ক্লান্তিকর। তবে ও আমায় যতই ভাটপাড়া-ছাড়া করতে চাক, আমি এলাকা ছাড়ব না। যদি হেরেও যাই, ভাটপাড়ার মানুষের মধ্যেই থাকব। আজ না হোক কাল, এই গুণ্ডারাজের অবসান হবেই"।
আরও পড়ুন- অর্জুন সিংকে ৫ দিনের রক্ষাকবচ সুপ্রিম কোর্টের
চাপে রয়েছেন ঠিকই, কিন্তু মচকাতে রাজি নন ভবানীপুরের শাঁখারিপাড়ার বাসিন্দা। অর্জুনের উদ্দেশে তাঁর চেতাবনি, "অর্জুন, তুই আমার ভাইয়ের মতো। অনেক আদর করেছি এককালে। তোর ভুলগুলো শুধরে দিতে চেষ্টা করেছি। বদলাতে পারিনি তোকে। তুই যত পারিস বোমা মার, বস্তা বস্তা গুলি বন্দুকে ভরে চালা। পাত্থরবাজি কর। আরও যা কিছু অসভ্যতা শিখেছিস, গুণ্ডামি শিখেছিস, সব কর। তাও আমাকে ভয় পাওয়াতে পারবি না। আমার কাছে ঐশ্বরিক শক্তি আছে, জগন্নাথদেবের নিশান গলায় ঝুলিয়ে চলি। তোর বোমা, গুলি আমাকে ছুঁতে পারবে না"।
মদনের দাবি, অর্জুন কেবল তাঁর উপরেই গুণ্ডামি করছেন না, তিনি বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গেও প্রতারণা করেছেন। তাঁর কথায়, "ওর স্বভাবই এমন। প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ভুলভাল বুঝিয়ে নিজের আর ছেলের জন্য টিকিট জোগাড় করেছে। মুকুল রায় ওর জন্য এত করল, তাকেও বেইজ্জত করার ছক কষছে। আমার নিজের উপরও রাগ হয়। এতদিন তো একদলে ছিলাম, দাদা-ভাই সম্পর্ক ছিল। শুধরাতে পারিনি। অবশ্য যার স্বভাবটাই এমন, তাকে বদলানো সম্ভব নয়। কুকুর কি আর মানুষ হয়! তাও ওর অধঃপতনে আমি হতাশ। ছেলেটাকেও গুণ্ডামি শেখাচ্ছে"।
অর্জুন কিন্তু হাসছেন। মদনের কথার প্রেক্ষিতে তাঁর উত্তর এক লাইনের। "আমিও জিতব, ছেলেও জিতবে। মদনবাবুকে মিষ্টি খাইয়ে আসব"।