সুপ্রিমো-সেনাপতির পৃথক ভাবনা: সুকৌশল নাকি ইগো? তৃণমূলে শোরগোল

দলের একটা বড় অংশ বিভ্রান্তিতে পড়েছেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

দলের একটা বড় অংশ বিভ্রান্তিতে পড়েছেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

author-image
Joyprakash Das
New Update
TMC gets a leg-up in Assam with top political leader in camp but long climb ahead

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যা।

করোনা মোকাবিলায় তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা। পরবর্তীতে একদিনে ৫০ হাজার করোনা টেস্ট। করোনা আবহে এই উদ্যোগকে ডায়মন্ডহারবারবাসী স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে এমন উদ্যোগ রাজ্যের অন্যত্র নয় কেন? পাশাপাশি যুবনেতাদের কেউ আবার অভিষেক প্রশাসনিক সিস্টেমের অংশ নয় বলে আপশোষ করেছেন। রাজ্য সরকারকে এই মডেল অনুসরণ করারও দাবি জানিয়েছেন ওই যুব তৃণমূল নেতা। করোনায় পুরনির্বাচন, অভিষেকের ব্যক্তিগত মন্তব্য, যুবনেতার দাবি, তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে বিভ্রান্তি, রাজ্য সরকারের ভূমিকা সব মিলিয়ে রাজ্য-রাজনীতি গুলিয়ে দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।

Advertisment

প্রথমত সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ডায়মন্ডহারবার এলাকায় আগামি ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজনৈতিক, ধর্মীয় মিছিল-মিটিং বন্ধ ঘোষণা করেছেন। প্রত্যেককে ডাবল মাস্ক পড়ার কথা বলেছেন। এই পরিস্থিতিতে ভোট হওয়া উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেছেন অভিষেক। এরপর তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় অভিষেকের মতামতকে দলীয় মত বলেই জানিয়েছেন। যদিও অভিষেক তাঁর মতামতকে ব্যক্তিগত মতামত বলে দাবি করেছিলেন। এরই মধ্যে অভিষেকের ডায়মন্ডহারবার মডেলকে অনুসরণ করারও দাবি উঠে গেল। এদিকে বুধবার পুরভোট সংক্রান্ত মামলায় আদালতে রাজ্য স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি। গঙ্গাসাগর মেলা হাইকোর্টের নির্দেশে আয়োজন করছে রাজ্য সরকার। কিন্তু তারপরে কেন্দুলির জয়দেবের মেলা হওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। স্বভাবতই এই প্রশ্ন উঠছে তাহলে কী দলের সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্য 'ব্যক্তিগত'ই থেকে গেল দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ঘোষণা পরও।

ভোট বন্ধ করা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেননি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারের তরফে চার পুরনিগম বাদে পরবর্তী ঘোষিত পুরনির্বাচন বন্ধ নিয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়নি। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে মতানৈক্য, নাকি এটাও নতুন রণকৌশল, দুটি বিষয়ই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। তবে দলের একটা বড় অংশ বিভ্রান্তিতে পড়েছেন তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। মুখে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ সাধারণ সম্পাদকের ব্যক্তিগত মতকে দলীয় মতামত বললেও কার্যত তা বাস্তবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না বলেই অভিমত অভিজ্ঞ মহলের। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, কলকাতা পুরসভা নির্বাচনের প্রার্থীপদ থেকে পুরনিগমের পদাধীকারী মনোনয়ন নিয়ে দলের অভ্যন্তরে মতান্তর ছিল। তাঁদের মতে, প্রথমত প্রার্থী তালিকা তৈরি করতে ঘন্টার ঘন্টার বৈঠক করতে হয়েছে। আবার কলকাতার মেয়র, ডেপুটি মেয়র, চেয়ারপার্সন সহ মেয়র পারিষদের ঘোষণার অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন না দলের সাধারণ সম্পাদক। যা নিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছিল।

ডায়মন্ডহারবার মডেলকে ফলো করুক রাজ্য সরকার, একথা সোশাল মিডিয়ায় দাবি করেছে তৃণমূলের মুখপাত্র ও যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু ভট্টাচার্য। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এই দাবির ফলে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের কাজকর্ম নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন দলের এই যুব নেতা। এমনকী প্রশাসনিক সিস্টেমে কেন অভিষেক নয়, কার্যত সেই প্রশ্নও তুলেছেন তৃণমূল মুখপাত্র। এই দাবির পর ফের একদফা বিতর্ক দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ঘুরিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন যুব নেতা। একদিকে ডায়মন্ডহারবারের করোনা পরীক্ষার পজিটিভিটি রেট ২.১৬। রাজ্যে গত দুদিনের গড় ৩০ শতাংশের ওপর। রাজ্যের অন্য এলাকা থেকে করোনা মোকাবিলায় যে ডায়মন্ডহারবার কয়েক গুন এগিয়ে, তা-ই বোঝানো হয়েছে বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। বিধানসভায় সিপিএম-কংগ্রেস শূন্য, বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ক্রমশ কমছে। কলকাতা পুরনির্বাচনে একতরফা জয় পেয়েছে তৃণমূল। সেই পরিস্থিতিতে ডায়মন্ডহারবার ও রাজ্য, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেস, বিষয়টি রাজনীতিবিদদের কাছেও গুলিয়ে যাচ্ছে।

tmc Mamata Banerjee abhishek banerjee