চিটফান্ড তদন্তে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে পথে নেমেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের নেতৃত্বস্থানীয়রা সিজিও কমপ্লেক্সের সামনে বিক্ষোভ-অবস্থানেও বসেছে। এমনকী আইপিএস রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই হানা দেওয়ায় ধর্মতলায় ধরনায় বসেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের বক্তব্যে রাজ্যনৈতিক মহলের ধারনা, দল পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে। একইসঙ্গে এই মুহূর্তে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টাও চলছে। তবে এদিন ঝাড়গ্রামের সভায় তৃণমূলনেত্রী কেন্দ্রীয় এজেন্সি নিয়ে ফের তোপ দেগেছেন।
এসএসসি নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় এর আগে কুণাল ঘোষের বক্তব্যের পাল্টা বলেছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কোনও দায় থাকলে তা যে একা সতীর্থ মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নয়, সেকথা জোর দিয়ে বলেছিলেন আরেক মন্ত্রী ফিরহাদ। কিছু হলে যে দায় মন্ত্রীসভার সকলের সেকথাই বলেছিলেন ফিরহাদ হাকিম। ফের কুণাল মন্ত্রীত্ব নিয়েই পাল্টা তোপ দেগেছিলেন ফিরহাদকে। এবার কিন্তু কুণাল ঘোষ ছাড়া দলের আর কেউ মুখ খুলছেন না। অভিযুক্তদের সমর্থনে কারও মুখে রা নেই।
এদিন পরশে অধিকারীর বিষয়ে কুণাল বলেছেন, 'আইনি লড়াই লড়ছেন লড়বেন। শুধু একটা কথাই আমরা বলতে পারি, ঠিক বিষয়টা নিশ্চিতভাবে ঠিক। আর যদি ভুল কিছু থাকে সেটা নিশ্চিতভাবে ভুল। সেটা ডিফেন্ড করতে তৃণমূল কংগ্রেস যাবে না।' রাজনৈতিক মহলের মতে, দলের সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্রের এই বক্তব্য স্পষ্ট করেছে কারও দায় দলে নেবে না। অর্থাৎ দল আপাতত এসএসসি মামলায় দূরত্ব বজায় রাখতেই সচেষ্ট।
বুধবার নিজাম প্যালেসে সিবিআই দফতরে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এসএসসি নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার সকালে নিজাম প্যালেসে গরুপাচার কাণ্ডে সিবিআইয়ের তদন্তের সামনা-সামনি হয়েছেন বীরভূম তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডল। রাজ্যের শিক্ষাদফতরের প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীকে সিবিআই দফতরে হাজির হওয়ার জন্য কড়া নির্দেশ দিয়েছে। এই অবস্থায় তৃণমূল কংগ্রেস রাজনৈতিক ভাবে কী অবস্থান নেয় সেই দিকে নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।
কয়েকদিন আগেই তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যকমিটির বৈঠকে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি থেকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে সুব্রত বক্সীকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। তবে এখনও তিনি দলের মহাসচিব পদে রয়েছেন। এরইমধ্যে অনুব্রতকে ছাড়াই বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস দলের কর্মসূচি বজায় রেখেছে। এদিকে এদিনই ঝাড়গ্রামে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে বিজেপি তুঘলকি কান্ড ঘটাচ্ছে বাংলায়। গুরুত্বপূর্ণ সংস্থায় বিজেপির লোক, সিপিএমের সময় চিরকূট দিয়ে চাকরির কথাও বলেছেন তিনি। তবেই এরই সঙ্গে তিনি বলেছেন, কাজ করতে গেলে কেউ যদি ভুল করে তাহলে সংশোধন করার সুযোগ দেওয়া উচিত। যেটা আইনে আইন পরিণত করার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। কিন্তু গায়ের জোরে জুলুম তুঘলকি কান্ড করে তৃণমূলকে স্তব্ধ করার চেষ্টা করছেন। তৃণমূল জব্দ করে স্তব্ধ কখনও হয় না, তৃণমূল এতটাই শক্তিশালী।'
রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূলের মুখপাত্র এসএসসি মামলা নিয়ে এর আগে এবং আজ যে মন্তব্যই করুক না দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কিন্তু বিষয়টাকে অন্যভাবে দেখছেন। তিনি ব্য়ক্তিগত স্তরে বললেও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্য়ে এই মন্তব্য় নিয়ে বিরোধ রয়েছে। নাম না করে বললেও স্বয়ং তৃণমূলনেত্রী এদিনের বক্তব্য়ে স্পষ্ট করেছেন দল কিন্তু পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়দের পাশ থেকে সরে যায়নি। তাহলে কী এসএসসি মামলা নিয়ে দলীয় নেতৃত্ব ধন্দ তৈরি করার চেষ্টা করছেন? এই প্রশ্নই উঠছে রাজনৈতিক মহলে।