অসমে জাতীয় নাগরিকত্ব থেকে বাদ পড়া মানুষেরা যাতে এরাজ্যে প্রবেশ করতে না পারে সেদিকে কড়া নজর রাখতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার চ্যাংড়াবান্ধার পর বুধবার আলিপুরদুয়ারেও এ ব্যাপারে চোখ কান খোলা রাখতে বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। বুধবার আলিপুরদুয়ার জেলা নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক চলাকালীন জেলার পুলিশ সুপার সুনীল যাদবকে তিনি এই নির্দেশ দেন। পরিস্থিতির উপর নজর রেখে রাজ্য পুলিশের ডিজি কে বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট দেওয়ারও নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি এদিন বলেন, ‘‘ভিনদেশ ও ভিন রাজ্য থেকে মানুষ এ রাজ্যে প্রবেশ করছে। আপনারা নজর দিন। পারব না ,পারছি না শুনতে চাই না।’’
৩০ জুলাই অসমে জাতীয় নাগরিকত্ব (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস ) নিয়ে প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত তালিকা। প্রশাসন সূত্রে খবর,এই তালিকা প্রকাশ হলে অসমের কয়েক লক্ষ মানুষ ভারতীয় নাগরিকত্ব হারাবেন। সেইসময়ে তাঁদের অসম থেকে বিতাড়িত করলে তাঁরা প্রতিবেশী রাজ্য গুলিতে ঢুকে পড়বেন বলেই মনে করা হচ্ছে। অসম সীমান্ত আলিপুরদুয়ারেও এ ধরনের মানুষদের ঢোকার ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী জেলার এসপি কে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনকেও সতর্ক থাকার বার্তা দেন।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অসমে একটা সমস্যা চলছে। সেখান থেকে বিতাড়িতরা কোনো ভাবেই যেন এরাজ্যে না ঢুকতে পারে তা দেখতে হবে।’’
আরও পড়ুন, মুখ্যমন্ত্রীর সফরের মাঝে ড্রোন, শিলিগুড়িতে চাঞ্চল্য
এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী নির্ভর করতে বলেছেন সিভিক ভলান্টিয়াদের উপর। তথ্য সংগ্রহ করার কাজে তাদের লাগানোর নির্দেশ দেন তিনি। বিডিওদের প্রতি মমতার নির্দেশ, মানুষের সঙ্গে কথা বলুন। তা থেকে অনেক গোপন তথ্য পাওয়া যাবে। পুলিশের কাজে বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, বাইরের লোক এসে জেলায় টাকা ছড়াচ্ছে, অথচ পুলিশের কাছে কোনও খবর থাকছে না। শিলিগুড়িতে চিনা নাগরিকের গ্রেফতারির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে পুলিশের উদ্দেশে মমতার বার্তা, ‘‘আপনারা সজাগ হোন, জেলাকে সুরক্ষিত রাখুন।’’
এদিকে এ বছরের গোড়ায় এন আর সি-র প্রথম খসড়া প্রকাশের পরে এ নিয়ে নিজের উদ্বেগ জানিয়েছিলেন মমতা। তবে সে উদ্বেগ ছিল সংখ্যালঘু নাগরিকদের নিয়ে। এমনকি বীরভূমের এক জনসভায় তিনি বাঙালিদের গায়ে হাত পড়লে ছেড়ে কথা বলা হবে না বলেও জানান। এই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধে অসমে মামলাও করা হয়েছিল।
মমতার সাম্প্রতিকতম অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, মুখ্য়মন্ত্রী কখন কী বলেন তার ব্য়াখ্য়া দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি এখন বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছেন। অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন। উনি মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গা নিয়ে আসতে পারেন। অসমে যখন বোরো এলাকায় গন্ডগোল হয়েছিল তখন তিনি মুসলমানদের ডেকে এনে জায়গা দিয়েছিলেন। আজ হঠৎ কেন এমন মনে হচ্ছে।’’ দিলীপ ঘোষের দাবি, “রাজ্য়ে প্রধানমন্ত্রী আসছেন, অমিত শাহ আসছেন। মুখ্য়মন্ত্রীর চাপ বেড়ে গিয়েছে। তাই উনি উনি ঠেলায় পড়ে অবস্থান পাল্টাচ্ছেন।’’
অসম এনসিআর সংহতি অভিযান নামে একটি সংগঠন অসম থেকে বাঙালি বিতাড়ন নিয়ে এরাজ্য়ে নানা ধরনের কর্মসূচির আয়োজন করছে। ওই সংগঠন মনে করছে মুখ্য়মন্ত্রীর নির্দেশ বিজেপির সঙ্গে বোঝাপড়ারই ফল। সংগঠনের নেতা রতন বসু মজুমদার বলেন, “আমরা ওই ঘোষণার প্রতিবাদ করছি। আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন উনি। এসব কোনও একটা বোঝাপড়ার ফসল বলে মনে হচ্ছে। তৃণমূল ও বিজেপি ছাড়া বাঙালি সাংসদদের সঙ্গে কথা বলব। প্রয়োজনে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সঙ্গেও কথা বলব। এছাড়া অন্য় রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও আমরা কথা বলা শুরু করেছি।’’
তিনি জানান, অসম ইস্য়ুতে আগামী ১৪ জুলাই রানুচ্ছায়া মঞ্চে সভা করার কথা রয়েছে। এছাড়া একটা কনভেনশন ও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ সভা করারও পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।