"সকলে চিৎকার করছে 'দিদিকে মেরেছে...দিদিকে মেরেছে...' এ কথা কানে আসতেই ছুটতে শুরু করলাম। ছুটতে ছুটতে স্পটে পৌঁছে যাই। গিয়ে দেখি ওঁকে একটা ট্যাক্সিতে তুলছে। তখন সকাল সাড়ে দশটা। সবে মিছিল শুরু করার কথা ছিল তখন। এর মধ্যেই ঘটে গেল ভয়ঙ্কর আক্রমণ।" লালু আলম নির্দোষ ঘোষিত হওয়ার পর একনাগাড়ে কথাগুলো বলে গেলেন সেদিন মমতার সাথী তথা রাজ্যের বর্তমান বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। ১৯৯০ সালের ১৬ অগাস্ট দক্ষিণ কলকাতার হাজরার ঘটনা এখনও শোভনবাবুর স্মৃতিতে তরতাজা।
তৎকালীন রাজ্য যুব কংগ্রেসনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএম-এর অপশাসনের বিরুদ্ধে মিছিলের ডাক দিয়েছিলেন। মিছিল শুরু হওয়ার মুখেই ডান্ডা নিয়ে মমতার উপর আক্রমণ করেন সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই-এর নেতা লালু আলম। রক্তাক্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সেদিন ট্যাক্সি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এসএসকেএম হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার আলিপুর আদালতের রায়ে এই মামলা থেকে রেহাই মিলেছে লালু আলমের। তবে সেদিনের ঘটনা আজও যেন চোখের সামনে ভাসছে প্রবীণ তৃণমূল নেতা শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের।
আরও পড়ুন- ‘আরেকটা ভারত ভাগ করতে দেব না, বাংলা আসাম নয়’, হুঁশিয়ারি মমতার
শোভনবাবু বলেন, "মিছিলে যোগ দেব বলে ভবানীপুর থানার সামনে থেকে হাজরা মোড়ের দিকে হাঁটছিলাম। হঠাৎ চিৎকার শুনতে পাই, 'দিদিকে মেরেছে...দিদিকে মেরেছে...'। শুনেই ছুটতে শুরু করলাম হাজরা মোড়ের দিকে। গিয়ে দেখি, মমতার মাথা ফেটে রক্তাক্ত। শাড়ি চাপচাপ রক্তে ভিজে গিয়েছে। রাস্তাও ভিজেছে রক্তে। মমতাকে তখন একটা ট্যাক্সিতে তোলা হচ্ছে, কিন্তু ওঁর জ্ঞান নেই। আমি ততক্ষণে পৌঁছে গিয়েছি। লালু আলম ডান্ডা মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে মমতার। আমরাও দেরি না করে ট্যাক্সি জোগাড় করে ওঁর পিছন পিছন পিজিতে চলে গেলাম। পিজিতে সঙ্গে সঙ্গেই ওঁকে ওটিতে নিয়ে গেল। আমরা তখন অপেক্ষা করছি বাইরে। অস্ত্রোপচারের পর আইসিইউতে রাখে মমতাকে। সারা মাথায় তখন ব্যান্ডেজ করা। হাতেও ব্যান্ডেজ। সেই দৃশ্য এখনও মনে আছে। অনিলদা, দিব্যেন্দু বিশ্বাস, দিলীপ মজুমদার ঘটনার সময় ছিলেন। তাঁরা মারা গিয়েছেন।"
আরও পড়ুন- জীবদ্দশাতেই মমতাকে বাংলায় এনআরসি দেখতে হবে, হুঁশিয়ারি দিলীপের
সেদিন ঠিক কী পরিস্থিতি ছিল?
সেদিনের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে শোভনবাবু বলেন, "আমরা ভাবতেও পারিনি সিপিএম-এর লোকেরা এতটা আগেই আমাদের উপর হামলা করবে। ওদের আক্রমণে আমাদের ছেলেরা প্রায় ছত্রভঙ্গ হয়ে গিয়েছিল সেদিন। এদিক ওদিক ছিটকে গিয়েছে সব। পদযাত্রা করার জন্য প্রচুর লোক হয়েছিল। ঘটনাস্থলে পুলিশও ছিল। সবাই দেখেছে, মমতাকে ডান্ডা গিয়ে আঘাত করেছিল লালু আলম। মমতারও সে কথা মনে আছে।"
কিন্তু আজ তো মমতা মুখ্যমন্ত্রী, কী করে রেহাই পেলেন লালু আলম?
শোভন বলছেন, "ধরা যেতে পারে মমতা লালুকে ক্ষমা করে দিল। তা নাহলে যা কাণ্ড ঘটিয়েছিল, তাতে যাবজ্জীবন জেল হত।"
উল্লেখ্য, এই মামলায় প্রথম দিকে আদালতে সাক্ষী দিতে গেলেও, পরবর্তীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর আদালতে হাজির হতে পারেনি। সে সময় ভিডিও কনফারন্সের ব্যবস্থাও করা যায়নি। সম্ভবত সে জন্যই মুক্তি মেলে লালু আলমের, এমনটাই মনে করছে আইনজ্ঞ মহলের একাংশ।