মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মিসইউজ’ করছেন তাঁর দলেরই বিধায়ক-সাংসদরা। মমতার দলে অনেক সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি আছেন। এমন চাঞ্চল্যকর অভিযোগই করলেন ফুরফুরা শরিফের প্রধান ত্বহা সিদ্দিকি। সাধনা নিউজ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পীরজাদা বলেন, ‘‘তৃণমূলের মধ্যে অনেকে বিধায়ক-সাংসদ আছেন, তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মিসইউজ করছেন, এর জ্বলন্ত প্রমাণ মুকুল রায়, সব্যসাচী দত্ত। সব্যসাচী যদিও ভাল মানুষ। এই দলের মধ্যে বেনোজল ঢুকেছে। দিনের বেলায় তৃণমূল, রাতের বেলায় বিজেপি’’।
আরও পড়ুন: ‘আমি যতদিন জীবিত আছি, বাংলায় সিএএ-ডিটেনশন ক্যাম্প করতে দেব না’
ঠিক কী বলেছেন ত্বহা সিদ্দিকি?
বিজেপির সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি প্রসঙ্গে ফুরফুরা শরিফের প্রধান বলেন, ‘‘বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে অ্যাখ্যা দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। সব পাখি মাছ খায়, আর দোষ হয় মাছরাঙার! তৃণমূলের মধ্যে অনেকে বিধায়ক-সাংসদ আছেন, তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মিসইউজ করছেন, এর জ্বলন্ত প্রমাণ মুকুল রায়, সব্যসাচী দত্ত। সব্যসাচী যদিও ভাল মানুষ। এই দলের মধ্যে বেনোজল ঢুকেছে। দিনের বেলায় তৃণমূল, রাতের বেলায় বিজেপি। যেখানে আগুন জ্বলছে, বলছে বিজেপি করছে। বহু এলাকায় বিজেপির দ্বারা যত না মানুষ জর্জরিত হচ্ছে, তার থেকে তৃণমূলের বিধায়ক-সাংসদদের দ্বারা বেশি জর্জরিত হচ্ছেন। মুসলমানরা কোনওদিন বিজেপি করবেন না। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় শুধু মুসলমানরা কষ্ট পাননি। যদি বলা হয় হিন্দুরা কষ্ট পাননি, তাহলে ভুল বলা হবে। যাঁরা ধর্মকে ভালবাসেন, তাঁরাই কষ্ট পেয়েছেন। যে দল বাবরি মসজিদকে শহিদ করেছে, সেই দলকে সমর্থন করতে পারেন না মুসলিমরা’’।
আরও পড়ুন: ‘মমতাকে মোদী খামোস খেতে বলেছে’, বিস্ফোরক ত্বহা সিদ্দিকি
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘‘আজ যেসব মুসলিমরা বিজেপির ঝান্ডা ধরছেন, তাঁরা মনেপ্রাণে ধরছেন না। তৃণমূলের সাংসদ-বিধায়কদের অত্যাচার, জুলুমে বাধ্য হয়ে বিজেপির হাত ধরছে। মমতাকে মিসইউজ করা হচ্ছে। মমতা দল গড়েছেন, ওঁরা কী করছে! কোনও মুসলিম বিধায়ক-সাংসদ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাবেন না। কিন্তু অমুসলিম তৃণমূল সাংসদ-বিধায়করা বিজেপিতে যেতে পারেন, কারণ ওঁদের জন্য আলাদা একটা দরজা খোলা আছে। ফিরহাদ হাকিম কোনও দিন বিজেপি করবেন না। জাভেদ খান কোনওদিন বিজেপি করবেন না। হাজি নুরুলও না। হয় বসে যাবেন, না হয় সিপিএম বা কংগ্রেস করবেন। মমতার দলে সাম্প্রদায়িক মনোভাববাপন্ন ব্যক্তি আছেন। আমাদের লড়াই মমতা, সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি কারও সঙ্গেই নয়। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই। সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিকে বাংলায় জায়গা দেব না’’।
src="https://www.youtube.com/embed/RCxuWb_vnrw" width="100%" height="415" frameborder="0" allowfullscreen="allowfullscreen">
আরও পড়ুন: ৩৭০ সম্ভব হলে এনআরসি কেন নয়, আমি চাই হোক: দিলীপ ঘোষ
‘বাংলায় ৪ কোটি মুসলিমের বাস’
জনগণনার পরিসংখ্যানকে খারিজ করে দিয়ে ত্বহা সিদ্দিকি বলেন, ‘‘এই পশ্চিমবাংসায় কমবেশি ৪ কোটি মুসলিম বাস করেন। আর বলবে, ৩০ শতাংশ মুসলিম আছে। সেনসাসে ভুল তথ্য দেওয়া হয়। আমাদের দমিয়ে রাখা হচ্ছে। আড়াই থেকে ৩ কোটি মুসলিম ফুরফুরা শরিফেরই ভক্ত। আমরা নিজের জন্য চাই না (সরকারি সাহায্য), মানুষের জন্য চাই। গঙ্গাসাগর মেলার জন্য অনুদান দিতে পারেন, তাতে আপত্তি নেই। ফুরফুরা শরিফের জন্য দেবেন না কেন? জানেন তো, আমার ইউল করা আছে, আমার মৃত্যুর পর অনাথদের নামে করে দেওয়া আছে। আমার কবরটা শুধু আমি নিজেই খুঁড়ে রেখেছি’’।
বিজেপির হয়ে কথা বলছেন ত্বহা?
এ প্রসঙ্গে ফুরফুরা শরিফের প্রধান বলেন, ‘‘তৃণমূলের থেকে অনেক টাকা কামিয়েছেন ত্বহা সিদ্দিকি, সিপিএম এ কথা বলত। আমি ওদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলাম। কিন্তু কেউ বলতে পারবেন না যে আমি বলেছি, সিপিএমকে ভোট দেবেন না। আজ এই সরকারের (তৃণমূল সরকার) অনেক নেতা-মন্ত্রীর দ্বারা মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। ওঁদের মধ্যে অনেকে তাই বলছেন আমি নাকি বিজেপির হয়ে কথা বলছি। তবে সবাই বলছে না। তখন সিপিএমের অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলাম। এখন ওঁদের অন্যায় নিয়ে বলছি বলে বিজেপির হয়ে কথা বলছি’’।