মুক্তাঞ্চল, রান্না ঘরে যা আছে তাই নিয়েই মা-বোনেরা তাড়া করুন, আমি ভয় পাই না, একেবারে শেষ দেখে ছাড়ব। বাম শাসনে এমন কথাই শোনা যেত তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। রাজ্যে ক্ষমতা পরিবর্তনের ৮ বছর বাদে বিজেপিকে রুখতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় সেই একই সুর। তাঁর বক্তব্যে এল সিঙ্গুরের প্রসঙ্গও। বাংলার প্রশাসনিক প্রধান হলেও বিরোধী নেত্রীর ভূমিকায় থেকেই বিজেপিকে রুখতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নৈহাটিতে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ও মঞ্চের অবস্থান একেবারেই মমতার পুরনো দিনের আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দেয়। এদিন নৈহাটি পুরসভার সামনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থান বিক্ষোভে নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিন্দুমাত্র প্রোটোকল ছিল না।
দীর্ঘ ৮ বছর বাদে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা যেন একেবারে সেই বিরোধী নেত্রীর মতো। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপিকে চাপে রাখতে বিরোধী নেত্রীর ভূমিকা নেওয়ার কৌশল নিয়েছেন মমতা বন্দ্যপাধ্যায়। দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে পুরনো কায়দায় একাধিক ভেকাল টনিক দিয়ে ঝাঁঝালো বক্তব্য রাখেন মমতা। তাঁর ভূমিকা প্রশাসনিক প্রধান হলে অ্যাডভান্টেজ পাবে বিজেপি। তাই মঞ্চে সারাক্ষণ বিরোধী নেত্রীর ভূমিকায় বক্তব্য রাখলেন তৃণমূল নেত্রী।
আরও পড়ুন: ‘স্বজন হারানো শ্মশানে চিতা তোলা’র হুমকি মমতার
কাঁকিনাড়া ও ভাটপাড়ায় ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরাতে বৃহস্পতিবার নৈহাটি পুরসভার সামনে অবস্থান বিক্ষোভের আয়োজন করে তৃণমূল কংগ্রেস। সব্যসাচী দত্ত বাদে উত্তর ২৪ পরগনার সমস্ত তৃণমূল নেতারা হাজির ছিলেন। প্রথমে দুপুর ১ টায় আসার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। প্রায় সাড়ে পাঁচটা নাগাদ সভাস্থলে আসেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তবে মেদিনীপুরের মতো এদিনও ফের বিজেপির পাতা ফাঁদে পা দেন মমতা। সভামঞ্চে আসার আগে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি শুনে তাঁকে গাড়ি থেকে নামতে হয়। বিজেপি জানে, ‘জয় শ্রী রাম’ বললে মুখ্যমন্ত্রী রিয়্যাক্ট করবেনই। তাই এদিন ভাটপাড়ায় তাঁর যাত্রাপথে বারে বারে ‘জয় শ্রী রাম’ শোনা গিয়েছে ধ্বনি। শুধু তাই না তাঁরা ‘মোদি মোদি’ বলেও চিৎকার করছিলেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, পরিকল্পনামাফিক বিজেপি এদিন এভাবেই মমতাকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। মুখ্যমন্ত্রীর রিয়্যাক্ট করায় তাঁদের পরিকল্পনা সফল হল বলেই মনে করছে পদ্ম শিবির। পরক্ষণেই এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।
নৈহাটি যাওয়ার পথে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয় ঘিরে ওঠে "জয় শ্রী রাম" স্লোগান, ক্ষোভে গাড়ি থেকে নেমে কী বললেন তৃণমূল নেত্রী? #iebangla pic.twitter.com/TopyAcnaqf
— IE Bangla (@ieBangla) May 30, 2019
এদিন যে মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী সভা করেন ইদানিংকালে এই ধরনের মঞ্চে সভা করতে দেখা যায়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকার কথা এদিন তার বিন্দুবিসর্গও ছিল না। রাস্তার ওপরে ছোট্ট মঞ্চে ছিলেন প্রায় ২০-২৫ জন নেতা। সেইসঙ্গে মঞ্চের গা ঘেঁষে ছিলেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। ডি জোনের বালাই নেই। ওই জায়গায় এসব করার উপায়ও ছিল না।
আরও পড়ুন: মমতাকে ‘গালিগালাজ’, পালটা হুঙ্কার তৃণমূল সুপ্রিমোর
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে যে ধরনের রাজনৈতিক আন্দোলন করতেন তিনি সেই ভাবেই এদিন সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়। তিনি যে আগামী দিনে বিরোধী নেত্রীর মতোই বিজেপিকে টক্কর দেবেন তা এদিন তাঁর বক্তব্যে অনেকটা পরিষ্কার করেছেন। সিঙ্গুরের অবস্থান, ধর্মতলার অনশন এসবই মূলত বিষয় ছিল তাঁর বক্তব্যে। তাঁর আন্দোলনের জঙ্গিপনা ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়েছিল। ‘মারবো এখানে বিচার হবে অন্যখানে, বাকিটা আমি বলব না আপনারা বুঝে নিন’ এর মতো মন্তব্য যেমন শোনা গিয়েছে, তেমনই ২০১১ সালের নির্বাচনের পর রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল গীতি করাটা আমার ভুল হয়েছিল বলে স্বীকার করেন মমতা। এ বিষয়ে তিনি ক্ষমাও চেয়ে নেন। বদল এর থেকে বদলার উপরেই নিজের ভাষণে জোর দেন মমতা। একের পর এক আক্রমণাত্মক শব্দ উচ্চারিত হয় তাঁর বক্তব্যে। আরএসএস-এর কায়দায় ‘জয় হিন্দ বাহিনী’ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ৪০০ ব্লকে গড়ে তোলা হবে এই সংগঠন। সাদা পাজামা ও রঙিন পাঞ্জাবী পরবেন এই ‘জয় হিন্দ বাহিনী’র সদস্যরা। পাশাপাশি গড়ে তোলা হবে মহিলাদের জন্য ‘বঙ্গজননী বাহিনী’। অর্থাৎ আরসএস যে কায়দায় নানা বাহিনী তৈরি করেছে এখন সেই কায়দায় নিজেও সংগঠন করতে চাইছেন তৃণমূলনেত্রী। বিজেপির ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনির পাল্টা মমতা এ দিন জয়হিন্দ স্লোগান দেওয়ার নির্দেশ দেন।
মমতার হুঁশিয়ারি, কাঁচরাপাড়ার কাঁচরা হটাতে ১৪জুন তিনি বীজপুর আসবেন। তৃণমূল সুপ্রিমো যে ফের আগের মতো আন্দোলনে ঝাঁপাতে চলেছেন সেই বার্তাই দিলেন নৈহাটিতে।