উপনির্বাচনে নির্বাচনে জয়ী চার বিধায়কের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের পর এদিন বিধানসভায় বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাষণের শুরুতেই বিজেপিকে নিশানা করেন তিনি। পাশাপাশি শপথ অনুষ্ঠানে হাজির না থাকার জন্য নাম না করে কটাক্ষ ছুঁড়ে দেন এ রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের বিধায়কদের দিকেও। বলেন, 'গণদেবতাই বাংলার অহঙ্কার। মানুষের রায় অহঙ্কার নয়, আশার্বাদ। নতুন চারজন আজ শপথ নিলেন বিধায়ক পদে। সকলের উচিত ছিল, তাঁদের সামনে এসে অভিনন্দন জানানো। কিন্তু কাদেরই বা বলব? অনেকেই তো নেই। বিরোধীরা বিধানসভাকে বিধানসভা বলে মনেই করেন না। যখন ইচ্ছা হয় তখন আসেন, যখন ইচ্ছা হয় না তখন আসেন না। এতে আমার মর্মবেদনা হয়, তবে খারাপ লাগে না।'
ভাষণের একেবারে শেষে মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, 'বিরোধীদের বলব শুভ বিজয়া, শুভ দীপাবলি, শুভ ছট পুজো এবং শুভ অহঙ্কার।'
পাল্টা, মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তৃণমূল সরকারকে 'স্বারাচারী' বলে দাবি তাঁর। রাজ্য বিজেপি সবাপতির কথায়, 'নাস্তিক বাম সরকারও যা করেনি তাই করেছে মমতা সরকার। উৎসবের মরসুমে বিধানসভা অধিবেশন বসিয়েছেন। আমরা মানুষের সহ্গে রয়েছি। তাই অধিবেশনে যাবো না। উনি আসলে কোনও রীতি-নীতির তোয়াক্কা করেন না। একটা স্বৈরাচারী মানসিকতা নিয়ে সরকার চালাচ্ছেন।'
আরও পড়ুন- বাড়ল সংঘাত, তথ্য কমিশনার নিয়োগ বৈঠকে থাকছেন না শুভেন্দু অধিকারী
এ দিন ভাষণের শুরুর দিকে শারদীয়া উৎসব, দীপাবলি নির্বিঘ্নে কেটেছে বলে জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'ছট পুজো এবং জগদ্ধাত্রী পুজোও শান্তিপূর্ণভাবেই কেটে যাবে। এজন্য রাজ্যবাসী, প্রশাসনের ধন্যবাদ প্রাপ্য।'
একই সঙ্গে নবনির্বাচিত চার বিধায়ককে অভিনন্দন জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, 'আপনাদের অভিনন্দন। তবে মনে রাখবেন, মানুষের জন্য কাজ করতেই এখানে এসেছেন।'
এরপর নিজের বক্তব্যে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের খতিয়ান ও সাফল্যের দিক তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, 'আমরা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা পূরণ করতে পেরেছি। আমরা কথা দিলে তা রক্ষা করি। ১৬ নভেম্বর থেকে দুয়ারে রেশন প্রকল্প চালু হবে। স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে ১০ লক্ষা টাকা পর্যন্ত ঋণ মিলবে, রাজ্য সরকার এর গ্যারান্টার। ১ কোটির বেশি মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পেয়েছেন। দুয়ারে সরকার প্রকল্প সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে। এটা বিশ্বের সেরা প্রকল্প হবে।'
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিধানসভায় টিকা বন্টন নিয়ে ফের সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, 'বাংলায় ৮ কোটি টিকাকরণ হয়েছে। প্রয়োজন ১৪ কোটি। উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র বেশি টিকা পেয়েছে। তাই ওদের টিকাকরণের হার বেশি। তাসত্ত্বেও আমাদের টিকাকরণের হার বালোইষ সবাইকে ধন্যবাদ।'
আরও পড়ুন- ‘বাংলায় সম্পত্তি ও অর্থের নিরাপত্তা নেই’, শিল্প সম্মেলন ইস্যুতে রাজ্যকে বিঁধলেন দিলীপ
মমতার সতর্কতা, 'এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গিতে ৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ম্যালেরিয়ায় ২ জনের। ডেঙ্গির পজেটিভিটি রেট কম। তবে সাবধানে থাকতে হবে। যতটা পারছি আমরা টেস্ট করানোর চেষ্টা করছি।'
রাজ্যে শিল্পে বিনিয়োগের কথা জানিয়েছেন মমতা। তাঁর দাবি, 'রাঘুনাথপুরে ৭২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হচ্ছে। কয়েক লক্ষ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে। তাজপুরে সমুদ্র বন্দর হচ্ছে। দেউচা-পাচামিতে কয়লা উত্তোলন হবে। এতে রাজ্যের বিনিয়োগ হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। জমিদাতাদের জন্য পুনর্বাসন প্যাকেজ তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। সিঙ্গুরের মতো করে জমি অধিগ্রহণ হবে না। প্রয়োজনে প্যাকেজ নিয়ে প্রস্তাব এলে খোলা মনে খতি দেখে তা নিয়ে আলোচান হতে পারে, এতে জেদাজেদির কিছু নেই।'
জ্বালানির উপর রাজ্যের ভ্যাট কমানোর দাবিতে আন্দোলনে পথে নেমেছে বিজেপি। এ প্রসঙ্গে এ দিন মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, 'আন্দোলনে নেমেছেন ওঁরা। যাঁরা আন্দোলনের আ-ও জানেন না, তাঁরা আন্দোলন করছেন? কিন্তু জানতে চাইছেন না তো কীভাবে আমরা দাম নিয়ন্ত্রণ করব। দাম বাড়াবে ওরা, আর রাজ্যকে বাড়তি টাকা দিতে হবে? জ্বালানির দাম কমানো হচ্ছে উত্তরপ্রদেশের ভোটের কথা মাথার রেখে।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন