আসন্ন পুরভোটকে সামনে রেখে দলের নতুন প্রচার কর্মসূচি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দিল্লি হিংসা, এনআরসি, সিএএ মোদী-শাহের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে ছাড়লেন না তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবারে অমিত শাহের 'ভূমিপুত্র' মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এদিন মমতা বলেন, "আমরা কেউ ভূমিপুত্র নই? আমাদের এনআরসি করে বাদ দেবে ভেবেছেন? গজুভাই আপনি গজা খেয়ে বাংলা চালাবেন?" দিল্লি হিংসা নিয়ে এদিন মঞ্চ থেকে সর্বদাই সরব ছিলেন তৃণমূল নেত্রী। মমতা বলেন, "আমরা দিল্লিতে যারা সর্বহারা হয়েছে, সব কিছু খুইয়েছে, তাঁদের জন্য তহবিল করব। ডেরেক ও ব্রায়েন এবং সুদীপকে বলছি দিল্লিতে একটা ব্যবস্থা করতে। তাঁদের জন্য একমুঠো ভাত আমরা দিতেই পারি। আশ্রয় দেওয়ার ক্ষমতা বাংলার আছে।"
আরও পড়ুন: আমি দায়িত্বে থাকলে বিজেপি নেতাদের গ্রেফতার করতাম, বিস্ফোরক দিল্লির প্রাক্তন পুলিশ প্রধান
প্রসঙ্গত, ঘাসফুল শিবিরের পাখির চোখ ২১শের বিধানসভা ভোট। তার আগে রাজ্যব্যাপী পুর নির্বাচনে বাজিমাতের চেষ্টায় মরিয়া তৃণমূল। আসন্ন পুরভোটকে সামনে রেখে আজ দলের নতুন প্রচার কর্মসূচি ঘোষণা করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম দিলেন 'বাংলার গর্ব মমতা'। এই কর্মসূচিকে সামনে রেখেই আগামী পুরভোটের প্রচারে ঝাঁপাবে জোড়া-ফুল বাহিনী। সকাল ৯টা থেকে ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে শুরু হয় তৃণমূল বিধায়কদের বৈঠক। পরবর্তীতে নেত্রী নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূল পরিচালিত সব কর্পোরেশন ও পুরসভার দলীয় কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানেদের নিয়ে বৈঠক শুরু করেন। সেখান ছিলেন ব্লক ও ওয়ার্ড স্তরের দলীয় নেতারাও।
সমাবেশ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "'আমার মন কাঁদছে, আমার হৃদয় কাঁপছে দিল্লির জন্য। যেভাবে মানুষ হত্যা হয়েছে তা পরিকল্পনা করে করা হয়েছে। পরিকল্পনামাফিক গণহত্যা করা হয়েছে। পরে সেখানে সাম্প্রদায়িক রঙ লাগানো হয়েছে।' এদিন এক মিনিট নীরবতা পালনও করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই মমতার তাঁর নিজের ঢঙে বলতে শুরু করেন, 'আমাদের আরও নম্র, আরও বিনয়ী হতে হবে। অহংকার মন থেকে সরিয়ে দিন। মানুষের জন্য ভালো কাজ করে যান। কীসের এত ঔদ্ধত্যে? আমরা দিল্লিতে দেখছি কী চলছে। এই বাংলা নম্র, শুদ্ধতার বাংলা।" পাশপাশি বিজেপি নেতৃত্বকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, "বেশ কিছু লোক বাইরে থেকে এসে টাকা ছড়াচ্ছে এলাকায়। আপনাদের নজর রাখতে হবে। দিদি সব নজর রাখতে পারবে না। আপনাদের সেটা দেখতে হবে। বিজেপি কিন্তু দাঙ্গা লাগাতে চাইছে। নির্বাচন জিততে চাইছে এই করে। জাতের নামে জাতাকল তৈরি করেছে বিজেপি। সারা দেশে আগুন লাগাতে চাইছে।"
আরও পড়ুন: তৃণমূলের নয়া চমক! ‘বাংলার গর্ব মমতা’ আদতে কী?
রবিবারে অমিত শাহের সভা নিয়েও তোপ দাগেন মমতা। তিনি বলেন, "স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমরা কাজ ঠিক করছি বলেই আপনি আমাদের গালিগালাজ করছেন। কিন্তু আপনি উদ্বাস্তুদের অপমান করছেন। আপনাদের জন্য দিল্লিতে ৫০টি প্রাণ হারিয়েছে। আসাম, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, নাগরিকত্ব দেওয়ার খেলায় এ কী করছেন? জনগণের রক্ত খাবেন বলে এই সব করছেন?" এরপরই কিছুটা ব্যঙ্গসুরে মমতা বলেন, "বিজেপির তাবিজ নিয়ে এবার থেকে দেশে ঘুরতে হবে। নয়তো প্রাণ যাবে আপনার"।
এদিন সুশাসনে রাজ্যের মমতার বিকল্প নেই, এই বিষয়টিকে সামনে রেখেই এবার প্রচারে নামবেন ঘাস-ফুল নেতা, কর্মীরা, এমনটাই জানা গিয়েছে। বিরোধী বিজেপি ও বাম-কংগ্রেসের আক্রমণে বিরুদ্ধে প্রচারে জবাব দেবে তৃণমূল। তার পাশাপাশি গত কয়েক বছর তৃণমূল পরিচালিত পুর বোর্ড ও সরকারের উন্নয়নের কাজের খতিয়ানও প্রচারে তুলে ধরা হবে। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, 'এত দিন প্রচার হয়েছে রাজনৈতিক কর্মসূচির উপর। অর্থাৎ, বিজেপি ও বিরোধীদের আক্রমণ, প্রতি আক্রমণের সঙ্গেই এবার প্রচারে থাকবে উন্নয়নের বিষয়গুলি। গত পাঁচ বছর কী কী কাজ হয়েছে তা তুলে ধরা হবে। স্পষ্ট করে দেওয়া হবে যে মমতাই একমাত্র বিকল্প।' জানা গিয়েছে, এই বৈঠকেই নেত্রী ঘোষণা করবেন পুর নির্বাচনে দলের কোন নেতা কী দায়িত্ব সামলাবেন।
আরও পড়ুন: বাংলার পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কেমন হবে, জানালেন অমিত শাহ
লোকসভার পর পরই পিকের পরামর্শে রাজ্যে 'দিদিকে বলো' কর্মসূচি চালু করে তৃণমূল। তাতে কাজ হয়েছে। অসন্তোষ দূরে ঠেলে মানুষের আস্থা দল অর্জন করতে পেরেছে বলে মনে করছে শাসক দলের নেতারা। এই অবস্থায় আক্রমণ, প্রতি আক্রমণের সঙ্গে 'দিল্লি মডেলে' প্রচারে 'উন্নয়ন' ইস্যুকে হাতিয়ার করে ভোট বৈতরণী পারের চেষ্টায় তৃণমূল নেত্রী। শীর্ষ তৃণমূল নেতার মতে, 'সিএএ-এনআরসি, এনপিআর প্রতিবাদ থাকবেই। কিন্তু, বিজেপি মডেলের বিকল্প কী? তা তুলে ধরতে না পারলে মানুষের ভরসা মেলা ভার। তাই বিধানসভা ভোটকে মাথায় রেখে উন্নয়নকে হাতিয়ার করেই এখন থেকে ঝাঁপাতে হবে।'
রবিবারই শহিদ মিনারের মঞ্চ থেকে 'দুর্নীতি' ইস্যুতে মমতা সরকার ও তাঁর দলের নেতা, কর্মীদের নিশানা করেন মোদীর 'সেনাপতি' তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। লোকসভায় পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসাবেও দলীয় পর্যালোচনায় উঠে এসেছিল দলের স্থানীয় নেতাদের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার বিষয়টি। যার মোকাবিলায় সংগঠনে বেশ কিছু রদ বদলও করেছিলেন নেত্রী। সূত্রের খবর, পিকের রিপোর্টেও 'দুর্নীতি'র বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। পুরভোটের আগে এদিন অভিযুক্ত নেতা, কর্মীদের উদ্দেশ্যে কী কড়া বার্তা দেন নেত্রী সেদিকেও লক্ষ্য থাকবে।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন