তৃণমূল থেকে বিজেপি, এই মুহূর্তে বঙ্গ রাজনীতির বহুল ব্যবহৃত চেনা পথ। লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে ১৮টি আসনে জয় পেয়েছে বিজেপি। এই সাংসদদের মধ্যে অনেকেই সাবেক তৃণমূল। এছাড়া লোকসভার ফল ঘোষণার পর থেকে বিজেপিতে যোগদানর হিড়িক পড়ে গিয়েছে। পদ্ম শিবিরে চলছে 'যোগদান মেলা'। এই আবহে কাঁচরাপাড়ায় এসে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য সময় বেঁধে দিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!
তৃণমূল সুপ্রিমোর সাফ বার্তা, "দল থেকে যাঁদের বেরোনোর ইচ্ছা, তাঁরা সাত দিনের মধ্যে দল ছেড়ে দিন। আমরা নতুন করে শুরু করেছি"। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শুক্রবার কাঁচরাপাড়ার মিলন নগর আদর্শ সংঘ মাঠে সভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সভায় হাজির ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার দলীয় নেতৃত্ব। বক্তব্য রাখতে গিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ''আমি সাত দিন সময় দিলাম। যার যার চলে যাওয়ার ইচ্ছে, দল ছেড়ে চলে যেতে পারে। তাহলে আমার দলটা শুদ্ধ হয়ে যাবে। পবিত্র হয়ে যাবে। আবার নতুন করে শুরু করেছি এই স্রোত চলতে থাকবে।
আরও পড়ুন- ‘ভুল করেছি, গদ্দারকে বিশ্বাস করে ঠকেছি’, স্বীকার করলেন মমতা
এদিন মমতা নিজের দলকে মহীরুহের সঙ্গে তুলনা করেছেন। প্রত্যয়ী মমতা আরও বলেন, তাঁর এই দলকে সহজে কেউ হারিয়ে দিতে পারবে না। বিজেপির সংগঠন এ রাজ্যে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা ঠেকাতে গিয়ে দলীয় কর্মী সমর্থকদের মনোবল বাড়াতে এদিন কার্যত 'ভোকাল টনিক' দিয়েছেন মমতা। তাঁর ব্যাখ্যা, তৃণমূল যখন জন্ম নিয়েছিল তখন ছিল ছোট চারাগাছ। এরপরই তিনি বলেন, "আমি ভেবেছিলাম এই চারাগাছ ছাগল বা গরু তে খেয়ে নিতে পারে। তখন পাহারা দেওয়ার দরকার ছিল। এখন তৃণমূল কংগ্রেস মহীরুহে পরিণত হয়েছে। বৃক্ষ হয়ে গিয়েছে। এখন আর পাহারা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এটা এখন মানুষের দল। সবাই আমরা তৃণমূল"।
আরও পড়ুন- বদল! ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি কানেই তুললেন না মমতা
নতুনভাবে দল মজবুত করতে ও সংগঠন গড়তে তিনি নতুন টোটকাও বাতলেছে। এদিনের সভায় তিনি 'বখাটে ছেলেদের' দলে যোগ দিতে আহ্বান করেছেন। আরও স্পষ্টভাবে বোঝাতে মমতা বলেন,"রাস্তায় যাঁরা আড্ডা মারেন, সময় কাটান, তাঁদেরকেও দলে আসতে আবেদন জানান। মমতা আরও বলেন, অনেক গরিব ছেলে মেয়ে রয়েছেন, যাঁদের বাড়ির জন্য চাকরির প্রয়োজন। তাঁরা আমাকে বায়োডাটা জমা দিন। তাঁদের কাজের বিষয়টা বুঝে নেব। তারা দল করুন সংগঠন করুন"। বিজেপিকে কীভাবে টেক্কা দেওয়া যায় সে ব্যাপারেও মমতা এদিন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে পথ বাতলে দিয়েছেন। সারা রাজ্যে বিজেপি নিয়মিত মিটিং, মিছিল, সভা-সমাবেশ করছে। তাই মমতার নিদান, "বিজেপি একটা মিটিং করলে আপনারা দশটা মিটিং করুন। যদি কালো পতাকা দেখায় সবার কাছে কালো ছাতা রয়েছে তো..."।
আরও পড়ুন- এনআরএসকাণ্ডে তৃণমূলেই ‘ক্ষোভ’! মমতার সমালোচনায় এবার সব্যসাচী দত্ত
কিন্তু, রাজ্যে তৃণমূল কি এখন দুর্বল? উপস্থিত নেতা-কর্মীরা এমন প্রশ্ন না করলেও মমতা বলেন, টিএমসি দুর্বল নয়, আমরা পাল্টা ব্যবস্থা নিতেই পারি। কিন্তু, আমি তা চাই না। তবে স্থানীয় মানুষ ঠিক করবে, তারা কী করবে। সব বিষয় আমি নিজের হাতে রাখি না। বুথ স্তরে কাজ করার জন্য তৃণমূল কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। সবাইকে একসাথে কাজ করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তবে, তৃণমূল সরকারের পতনের যে কোনও সম্ভবনা নেই তাও এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, এখনও দুবছর সরকারে রয়েছি। তারপরে আারও পাঁচ বছর সরকারে থাকবো"।