‘নিশ্চয়ই আমাদের কোথাও ভুল আছে, সেই ভুল সংশোধন না হলে হাজারটা মিটিং করেও কিছু হবে না’, মালদা ‘পুনুরুদ্ধার মিশনে’ নেমে এমন কথাই শোনা গেল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবি সামলে একুশের বিধানসভায় মালদায় জোড়াফুল ফোটাতে মরিয়া মমতা এদিন তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সাবিত্রী মিত্র, গৌরচন্দ্র মণ্ডলকে রীতিমতো ধমক দিয়ে দলনেত্রী বলেন, ‘‘সারাক্ষণ ঝগড়া করছে, এত ঝগড়া করো কেন? একদম ঝগড়া করবে না’’। আবার দলের নেতাদের বকুনি দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমি বড় নেতা না ও বড় নেতা এসব না ভেবে কাঁধে কাঁধ রেখে কাজ করুন’’।
মালদায় তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে বিবাদ প্রায়শই প্রকাশ্যে চলে আসে। একসময় কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী ও সাবিত্রী মিত্রের মধ্যে দ্বন্দ্ব ঘিরে সরগরম ছিল মালদা তৃণমূল। এদিন, সাবিত্রী মিত্র-গৌরচন্দ্র মণ্ডলকে ধমক দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘এত ঝগড়া কর কেন? মানিকচকে সারাক্ষণ ঝগড়া করছে সাবিত্রি মিত্রের সঙ্গে’’। এরপরই তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘মানিকচক দেখবে সাবিত্রী, সহযোগিতা করবে গৌরচন্দ্রই’’। মমতার নিশানায় ছিলেন বাবলা সরকারও। তাঁর উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘ইংরেজবাজার, পুরাতন মালদার বাইরে যায় না। সব মিউনিসিপ্যালিটি নেতা হয়ে গিয়েছে, জেলা নেতা হতে চায় না। একটু জেলায় যাও’’। কার্তিক ঘোষকে ধমকের সুরে মমতা বলেন, ‘‘তোমার সঙ্গে তোমার কাকার এত ঝগড়া কেন? আপনারা দু’জনে মিলে মেটাবেন’’।
আরও পড়ুন: ‘বিজেপির ২০০ আসন চাই, ৯৪টি কি বাম-কংগ্রেসের জন্য?’
মমতা এদিন বলেন, ‘‘ভোটের সময় কী হয় মালদায়? ভোট চলে যায় অন্য জায়গায়! কারণটা নিশ্চয়ই জানি আমি। এতদিন ধরে রাজনীতি করছি কারণটা জানব না তা তো হয় না। আজকে একটা কথা বলতে চাই, ইচ্ছে করলে ১০ জন নেতার সঙ্গে মিটিং করতে পারতাম, কিন্তু করব না, যতদিন না মালদা পুনরুদ্ধার হচ্ছে কোনও মিটিং করব না’’। মালদায় দলীয় নেতাদের উপর ক্ষোভপ্রকাশ করে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, ‘‘মাত্র ১২টা সিট রয়েছে, আর নেতা আছে ১০ ডজন!’’
আরও পড়ুন: মঞ্চে মমতা, দর্শকাসনে বসে ‘জল মাপলেন’ পিকে
মালদায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঠেকিয়ে দলের সংগঠন মজবুত করার লক্ষ্যে দলের নেতাদের ধরে ধরে দায়িত্ব ভাগ করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মালদার ছোট সুজাপুরের সভায় তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘এখানে একজনের দ্বারা হবে না। সকলকে মিলে কাজ করতে হবে। ইংরেজবাজার পুরসভায় ১, ৪, ৫, ৭, ৮, ৯, ১০, ১২, ১৯, ২৯নং ওয়ার্ড দেখবে কৃষ্ণেন্দু। হবিবপুর ও গাজোল কেন্দ্রও দেখবে কৃষ্ণেন্দু। ৩, ৬, ১৫, ১৬ ১৭, ২৩নং ওয়ার্ড দেখবে নীহাররঞ্জন ঘোষ। বাবলা সরকার দেখবে ১৪, ২০, ২১, ২৪, ২৫, ২৭, ২৮নং ওয়ার্ড। ২২ ও ২৬নং ওয়ার্ড দেখবে নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি। ১১ ও ১৩ নং ওয়ার্ড দেখবে অম্লান ভাদুড়ি। ২নং ওয়ার্ড দেখবে সুমনা আগরওয়াল। ১৮নং ওয়ার্ড দেখবে আশিস কুণ্ডু’’। মৌসম বেনজির নুরের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘‘সবটা দেখে কাজ করতে হবে।
এদিন মালদার মাটিতে দাঁড়িয়ে মমতা আরও বলেন, ‘‘আজ পর্যন্ত জানি না, কেন মালদার মানুষ আমাদের নির্বাচিত করল না। মালদার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতায় কী অসুবিধে আছে! যারা কাজে লাগে না, সেই দলগুলোকে নির্বাচিত করেছে। মানুষকে সম্মান জানাই। আমাদেরই নিশ্চয়ই কোথাও ভুল আছে। সেই ভুল না শোধরালে হাজারটা সভা করেও কিছু হবে না’’।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন