রেশনে চাল দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ করতে ময়দানে নামলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার তথ্য, যুক্তি তুলে ধরে নদিয়ার হাবিবপুরের চাল দুর্নীতি যাবতীয় অভিযোগ খণ্ডন করেছেন তিনি। 'ফেক নিউজ' ছড়ানোয় বিরোধীদের একহাত নিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। টুইটে তাৎপর্যপূর্ণভাবে তিনি লিখলেন 'সত্যান্বেষী'।
ঠিক কী অভিযোগ?
বেসরকারি রাইস মিল থেকে সরকারি চাল পাচার করা হচ্ছে, এই অভিযোগে শুক্রবার সকালে বিক্ষোভ দানা বাঁধে নদিয়ার রানাঘাটের হাবিবপুরে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ ছিল, শ্রীকৃষ্ণ রাইসমিলের ভিতরে লরি ভর্তি সরকারি চাল রয়েছে। সেই চাল অন্য বস্তায় ভরার কাজ চলছে। বস্তায় স্বচ্ছ ভারত মিশনের লোগো দেওয়া রয়েছে।
আরও পড়ুন- মুর্শিদাবাদে ‘ন্যায্য রেশন না পেয়ে’ ডিলারের বাড়ির সামনে অগ্নি সংযোগ
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। মিলের সামনে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান রানাঘাট ১ ব্লকের বিডিও এবং স্থানীয় সাংসদ জগন্নাথ সরকার। গোটা বিষয়টির সঙ্গে দুর্নীতি চক্রের যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন সাংসদ। পরে বিডিও তদন্তের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
মমতার বক্তব্য-
এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই শনিবার একাধিক টুইট করেন মুখ্যমন্ত্রী। হাবিবপুর সব অভিযোগ খারিজ করেন বিজেপি-র সমালোচনা করেছেন তিনি। টুইটে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, 'দয়া করে বুঝুন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গণবন্টন সরবরাহ পরিষেবায় শ্রীকৃষ্ণ রাইস মিল নথিভুক্ত। রেশনের জন্য এখানে স্বাভাবিকভাবেই চাল আসবে।' মমতা জানান, 'কোভিড মহামারীর কারণে যদি মিলে হঠাৎ চালের প্রয়োজন হয় তবে তা তৃতীয় পক্ষের থেকেই নিতে হবে।'
3) A rice gunny bag stolen from 2019-20 PDS or FCI supplied, cannot have 2018-19 markings as in this case
4) You can't comprehend the harm inflicted on society by spreading fake news
In your zeal to discredit GoWB, you forget to verify even the most basic facts #সত্যান্বেষী
(2/2)— All India Trinamool Congress (@AITCofficial) May 2, 2020
অন্য আরেকটি টুইটে যুক্তি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, 'যদি ২০১৯-২০ সালের সরবরাহকৃত চালের বস্তা চুরি হয় তবে সেখানে ২০১৮-১৯ সাল লেখা থাকবে না।' এরপরই বিজেপি শিবিরকে আক্রমণ শানিয়ে মমতা লেখেন, 'ভুয়ো খবর রটিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরতে গিয়ে অপনারা সমাজের কত ক্ষতি করছেন তা আন্দাজ করতে পারছেন না, এমনকী আপনারা মূল বিষয়গুলো পর্যন্ত খতিয়ে দেখতে ভুলে গিয়েছেন।' টুইটে একেবারে শেষে 'সত্যান্বেষী' শব্দের প্রয়োগ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা বিশেষ ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন- বাংলায় বিজেপি পার্টি অফিস থেকে উদ্ধার কয়েকশো কুইন্টাল রেশনের চাল, গ্রেফতার ২
মুখ্যমন্ত্রীর এই টুইটের পরই শোসাল মিডিয়ায় ঝড় ওঠে। একদল মানুষকে বিজেপিকে আক্রমণ করতে দেখা যায়। এইসব যুক্তি কেন সরকারি ওয়েবসাইটে তুল ধরা হচ্ছে না? রাজ্যের শাসক দলের প্রতি পাল্টা সেই প্রশ্নও ছুঁড়ে দেওয়া হয়।
করোনা পরিস্থিতির গোড়া থেকেই বাংলায় রেশন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। রেশন থেকে রাজ্য সরকারের বরাদ্দকৃত চাল ও আটা ডিলাররা ঠিকমতো দিচ্ছে না বলে দাবি করে বিরোধী শিবির। এরপরই সরিয়ে দেওয়া হয় রাজ্যের খাদ্য সচিবকে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই যা ঘোষণা করেছিলেন। রেশন নিয়ে মমতা সরকারকে নিশানা করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ও। রেশন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রাজ্যকে চিঠি পাঠান তিনি। তাঁর অভিযোগ ছিল, 'গণবন্টনের অনিয়মের কারণে গরিব মানুষ প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনায় খাদ্য শস্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।' পরে নবান্নের তরফে রাজ্যপালকে চিঠিতে জানানো হয়, 'রাজ্য এখনও কেন্দ্রের কাছ থেকে বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য পায়নি। তাও বাংলার ৯ কোটিরও বেশি মানুষকে গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে এই সংকটজনক সময়ে খাদ্যশস্য পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আগামী ৬ মাস, রেশনের মাধ্যমে প্রতি মাসে মাথাপিছু ৫ কিলো করে খাদ্যশস্য বিনামূল্যে দেওয়া হবে।'
আরও পড়ুন- রাজ্যজুড়ে রেশন নিয়ে অভিযোগের মুখে সরলেন বাংলার খাদ্যসচিব
রেশন কেলেঙ্কারি, রেশনের চাল লুঠ নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গেরুয়া শিবিরের লাগাতার অভিযোগের মাঝেই জলপাইগুড়িতে বিজেপিরই পার্টি অফিস থেকে উদ্ধার হয় চাল, অভিযোগ সেই চাল রেশনের। ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি অবশ্য জানিয়েছিলেন, 'এই কথা ঠিক যে গত লোকসভা নির্বাচনের সময় জন বার্লার নির্বাচনী কাজের জন্য ওই ঘর আমরা ভাড়া নিয়েছিলাম। কিন্তু ভোটের পর আমরা ছেড়ে দিই। সেখান থেকে আমরা আমাদের পতাকা খুলতে ভুলে গিয়েছি। তাই ওখানে পতাকা রয়ে গিয়েছে।' শনিবারও, মুর্শিদাবাদের সালারে রেশন থেকে কম সামগ্রী দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ডিলারের বাড়ির সামনেই আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। এই আবহেই হাবিবপুরের ঘটনা নিয়ে বিরোধী শিবিরকে মুখ্যমন্ত্রীর আক্রমণ যথেষ্ট তাৎপর্যবাহী।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন