মমতা সরকার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ভূরি ভূরি অভিযোগ বিরোধীদের। এবার সেই অভিযোগাকেই হাতিয়ার করে বাংলা জয়ের ঘুঁটি সাজাচ্ছে গেরুয়া শিবির। দুর্নীতি, তোলাবাজির প্রশ্নেই এ দিন একাধিক প্রশ্ন তুলে তৃণমূল সরকারকে বিঁধেছেন অমিত শাহ। তিনি সাফ জানালেন, 'মমতা সরকারের রাজনীতিকরণ হয়েছে, রাজনীতির অপরাধীকরণ হয়েছে। দুর্নীতি বাংলায় প্রতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।'
করোনা মোকাবিলা-আমফানের ত্রাণ নিয়ে রাজনীতির অভিযোগে গোটা বাংলায় হুলুস্থুল হয়েছে। শাসক দলের নেতাদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ, রেশন ডিলারদের বাড়ি পোড়ানোর একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এই ইস্যুকে তুলে ধরেই এ দিন শাহ বলেন, 'করোনা-আমফান নিয়েও জাতপাতের রাজনীতি হয়েছে। ক্ষতিপূরণের অর্থে তৃণমূলের নেতারা পুষ্ট হয়েছেন'। আসলে মহামারী ও প্রাকৃতি দুর্যোগকালে মানুষের ক্ষোভকেই উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করলেন বিজেপির 'চাণক্য'।
আরও পড়ুন- ২০০-র ওপর আসনে জয় নিশ্চিত, ফোকাস বাংলাইঃ অমিত শাহ
বাংলায় বেহাল শাসনের নজির তুলে ধরতে গিয়ে অমিত শাহের স্পষ্ট ঘোষণা, 'বাংলায় তিন ধরণের আইন চলে। এক- ভাইপোর জন্য, দুই- ভোট ব্যাংকের জন্য ও তিন-সাধারণ মানুষের জন্য।' অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসাতেই মমতা সরকার দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ শাহের।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যানের উল্লেখ করেও মমতা সরকারকে তুলোধনা করেছেন কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী। ২০১৮ সালের পর থেকে কেন রাজ্য সরকার এনসিআরবি-কে অপরাধের কোনও তালিকা পাঠায়নি তা জবাব চেয়েছেন অমিত শাহ। এরপরই অপরাধের নিরিখে পরিসংখ্যান তুলে ধরে রাজ্যের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ শানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, 'ধর্ষণ, অ্যাসিড হামলা, মহিলাদের নিখোঁজ হওয়া, নিখোঁজ মহিলাদের খুঁজে না পাওয়ার ক্ষেত্রে গোটা দেশে পশ্চিমবঙ্গে এক নম্বরে।' কেন্দ্রীয় স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিযোগ, '২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুসারে বাংলায় মহিলাদের উপর হামলায় অভিযুক্তদের শাস্তি হয় গড়ে ৫.৩ শতাংশ। দেশে এই হার ২৩ শতাংশের বেশি।'
রাজনৈতিক হিংসা, হত্যার ঘটনা নজরকাড়া। বিজেপি সহ বিরোধী দলগুলো একাধিকবার এই অভিযোগ করেছে। তাই বিধানসভা ভোটের আগেই কি বাংলা রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হতে পারে? শাহের জবাব, '৩৫৬ ধারার কোনও প্রয়োজনই হবে না। আগামী এপ্রিলেই রাজ্যের রাজ্যপাটে বদল হবে। ক্ষমতায় আসবে বিজেপি।'
আরও পড়ুন- ‘বাংলায় তুষ্টিকরণের রাজনীতি চলছে’, দক্ষিণেশ্বরে শাহের নিশানায় মমতা সরকার
বিগত কয়েক মাসে বাংলায় বিজেপির বিধায়ক থেকে একাধিক কার্যকর্তা, কর্মী, সমর্থকের দেহ উদ্ধার হয়েছে। গলের রাজ্য নেতৃত্বের নিশানায় তৃণমূল। রাজ্যে দুর্নীতি, হিংসার ছবি রাজ্যপালের রিপোর্ট মারফৎ তাঁর কাছে পৌঁছায় বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। উল্লেখ্য গত সপ্তাহেই দিল্লি গিয়ে শাহের সঙ্গে দেখা করেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। যা নিয়ে তাঁকে জোড়া-ফুল শিবিরের কটাক্ষও শুনতে হয়েছে। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের প্রতি শাসক দলের আচরণ নিয়েও এ দিন তৃণমূলকে বিঁধেছেন শাহ।
পঞ্চমীতেই কলকাতায় এসে বিজেপির সঙ্গে জোট ভঙ্গ করে তৃণমূলের হাত ধরার প্রস্তাব দিয়েছেন গোর্খা নেতা বিমল গুরুং। রাষ্ট্রদ্রোহিতা সহ একাধিক অভিযোগ থাকলেও পুলিশ কেন গুরুংকে ধরছে না? প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, 'মমতা সরকার প্রতিশোধের রাজনীতি করছে।' সাহের কথায়, 'যাঁর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ সেই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। একাধিক মামলা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে ধরছে না পুলিশ। এটাই সবথেকে বড় প্রতিশোধের রাজনীতি।' গোটা ঘটনা রাজনীতির চক্রব্যুহে জড়িত বলেই তাঁর ইঙ্গিত। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ''গুরুং গোর্খাদের জন্য লড়েছেন, এখনও তিনি লড়ছেন বলে বিশ্বাস করি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন