তৃণমূল কংগ্রেসের রাশ কার হাতে থাকবে, পিকের সঙ্গে দলের সম্পর্ক কী অবস্থায় রয়েছে তা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই বিতর্ক জারি ছিল। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যাযের ব্যক্তিগত মন্তব্য, তারপর পুরসভা নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা নিয়ে দলের অসন্তোষ। প্রকাশ্যে যত বিতর্ক হোক, যত মনোমালিন্য হোক মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যাযের বক্তব্য, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের উপস্থিতি বুঝিয়ে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রকৃত চিত্র।
দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যাযের 'ব্যক্তিগত মন্তব্য' বা 'ডায়মন্ড মডেল' নিয়ে দলের একাংশ রীতিমতো ঝড় তুলে দিয়েছিলেন। সরাসরি বিরোধিতা করেছিলেন সাংসদ কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায। বিতর্কে জড়িয়েছিলেন দলের অনেকেই। পুর নির্বাচনে দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা নিয়েও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ করেছিল দলের একাংশ। বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রার্থী বদলও করতে হয়। সেই সময় আই প্যাক নিয়ে দলের একটা বড় অংশ সরাসরি বিরোধিতায় নেমে যায়। সেই পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণ করে নেয় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সামনে চলে আসে মমতা-পিকের এসএমএস। পরিস্থিতি এমন একটা পর্যায়ে গিয়েছিল যেন আই প্যাকের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক প্রায় বিচ্ছিন্ন হতে চলেছে! কার্যত আই প্যাকের পুরনো কর্মসূচিই ফের নিতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর পিকের জনসংযোগ কর্মসূচির ওপর জোর দিয়েছিল তৃণমূল। এদিন নজরুল মঞ্চে দলনেত্রী গ্রামে গ্রামে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে জনসংযোগ করার নিদান দিয়েছেন। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ার পর আইপ্যাক তৃণমূলকে নানান কর্মসূচি সংক্রান্ত পরামর্শ দিয়েছিল। দলের একাংশ মনে করে, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের লড়াইতে আই প্যাকের পরামর্শের কার্যকারিতা অস্বীকার করা যাবে না।
আরও পড়ুন- ‘বিধানসভাকে স্কুল মনে করুন’, বিধায়কদের কড়া বার্তা মমতার
বিতর্কিত পরিস্থিতি সামলে নিতে দলের সমস্ত কমিটি ভেঙে দিয়ে, কোর কমিটি গঠন করে বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায। পরবর্তীতে ফের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যাযকেই দলের সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। দলনেত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন, 'নবীনে-প্রবীণে মিলে দল করতে হবে।' তবে এদিনের ঘোষিত কমিটিতেও শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদের নাম ছিল না। উল্লেখযোগ্য বিষয়, ফের উত্তর কলকাতা জেলা কমিটির দায়িত্ব বর্তাল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যাযের ওপর। স্পষ্ট যে, প্রবীণদের গুরুত্ব দিচ্ছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ক্ষত নির্মূল করে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক আসন নিয়ে ফের তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস। সামনে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচন। আগের বার তৃণমূলের ৪২-এ-৪২ প্রচার বুমেরাং হয়েছে। তবে এবার এরাজ্য থেকে আসন বৃদ্ধিতে জোর দেবে দল। এদিকে দলের রাশ নিজের হাতেই রেখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায। দলনেত্রী নিজেই বললেন, 'আমি ছিলাম, আছি, থাকব।' তৃণমূল সূত্রের খবর, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের পর আই প্যাকের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি হয়েছে। তাছাড়া ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এরাজ্য থেকে ১৮টা আসন পেয়েছে। তারপর আই প্যাকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তার ফলও মিলেছে ২০২১-এ। রাজনৈতিক মহলের মতে, এদিন একমঞ্চে প্রশান্ত কিশোরের উপস্থিতিতে দলের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা সব জল্পনার অবসান ঘটাল।