একুশের নির্বাচন যে বাংলার ভোট ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হতে চলেছে তা বলাই বাহুল্য। সেই প্রেক্ষাপটে আবারও বিস্ফোরক দিলীপ ঘোষ। সাক্ষাৎকারে উঠে এল সেই প্রসঙ্গ।
আদর্শগত ও রাজনৈতিকভাবে বিজেপির পক্ষে পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
শুধু বিজেপির পক্ষে নয়, নির্বাচন পুরো জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজেপি প্রায় সব রাজ্যই জিতেছে, তবে (এখনও) বাংলায় নয়। এই রাজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে নেয় এবং প্রায় এক হাজার কিলোমিটার সীমান্ত এখনও অশান্ত। সিপিআই (এম) এবং তৃণমূল, অনুপ্রবেশকারীদের তাঁদের ভোটার হিসাবে পরিণত করার জন্য বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারীদের আনতে চায়। বাস্তবে এটাই এখনও পর্যন্ত ঘটছে। এর ফলে আল-কায়দা, সিমি ইত্যাদি সংখ্যক সন্ত্রাসীরা এসেছে। আজও পশ্চিমবঙ্গে সন্ত্রাসীরা ধরা পড়ছে এই কারণেই।
জম্মু ও কাশ্মীর সহ পুরো দেশ শান্তিপূর্ণ হলেও পশ্চিমবঙ্গে কোনও শান্তি নেই এবং এখানে বোমা বিস্ফোরণও হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হচ্ছে। সুতরাং বাংলায় অস্থিরতা থাকলে পুরো দেশ জড়িয়ে পড়তে পারে। বিজেপি জিতলেই বাংলা সুরক্ষিত থাকবে। শুধু তাই নয়, আমাদের প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন যে দেশটি উত্তর, দক্ষিণ এবং পশ্চিমে উন্নত হলেও পূর্ব অনুন্নত রয়েছে। পূর্বের রাজ্যগুলিকে বিকাশ করা আমাদের লক্ষ্য, অন্যথায় ভারতের উন্নয়ন অসম্পূর্ণ থাকবে। অমিত শাহ যখন বিজেপির জাতীয় সভাপতি ছিলেন, তখন তাঁর অন্যতম প্রধান উদ্বেগ ছিল যে বিজেপি অন্য অংশে শক্তিশালী তবে বঙ্গ ও পূর্ব ভারতে নয়। সুতরাং পশ্চিমবঙ্গ জয় আমাদের পক্ষে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা জিতব।
নির্বাচন যত কাছে আসছে রাজ্যে হিংসা কি বেড়ে চলছে?
এই হিংসার রাজনীতি কমিউনিস্ট রাজনীতির একটি অঙ্গ। তারাই এটিকে ভারতে নিয়ে এসেছিল। তা সে কেরালা, ত্রিপুরা হোক বা পশ্চিমবঙ্গ। সেই লোকেরাই তৃণমূলে গিয়েছিল এবং এখন দুর্নীতিও তাদের রাজনীতির একটি অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুতরাং বাংলা খুব খারাপ অবস্থায় আছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে হিংসা আরও বাড়বে কারণ তাদের জনপ্রিয় সমর্থন কমে যাচ্ছে। তাদের কাছে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আর কোনও উপায় নেই।
আরও পড়ুন, ‘কেঁচো খুড়তে গিয়ে কেউটে বেরোবে’, মমতাকে মেসেজ ফাঁসের হুঁশিয়ারি রাজীবের
তৃণমূলে একসময় সমালোচনা হয়েছিল সিপিআই(এম) থেকে বেশ কিছু নেতাদের নেওয়ার। এখন বিজেপিও তাই করছে। বিজেপি কী সেভাবেই পরিবর্তন আনছে?
দেখুন, বিজেপি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন দল, বিভিন্ন মতাদর্শ এবং সম্প্রদায়ের যোগ্য লোককে নিতে চায়। বিজেপি এভাবেই বিস্তৃত হয়েছিল। আমাদের নেতৃত্ব, দক্ষতা এবং গ্রহণযোগ্যতা দেখে বিভিন্ন দলের নেতারা আমাদের সঙ্গে যোগ দেন।
অনেকে এই ভেবে তৃণমূল যোগ দিয়েছিল যে তারা যে লক্ষ্য নিয়ে দাঁড়িয়েছিল তা পূরণ হবে, তবে তা হয়নি। শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতারা সিপিআই (এম)-এর হিংসাত্মক রাজনীতির বিরোধিতা করতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিল। তবে তারা হতাশ হয়েছেন। বাংলায় কোনও পরিবর্তন হয়ইনি।
আপনার কী মনে হয় কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আছে বলেই এই নেতারা পদ্ম শিবিরে যোগ দান করছে?
এটা হয়েই থাকে। প্রতিটি নির্বাচনেই এই দল, ওই দল হয়েই থাকে। এটা কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। আমরা অনেককেই নিয়েছি। আমাদের টেকনিক জানা আছে।
ক্ষমতায় আসার জন্য প্রথমে বিজেপি তার ক্যাডার তৈরি করতে চেয়েছিল। তবে এখন কিন্তু জোর করেই… (প্রশ্ন থামিয়ে)
আমাদের কাঠামো নির্দিষ্ট আছে। যে সারা বছর কাজ হয়ে চলেছে। আমাদের ক্যাডার শক্তিশালী এবং সক্রিয়। দলকে আরও প্রসারিত করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা সর্বদা চালু রয়েছে। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে বুথ কমিটি সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বিগত বিধানসভা নির্বাচনের পরপরই, যারা বিজয়ী হয়েছিল (বিজেপির টিকিটে) তারা একসঙ্গে বসে লোকসভার জন্য কৌশল তৈরি করেছিল।
তাহলে বলছেন দলের পুরোনও সক্রিয় কর্মী এবং নবাগতদের মধ্যে বিরোধ নেই?
এটা হয়েই থাকে। যারা ইতিমধ্যে দলে রয়েছেন তারা অনুভব করবেন যে বাইরে থেকে যারা আসবেন তাদের পুরস্কৃত করা হবে। তবে তাঁদের মধ্যে সামঞ্জস্য করার জন্য আমাদের নিজস্ব সিস্টেম রয়েছে। সেটা কর্মীরা জানে। হ্যাঁ, এটি একটি সমস্যা। তবে আমরা কাজ করার সময় তা মনে রাখি। দেখুন, যোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়া হলে একটি দল এগিয়ে যায়। অনেকেই আছে হয়ত অনেক দিনের কর্মী। কিন্তু কাউন্সিলর নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পক্ষে তিনি উপযুক্ত। কিন্তু সকলেই বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনের পক্ষে উপযুক্ত হতে পারেন না।
মুখ্যমন্ত্রী পদে কোন প্রতিযোগিতা নেই?
যে রাজ্যগুলিতে এখনও বিজেপি ক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি, সেখানে আমরা কখনই মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী ঘোষণা করি না। আমাদের দলকে বাংলায় নেতৃত্ব দিতে পারে এমন অনেক লোক রয়েছে।
আপনিও কি সেই দলে রয়েছেন?
যেহেতু আমি রাজ্য বিজেপির সভাপতি এবং অনেকদিন ধরে ভাল করে চলেছি, তাই আমার নাম উঠছে। আমি আরএসএসের স্বেচ্ছাসেবক ছিলাম এবং এখনও আমি সাধারণ জীবনযাপন করি। আমি এখনও আমার বাড়ি (উত্তর এভিনিউতে) থেকে সংসদে হেঁটেই যাই। তবে বাংলায় পরিস্থিতি যেহেতু তাই আমার সঙ্গে কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মী থাকেন। দল এর আগে আমাকে বিধানসভা নির্বাচন লড়তে বলেছিল, আমি লড়াই করেছি এবং জিতেছি। তারপরে দল চেয়েছিল যে আমি লোকসভা ভোটে লড়ব, এবং আমি জিতেছি। আমি এখনও দলের একজন কর্মী। লোকসভা নির্বাচনের পরে দল আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল আমি মন্ত্রী হতে চাই কিনা। আমি বলেছিলাম আমি সংগঠনে থাকতে চাই। আমার মিশন পশ্চিমবঙ্গ জয় করা। এখন, দলীয় নেতৃত্বের উপর নির্ভর করে, কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন তা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সংসদীয় বোর্ড রয়েছে। দল আমাকে যে দায়িত্ব দেবে, আমি তা পালন করব।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন যে তিনি নন্দীগ্রাম থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এটি কি বিজেপির পরিকল্পনার বাইরে ছিল?
মনের অনিশ্চয়তা, বিভ্রান্তি থাকলে অনেকে অনেক কিছু করে। উনি আশঙ্কা করেছিলেন যে ভবানীপুর থেকে তিনি জিততে পারবেন না কারণ সেখানে বিজেপি দুর্দান্ত ফল করেছে লোকসভা নির্বাচনে। নন্দীগ্রামও কিন্তু তার পক্ষে সব থেকে নিরাপদ নয়। সেখান থেকে জিততে পারবেন না। অনেক বড় নেতাদের পরাজিত করার ইতিহাস সেখানে রয়েছে। আসলে উনি নার্ভাস হয়ে পড়েছেন। তাঁর দল ভেঙে পড়ছে। দলের তৈরির সময় যারা তাঁর সঙ্গে ছিল সেই নেতারা এখন আমাদের সঙ্গে রয়েছে। মমতার স্ট্রাইকার এবং ডিফেন্ডার আমারদের দলে এসেছেন। ফেব্রুয়ারিতে আরও আসবেন বিজেপিতে। ওঁর দল এবার শেষ হতে চলেছে।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন