কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের জরুরি তলব পেয়ে সোমবার রাতেই দিল্লিতে পৌঁছে গিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর মঙ্গলবার বেলা বাড়তেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক সেরে ফেলেন তিনি। আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে শুভেন্দুর। বিজেপি সূত্রে খবর, বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে কথা বলতেই দিল্লিতে গিয়েছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। শুভেন্দু যখন দিল্লিতে বৈঠকে ব্যস্ত, তখন একই ইস্যুতে কলকাতার হেস্টিংস কার্যালয়ে প্রদেশ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
রাজ্যের ইস্যু নিয়ে বৈঠক, অথচ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে ডাকা হল না রাজ্য সভাপতিকে। ভার্চুয়াল বৈঠকে না ডেকে একেবারের দিল্লিতে তলব করা হল শুভেন্দুকে। কেন? আপাতত এ নিয়েই পদ্ম শিবিরের অন্দরে জোর জল্পনা। অনেকেরই মত, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তলবেই স্পষ্ট বাংলায় জমি আরও পোক্ত করতে শুভেন্দু অধিকারীতেই আস্থা রাখছেন মোদী-অমিত শাহরা। আবার একাংশ বলছে, দলের অন্দরে ক্রমেই আদি-নব্য বিবাদ বাড়ছে। যা মেটানোর পরামর্শেই শুভেন্দুকে ডাকা হয়েছে।
এদিন অমিত শাহর বাড়িতে যান শুভেন্দু অধিকারী। প্রায় মিনিট ২৫ বৈঠক হয় তাঁদের। অমিত শাহের দফতর থেকে টুইটে ওই বৈঠকের ছবি প্রকাশ করা হয়। একই ইস্যুতে টুইট করেন শুভেন্দু অধিকারীও। সেখানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা জানিয়েছন যে, 'বিভিন্ন বিষয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। বাংলার জন্য আশার্বাদ চেয়েছি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আস্বস্ত করে জানিয়েছেন, তিনি আগেও বাংলায় পাশে ছিলেন, আগামীতেও থাকবেন।'
সূত্রের খবর, ভোটের পর ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরাতে অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে শুভেন্দুর। এছাড়াও আলোচনায় ছিল, বাংলায় পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা নির্ধারণও। ইয়াসে ত্রাণ বিলি করছে রাজ্য। চুরি রুখতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তদের অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একাধিক পদক্ষেপের কথাও ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি, বিনামূল্যে রাজ্যগুলোকে করোনা টিকা এবং দীপাবলি পর্যন্ত বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই কর্মসূচির প্রচার কিভাবে হবে তাও আলোচনায় উঠে আসে।
আরও পড়ুন- Dilip Ghosh: চুঁচুড়ার পর এবার আসানসোলেও বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে দিলীপ
কিন্তু, সবকিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে একটাই প্রশ্ন, দিল্লিতে কেন ডাকা হল না দিলীপ ঘোষকে। তাহলে কী গুরুত্বের বিচারে প্রদেশ সভাপতিকে ছাপিয়ে যাচ্ছেন বিরোধী দলনেতা? কী কারণে শুভেন্দুর হঠাৎ দিল্লি যাওয়া তা অনেকের মতই স্পষ্ট নয় দিলীপ ঘোষের কাছেও। দলীয় সূত্রে খবর, বিজেপি রাজ্য সভাপতি এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, কলকাতায় ভোট পরবর্তী অবস্থা নিয়ে দলীয় বৈঠক ছিল শুভেন্দু জানতেন। তবে দিল্লি কেন কেন গিয়েছেন জানি না। শুভেন্দু বা দিল্লির নেতারা তা বলতে পারবেন। জরুরি দরকারে হয়তো গিয়েছে। এতেই দিলীপ-শুভেন্দু ফারাক যেন উজ্জ্বল হয়েছে।
আরও পড়ুন- Abhishek Banerjee’s Challenge ‘আগামী ২০ বছর মন্ত্রিত্ব চাই না’, খোলা চ্যালেঞ্জ অভিষেকের
ভোটে পরাজয়, নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগদানকারীদের অনেকের ফের তৃণমূলে ফেরার আবেদন, ত্রিপল চুরির অভিযোগের পর দলের আদি কর্মীরা শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অন্যদিকে আসানসোল, হুগলিতে বিজেপি কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন স্বয়ং রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। দলে যে কোন্দল রয়েছে তা স্পষ্ট। ফলে দলকে একত্রিত করে কোন পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বিরোধী দলনেতারকে দু'দিনের দিল্লির বৈঠকে তা নিয়েও পরামর্শ দিতে পারেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন