কলকাতা হাইকোর্ট মুকুল রায়ের গ্রেফতারি পরোয়ানা খারিজ করে দিয়েছে। স্বভাবতই এই রায়ে খুশি 'চাণক্য'। তবে, এদিনের রায়ের পরেই একদা মমতার প্রধান সৈনিক মমতার বিরুদ্ধে সরব হন। তৃণমূলে থাকাকালীন 'শত্রু' শিবিরের প্রধান মুখ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নাম করেই নিজের প্রাক্তন দলনেত্রীকে এদিন চরম বিঁধলেন মুকুল। রায় ঘোষণা হতেই বুধবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে মুকুল বলেন, "বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দয়া করেছিলেন বলে আজ সংসদীয় রাজনীতিতে রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যেভাবে বিধানসভায় ভাঙচুর চালিয়েছেন, তাতে আর সংসদীয় রাজনীতিতে তাঁর থাকারই কথা নয়। আর এখন প্রতিনিয়ত তিনি আমাকে হেনস্থা করতে চাইছেন। মূলত আইপিএস জ্ঞানবন্ত সিংকে দিয়ে বিজেপি নেতৃত্বকে জব্দ করতে তৎপর হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।"
সম্প্রতি নানা কারণে যথেষ্ট চাপে রয়েছেন মুকুল রায়। বড়বাজারের একটি প্রতারণা মামলায় তিনি সাক্ষ্য দিতে না যাওয়ায় ব্যাঙ্কশাল আদালতে আপিল করেছিল রাজ্য। ওই আবেদনের ভিত্তিতে ব্য়াঙ্কশাল আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। সেই আদেশই এদিন খারিজ হয়ে যায় কলকাতা হাইকোর্টে। এরপরই ক্ষুব্ধ মুকুল বলেন, রাজ্য সরকারের এসব কাজকর্মের পিছনে তিনি ষড়যন্ত্র দেখতে পাচ্ছেন। এই ষড়যন্ত্রে আইপিএস জ্ঞানবন্ত সিংকে কাজে লাগানো হচ্ছে বলেও তোপ দাগেন তৃণমূলের একদা সেকেন্ড-ইন-কমান্ড।
মুকুল রায়ের দাবি, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনাদেশে মানুষের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। এখন ওঁর মন্ত্রণাদাতা কে আছেন জানি না। তাঁরা হয়ত পরামর্শ দিয়েছেন যে মুকুল রায়ের মতো লোকজনকে 'ডিস্টার্ব' করতে হবে। 'ইনসাফ চাই' (রিজওয়ানুরকাণ্ড) লড়াইয়ে মূল অভিযুক্ত জ্ঞানবন্ত সিংকে তিনি নিয়ে এসেছেন বিরোধীদের কীভাবে জব্দ করা যায়, সে জন্য। লক্ষ্য একটাই, শুধু ভারতীয় জনতা পার্টির সদস্যদের গ্রেফতার ও হেনস্থা করা।" মুকুলবাবুর আরও দাবি, তাঁকে নানাভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে এবং তিনি জানেন যে আগামী দিনে আরও করা হবে।
কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পর প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে এদিন মুকুল রায় বিধানসভা ভাঙচুরের প্রসঙ্গ তোলেন। মুকুল রায়ের বক্তব্য, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দয়া করেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তা না হলে যে পদ্ধতিতে মমতা বিধানসভা ভাঙচুর করেছিলেন, সেই বিধানসভা ভাঙচুর করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংসদীয় গণতন্ত্রে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকতো না। এটা সম্ভব হয়েছে একমাত্র বুদ্ধদেববাবুর জন্যই।"
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর বর্তমানে বসবাসের ঠিকানা দিল্লি। আপনার এই ঠিকানা নিয়েও তো তৃণমূলনেত্রী কটাক্ষ করে থাকেন। কী বলবেন? তাঁর জবাব, "এটা তো হতেই পারে। আমি তো কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে কাজ করি। আমার বাসস্থান দিল্লি হোক বা রাজস্থান হোক বা পাঞ্জাব হোক, এটা তো ফ্যাক্টর নয়। আমাকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যেখানে কাজ করতে পাঠাবে, সেখানেই যেতে হবে।"
রাজনীতিতে বহিরগাত প্রশ্ন প্রায়ই সামনে চলে আসে। এ প্রসঙ্গে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির এই সদস্য বলেন, "উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ভারতবর্ষে থাকেন, উনি চেন্নাই গিয়েছেন, উনি কি বহিরাগত? এটা একটা বিভাজনের রাজনীতি। একসময় ধর্মীয় বিভাজন করেছেন। এখন আলাদা বিভাজন করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনও বিভাজনই কাজ করবে না। বাংলার জনাদেশ দেওয়ালের লিখনে পরিষ্কার। পশ্চিমবাংলায় তিনি আর ক্ষমতায় থাকছেন না।" এখানেই না থেমে মুকুল আরও বলেন, "রাজ্য সরকার যেভাবে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, তাতে আমি আইনি পদক্ষেপ যা নেওয়ার নিচ্ছি। তবে পাশাপাশি আমার রাজনৈতিক লড়াইও জারি থাকবে।"