‘‘সামনের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ৮০টির বেশি আসনে কোনও ভাবেই জয় পাবে না। ২৯৪ আসনের মধ্যে বিজেপি কমপক্ষে ২০০টি আসন পাবেই’’, বেসরকারি এজেন্সি দিয়ে সমীক্ষা করিয়ে এমন তথ্য উঠে এসেছে বলে চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে তৃণমূলের একদা প্রধান সেনাপতি বলেন, ‘‘বিধানসভা নির্বাচন ২০২১ সালে হোক বা তার আগে, এই ফলই হবে’’। বস্তুত, একদা তৃণমূলের হয়ে যাবতীয় নির্বাচনী কৌশল রচনাকারী এদিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন তৃণমূলের বর্তমান কর্পোরেট ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোরকে।
আরও পড়ুন: আজই বিজেপিতে শোভন চট্টোপাধ্যায়?
সোমবার মুকুল রায় জানান, প্রশান্ত কিশোর তৃণমূলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর তিনি ব্যক্তিগতভাবে একটি বেসরকারি এজেন্সিকে দিয়ে রাজ্যব্যাপী সমীক্ষা করিয়েছেন। মমতা একদা ঘনিষ্ঠের দাবি, ‘‘ওই বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, তৃণমূল কংগ্রেস কোনওভাবেই রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। নির্বাচন ২০২১ সালে নির্ধারিত সময় হোক বা তার আগে যে কোনও সময়েই হোক না কেন এই সরকার কোনওভাবেই ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না’’।
আরও পড়ুন: ‘সরকারি কাজে নাক গলাচ্ছেন প্রশান্ত কিশোর’, অভিযোগ বিজেপির
ঠিক কী জানিয়েছে মুকুল রায়ের ওই সমীক্ষা রিপোর্ট? বিজেপির এই কেন্দ্রীয় নেতার বক্তব্য, ‘‘ওই সংস্থা রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে সমীক্ষা করেছে। সেই সমীক্ষায় উঠে এসেছে, পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি একাই ২০০-র বেশি আসনে জয়লাভ করবে। পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ৮০টির কম হবে। বাকি আসন অন্যরা পেতে পারে’’। ‘‘মুকুলের এসব গল্পকথা শুনে কাজ নেই’’, এমন মন্তব্য করে হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেতা তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। উল্লেখ্য, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে ২২টি আসনে জিতেছে তৃণমূল। আর ১৮টি সংসদ নিয়ে তৃণমূলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেছে বিরোধী বিজেপি । কংগ্রেস দু'টি আসন পেয়েছে। বামেরা কোনও আসনেই জয়ের মুখ দেখেনি।
আরও পড়ুন: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দেশদ্রোহী’, বিস্ফোরক মুকুল
সদ্য লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের এমন খারাপ ফলে চিন্তিত তৃণমূল সুপ্রিমো গড় রক্ষার তাগিদে ডেকে নিয়ে আসেন ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোরকে। প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠকও করেন মমতা। তিনি ও তাঁর সংস্থা আইপ্যাক তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে এ রাজ্যে ইতিমধ্যেই কাজও করতে শুরু করেছেন। পেশাদারি সংস্থাটি নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে চলেছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। তৃণমূল-আইপ্যাক চুক্তির কিছুদিন পরপরই জনসংযোগ বৃদ্ধি ও দলের ভাবমূর্তি ফেরাতে একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে মমতার দল। এগুলির অন্যতম ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি ইতিমধ্যে শুরু করে চমক দিয়েছে তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের স্থির বিশ্বাস, এই উদ্যোগের নেপথ্যে রয়েছে প্রশান্ত কিশোরের 'কর্পোরেট মার্কেটিং' মস্তিষ্ক।
আরও পড়ুন: তৃণমূলে পিকের ‘কর্পোরেট’ দাওয়াই, ভাল-মন্দের দায় নিতে নারাজ নেতারা
জানা যাচ্ছে, প্রশান্ত কিশোর এ রাজ্যে আসার পর রাজনৈতিক মহলে জোরদার আলোচনা শুরু হয়। আর তখনই মুকুল রায় সিদ্ধান্ত নেন সমীক্ষা করানোর। মুকুল রায়ের বক্তব্য অনুযায়ী, এই প্রশান্ত কিশোর আসার পর তিনি ওই বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে দু’মাস ধরে সমীক্ষা করিয়েছেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরি করেছে ওই সংস্থা। আর এই সমীক্ষার রিপোর্ট একপ্রকার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে মমতা-পিকের বিরুদ্ধে।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা করায়। সেই ধারাতে ভরসা রেখেই ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের অনেক আগেই ভোটারদের মন জানতে বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা করিয়েছেন চাণক্য মুকুল। তৃণমূলের একদা অঘোষিত 'দু'নম্বর' বলেন, ‘‘এ রাজ্যে তৃণমূলের ক্ষমতায় ফিরে আসার আর কোনও সম্ভাবনা নেই। তাতে প্রশান্ত কিশোর আসুক বা তৃণমূল যেমন খুশি কর্মসূচি নিক, কোনও ভাবেই রাজ্যে ক্ষমতা ধরে রাখাতে পারবে না’’। তবে এই রিপোর্ট বা মুকুলের মাস্টার প্ল্যান জয়ী হবে নাকি বাংলার মানুষ ফের রাখবেন মমতা ম্যাজিকেই, তা বলবে আগামী।