Mukul Roy Chanakya: বাংলার রাজনীতির 'চাণক্য' মুকুল রায়, সত্যি কী তাই?

বাংলার রাজনীতির অঙ্গনে এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।

বাংলার রাজনীতির অঙ্গনে এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Mukul Ro chanakya Bengal politics

শুক্রবারই ফুল বদল করেছেন মুকুল রায়।

রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে ব্যাপক দলবদলের খেলা শুরু হয়েছিল। নির্বাচনের ফল ঘোষণার এক মাস পরই ঠিক একই খেলা শুরু হয়েছে। ফুলটা শুধু বদলে গিয়েছে। যাঁকে বাংলার রাজনীতির 'চাণক্য' বলে সম্বোধন করা হত, সেই মুকুল রায় ফিরে গেলেন ঘাসফুল শিবিরে। তৃণমূল কংগ্রেসের চোখধাঁধানো নির্বাচনী সাফল্যের পরও মুকুলের এই যোগদান নিয়ে তাঁর 'চাণক্য' তকমায় কি দাগ লেগে গেল? বাংলার রাজনীতির অঙ্গনে এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে।

Advertisment

প্রায় ৬ বছর আগে সারদা মামলায় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরে তদন্তকারীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের তৎকালীন সেকেন্ড-ইন-কমান্ড। সেদিন সিজিও দফতর ও স্থানীয় সুইমিংপুল এলাকায় ব্যাপক ভিড় জমিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। সারদা মামলায় তখন যে গতিতে তদন্ত চলছিল তাতে অনেকেই ভেবেছিলেন গ্রেফতার হতে পারেন মুকুল। তবে তৃণমূল নেতা মদন মিত্রসহ দলের একাধিক নেতা-সাংসদ চিটফান্ড তদন্তে গ্রেফতার হলেও মুকুল রায়কে ছুঁতে পারেনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। তিনি বারেই বারেই বলতেন তদন্তে সিবিআইকে সহযোগিতা করবেন। মূলত দলের সঙ্গে এই নিয়েই বিরোধ হয়। বিজেপিতে যোগ দিতেই তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব দাবি করতে থাকে সিবিআইয়ের হাত থেকে বাঁচতেই দল ছেড়েছেন মুকুল। গদ্দার, মীরজাফর….। কান দেননি তিনি।

আরও পড়ুন- Explained: মুকুলের ঘরওয়াপসির ঘোরতর কারণগুলি কী?

মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেও দিলীপ ঘোষদের মেনে নিতে যে অসুবিধা হচ্ছিল তা তাঁদের বক্তব্যেই বুঝিয়ে দিতেন। একাধিকবার ঘনিষ্ঠ মহলে প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দাবি করেছেন, ১০৭ জন তৃণমূল বিধায়কের তলিকা তিনি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে দিয়েছেন। দল অনুমতি দিলেই তাঁরা গেরুয়া শিবিরে যোগ দেবেন। কিন্তু জনাকয়েক বিধায়ক ছাড়া কেউই তৃণমূল ছাড়েননি। এবারও নাকি তাঁর হাত ধরে বেশ কয়েকজন বিজেপি বিধায়ক শিবির বদল করতে পারেন। সময়ই তার জবাব দেবে।

Advertisment

২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এরাজ্য থেকে ১৮টি আসনে জয় পায়। এক্ষেত্রেও কেউ কেউ মুকুল রায়ের অবদান দেখতে পান। যদিও বিজেপির একটা বড় অংশের দাবি, মোদী হাওয়ায় ওই ফল হয়েছিল। অভিজ্ঞমহলের মতে, যখনই মনে হয়েছে নানা উপায়ে বিজেপি নেতৃত্বের ওপর নানা উপায়ে চাপ সৃষ্টি করেছেন মুকুল রায়। বীরভূমে সৎসঙ্গ মন্দিরে চলে গিয়েছেন, সেখানে তৃণমূল নেতার সঙ্গে দেখা হয়েছে। গতবছর করোনা শুরুর সময় মমতা সরকারের কর্মকান্ডে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মুকুলবাবু। টনক নড়েছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। তাছাড়া রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে সংঘাত বাধলেই তাঁর সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়াতেন বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। কৈলাশ একাধিকবার মুকুলকে 'চানক্য' বলে সম্বোধন করেছেন তাঁকে। ঢালাও প্রশংসা করতেন। কৈলাশ-মুকুলের জোটবন্ধন নিয়েও রাজ্য় বিজেপির অন্দরে নানা চর্চা লেগেই থাকতো।

আরও পড়ুন- দল পাল্টেছেন ‘দাদা’, পদ্মবনে ‘বেসুরো’ মুকুল অনুগামীরা

এবারের নির্বাচনে আশাতীত ফলের পরও কেন সরকার গঠনের দেড় মাসের মধ্যে মুকুল রায়কে দলে নিল তৃণমূল কংগ্রেস? এটাও লাখ টাকার প্রশ্ন। শুধুই কী বিজেপিতে থাকতে না পারার পরিস্থিতি। তবে তৃণমূল কংগ্রেস সাদরে পিতা-পুত্রকে গ্রহণ করল কেন? রাজনৈতিক মহলের মতে, এটাও মনে রাখতে হবে, এবার বীজপুর বিধানসভায় হেরে গিয়েছেন মুকুলপুত্র শুভ্রাংশু। নিজে শুধু কৃষ্ণনগরের বিধায়ক।

শুধুই কী ঘরের ছেলে ঘরে ফিরল! ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের সময় দমদম নাগেরবাজারে তিনি এক সিপিএম নেতার সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন অভিযোগ তুলে স্থানীয় তৃণমূলীরা তাঁর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। সেই সাক্ষাৎ ব্যক্তিগত না রাজনৈতিক ছিল তা সব থেকে ভাল জানেন মুকুলবাবু। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করেছে সিপিএমের ভোট ট্রান্সফার হয়েছে বিজেপিতে। এবার তৃণমূল সার্বিক নির্বাচনী কৌশলে নাস্তানাবুদ করেছে বিজেপিকে। নন্দীগ্রামে মমতার সেই বক্তব্য় খুবই তাতপর্যপূর্ণ, "শুভেন্দুর থেকে মুকুল ভাল।" তবে মুকুলবাবু বাংলার রাজনীতির 'চাণক্য' কীনা, তা এখনও হ্য়া বা না বলার সময় আসেনি। উত্তর পেতে আরও অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

abhishek banerjee mukul roy modi amit shah bjp tmc Mamata Banerjee