গোয়ায় খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। এরইমধ্যে ত্রিপুরায় অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে। সেখানকার আদি তৃণমূলীরা বসে গিয়েছে। তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিজেপি বিধায়ক আশিস দাস ফেসবুক পোস্ট করে বোমা ফাটিয়েছেন। তিনি নেতৃত্বের প্রতি স্পষ্ট অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন।
কী লিখেছেন আশিস দাস? ধোঁকাবাজ নেতৃত্বের কারণে 'রাজ্যবাসী আর কত প্রতারণার স্বীকার হবেন? ধোঁকাবাজদের রুখতে প্রকৃত অর্থে রাজ্যবাসীর মুক্তির জন্য আরও কঠিন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি।' রাজ্যে পরিবর্তনের হাওয়া তুলতে তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিজেপি বিধায়ক কি নতুন দলে চরম অস্বস্তিতে আছেন? সোশাল মিডিয়ায় কেন এই বিদ্রোহ তা নিয়েই শোরগোল পড়েছে ত্রিপুরার রাজনৈতিক মহল।
আশিস দাস ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর থেকে উপেক্ষিত হয়ে চলেছি। দল কোনও দায়িত্ব দেয়নি। অপেক্ষা ও উপেক্ষা কোনওটাই অতিরিক্ত ভাল নয়। ধীরে ধীরে কঠিন সিদ্ধান্তে আসতে পারি। সেটাই জানান দিচ্ছি। যদি কিছু করে ভাল। নাহলে থাকার কোনও জায়গা নেই।
গোয়ায় হারের পর বাঙালি অধ্যুষিত ত্রিপুরায় দলের বিদ্রোহ শুধু আশিস দাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে এমন নয়। রাজ্যের সংখ্যালঘু নেতা জাহিরুদ্দিন শেখ দীর্ঘ দিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত। ছিলেন দলের সংখ্যালঘু মোর্চার নেতৃত্বে। তিনিও দলের ত্রিপুরা নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি তৃণমূলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন। জাহিরুদ্দিন বলেন, 'কয়েকমাস আগেও ত্রিপুরায় তৃণমূলের সম্ভাবনা ছিল। সেই পরিস্থিতি বদলে যাছে। এতদিনেও নতুন কমিটি ঘোষণা হল না। ওই ঘোষণার অপেক্ষায় আছি।
ত্রিপুরা তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, ত্রিপুরায় শুরুটা ভালই হয়েছিল। কিন্তু পুরভোট পরবর্তী সময়ে দলীয় নেতৃত্বের কার্যকলাপে সেই উৎসাহে ভাঁটা পড়ে। আস্তাবল মাঠে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভা করার কথা ছিল গত ডিসেম্বরে, তা হয়নি। দলের এই অংশের ক্ষোভের বড় কারণ হিসাবে তাঁরা বলছেন, কলকাতার অধিকাংশ নেতা এসে হোটেলে থেকে, খাওয়া-দাওয়া করে সেখানেই মিটিং করে ফিরে যাচ্ছেন। সংগঠন তলানিতে থেকে যাচ্ছে।
তৃণমূল কংগ্রেস আস্তাবল মাঠে সভা না করলেও সিপিএম বড় সভা করেছে। নবগঠিত আদিবাসী সংগঠন ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে ত্রিপুরায়। এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে বিজেপির বিরোধিতায় দল কোনও ফায়দা নিতে পারছে না বলে তৃণমূল কংগ্রেসের একটা বড় অংশ মনে করছে।
এদিকে ত্রিপুরা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি আশিস লাল সিং দীর্ঘ দিন চিকিৎসার জন্য দিল্লিতে রয়েছেন। রাজনৈতিক কর্মসূচিও সেভাবে হচ্ছে না বলে মনে করছেন আদি তৃণমূলীরা। আশিস দাসের কথায়, 'সিগন্যাল দিচ্ছি। দলকে জানান দিলাম। বোঝানোর চেষ্টা করছি। এবার আরও ধ্রুব সত্য সামনে নিয়ে আসব।'
মোদ্দা কথা ভিন রাজ্যে তৃণমূলের বিস্তার গোয়া বিধানসভা ভোটে ধাক্কা খেয়েছে। ২০২৪-এ ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন। দলের রাজ্য দফতর না হওয়ায়ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন কেউ কেউ। রাজনৈতিক মহলের মতে, সম্ভাবনাময় বাঙালি অধ্যুষিত রাজ্যেও দলীয় সংগঠনে বিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। আদৌ সংগঠন ধরে রাখতে পারবে কি না তা নিয়ে ত্রিপুরা তৃণমূলেই প্রশ্ন উঠেছে।