যতই ২০১৪ থেকে গত ৬ বছরে শক্তি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে, ততই ক্ষমতার অলিন্দে একা হয়ে যাচ্ছে বিজেপি। গত দুবছরে এক এক করে বেশ কিছু পুরনো সঙ্গীকে হারিয়েছে গেরুয়া শিবির। সাম্প্রতিকতম সঙ্গীবিচ্ছেদ হল কেরালা কংগ্রেস (থমাস)। এনডিএ জোট ছেড়েছে পিসি থমাসের দল কেরালা কংগ্রেস। কেরালায় বিজেপির একমাত্র শরিক দল সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। বড় ভাইয়ের মতো কোথায় আঞ্চলিক দলগুলিকে সঙ্গে নিয়ে চলবে বিজেপি তা না, বরং একগুয়েমির জন্য এক এক করে সঙ্গী হারাচ্ছে পদ্মশিবির। জোটধর্ম মানছে না বিজেপি, এই অভিযোগেই এনডিএ ছাড়ছে প্রত্যেকে।
গত একবছরের মধ্যে আদর্শগত ভাবে সবচেয়ে কাছের এবং পুরনো দুই জোটসঙ্গী শিবসেনা এবং শিরোমণি অকালি দল বিজেপির সঙ্গত্যাগ করেছে। বছর দুয়েক আগে দক্ষিণে আরও এক পুরনো জোটসঙ্গী চন্দ্রবাবু নায়ডুর দল তেলুগু দেশম পার্টি এবং ২০১৯ সালে অখিল ঝাড়খণ্ড ছাত্র সংসদও বিজেপির সঙ্গত্যাগ করে। নির্বাচনের মুখে বিহারে রুষ্ট হয়ে এনডিএ শিবির ছাড়ে লোক জনশক্তি পার্টি। সেই পথে হাঁটে উপেন্দ্র কুশওয়াহার দল রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টি এবং ভারতীয় সমাজ পার্টি। কয়েকদিন আগে কলকাতায় এসে মোদী-শাহকে মিথ্যাবাদী বলে এনডিএ-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রতিষ্ঠাতা বিমল গুরুং। কাশ্মীরে ৩৭০ বিলোপের আগে পিডিপির সঙ্গেও জোট ভেঙে যায় বিজেপির।
আরও পড়ুন উপত্যকায় উদ্বেগে বিজেপি, হিল কাউন্সিল দখলে এলেও আসন কমল অনেকটাই
যখন শিবসেনার মতো পুরনো সঙ্গী এনডিএ ছাড়ে তখনই অন্য জোটসঙ্গীরা বাজপেয়ী-আডবানী জমানায় বিজেপির শরিকদের সম্মান দেওয়ার স্মৃতি উস্কে দেয়। যদিও এখনও জজন খানেক দল এনডিএ জোটে রয়েছে। কিন্তু সেই শরিকদের মধ্যে জেডিইউ এবং ডিএমকে ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনও দল নেই। এদিকে, রামবিলাস পাসওয়ানের মৃত্যু এবং অকালি দলের হরসিমরত কৌর বাদল পদত্যাগ করায় মোদী সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় শরিক দল থেকে আর কোনও পূর্ণ মন্ত্রী নেই।
এবার দেখে নেওয়া যাক কোন শরিক দল কী কারণে এনডিএ শিবির ছেড়েছে-
তেলুগু দেশম পার্টি- ২০১৪ সালে এনডিএ ক্ষমতায় ফেরার পর চার বছর পর প্রথম দল হিসাবে টিডিপি জোট ছাড়ে। তার অন্যতম কারণ অন্ধ্রপ্রদেশকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা না দেওয়ায়। এরপর দুই মন্ত্রী পি অশোক গজপতি রাজু এবং ওয়াই এস চৌদারি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেন। বিজেপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ আনেন অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু।
শিবসেনা- গত বছর বিধানসভা নির্বাচনের পর মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে সংঘাত চরমে পৌঁছায় বিজেপি এবং উদ্ধব ঠাকরের দলের। জোট করে নির্বাচনে লড়লেও ফলাফল বেরতেই বেঁকে বসে শিবসেনা। এরপর কংগ্রেস-এনসিপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে মহারাষ্ট্রে সরকার গড়েন উদ্ধব।
আরও পড়ুন বিজেপির আদর্শ, সংস্কৃতি বলে কিছুই নেই, জিএসটি নিয়ে মোদীকে বিঁধলেন উদ্ধব
শিরোমণি অকালি দল- অন্যতম পুরনো জোটসঙ্গী অকালি দল কেন্দ্রের কৃষি আইন নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন হরসিমরত কৌর বাদল। এনডিএ জোটের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অকালি দলের সভাপতি সুখবীর সিং বাদল কটাক্ষ করেন, নামেই শুধু জোট, গত ৬ বছরে প্রধনামন্ত্রী কোনও বৈঠকই ডাকেননি এনডিএ-র। বাজপেয়ী জমানায় এমন ছিল না।
রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টি- ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা আরএলএসপির প্রধান উপেন্দ্র কুশওয়াহা মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেন। বিহারে লোকসভা নির্বাচনে আসন রফা নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। মোদীর বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলে চিঠি লেখেন। বিহারকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া নিয়েও বিজেপি-আরএসএসের এজেন্ডাকে মিথ্যাচার বলেন কুশওয়াহা।
লোক জনশক্তি পার্টি- সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হল চিরাগ পাসওয়ানের দল। বিহারে নির্বাচনের মুখে এনডিএ শিবিরের আসন রফা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে জোট ছাড়লেও কেন্দ্রে জোটসঙ্গী হিসাবেই থাকতে চান চিরাগ পাসওয়ান। তার বড় কারণ, আরেক জোটসঙ্গী জেডিইউ এবং নীতীশ কুমার। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর বিহারে বিজেপি-এলজেপি জোট সরকার দেখতে চান বলে জানিয়ে রেখেছেন প্রয়াত রামবিলাস পাসওয়ানের ছেলে।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন