তৃণমূল কংগ্রেসের নতুন জাতীয় কর্মসমিতিতে ত্রিপুরার কোনও প্রতিনিধি নেই। তবে উত্তরপ্রদেশ থেকেও প্রতিনিধি রয়েছে। এদিকে ঢাকঢোল পিটিয়ে ত্রিপুরার বিজেপি বিধায়ক আশিস দাস যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসে। মাথা ন্যাড়া করে প্রায়শ্চিত্ত সেরে রাজনৈতিক মহলে সারা ফেলে দিয়েছিলেন ওই বিজেপি বিধায়ক। কিন্তু সেই আশিস দাসই নাকি এখন দলে ব্রাত্য। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার কাছে বিষ্ফোরক মন্তব্য় করেছেন ত্রিপুরার ওই বিজেপি বিধায়ক।
সম্প্রতি ত্রিপুরা বিজেপি ছেড়েছেন দুই বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন ও আশিষ সাহা। এই দল ছাড়া নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপিকে বিঁধেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় ওই দুই বিজেপি বিধায়ক দিল্লিতে গিয়ে কংগ্রেসে যোগ দেন। গাড়ির স্টিয়ারিং ঘুরে যায় হাত শিবিরের দিকে। সূত্রের খবর, বিজেপি বিরোধী কয়েকজন বিধায়ক জনৈক ত্রিপুরার তৃণমূল নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। এখন সেই বিধায়করাই তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তাঁদের দলে যোগ দেওয়ার জন্য। এদিকে আশিষ দাসের বক্তব্য, 'একমাত্র তাঁকে গুরুত্ব দিলেই ত্রিপুরায় ক্ষমতায় আসতে পারে তৃণমূল।' তাঁকে দল গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
৩১ অক্টোবর তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন বিজেপি বিধায়ক আশিস দাস। তার আগে কলকাতায় এসে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন তিনি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে আশিস দাস বলেন, 'এখনও যদি তৃণমূল কংগ্রেস ঝাঁপায় তাহলে ত্রিপুরায় সরকার গঠন করা সম্ভব। আমাকে যদি সামনে রাখে, ত্রিপুরায় সরকার গড়া সম্ভব। যদি ত্রিপুরায় দল ক্ষমতায় না আসে তার প্রভাব পড়বে পশ্চিমবঙ্গে। এখানে খারাপ ফল করলে তার খেসারত দিতে হবে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলকে। গোয়ার থেকে ত্রিপুরা বেশি প্রেস্টিজের। তারপর ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনও আছে। এটা মনে রাখতে হবে।'
দলবদলের হাওয়ায় ত্রিপুরার তৃণমূল নেতাদের নামও ভাসছে। ইতিমধ্যে বিজেপি থেকে কয়েকজন বিধায়ক দল ছেড়েছেন। গোয়াতে তৃণমূলে যোগ দিয়েও অনেকে পুরনো কংগ্রেসে ফিরে গিয়েছেন। ত্রিপুরায় যেসব বিধায়ক ঘাসফুলে ভিড়বেন জল্পনা ছলছিল তাঁরা গেরুয়া বসন ত্যাগ করে হাত শিবির শক্ত করতে ময়দানে নেমেছেন। ত্রিপুরা তৃণমূলের পুরনো অনেক নেতাকেই রাজনীতির ময়দানে দেখা যাচ্ছে না। দলের নেতৃত্বের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করলেও আশিস দাস স্পষ্ট জানালেন, দল এখনও ত্যাগ করবেন না। আশিসবাবু বলেন, 'আমি এত তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত বদল করব না। আমি বিজেপি দিয়ে রাজনীতি শুরু করেছি। আমাকে সামনে রেখে মতামত নিয়ে কাজ করলে তৃণমূল সরকার গড়বে। আমাকে দায়িত্ব না দিলে টিপস দেব কেন?' তাঁর কথায়, দলীয় কর্মীরা ত্রিপুরায় আশাহত তো হবে। দলে থেকে দায়িত্ব না পেয়ে নানা সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে চাইছেন আশিস দাস। তিনি বলেন, 'আমি ব্যক্তিগত ভাবে সামাজিক কাজকর্ম করার চেষ্টা করছি। এসসি, এসটি এবং ওবিসিদের নিয়ে কাজ করছি। আলাদা প্লাটফর্ম করছি। দল দায়িত্ব না দিলে অন্য ভাবে কাজ করতে তো হবে।'
বাংলায় বিপুল আসন পেয়ে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর পরশি রাজ্যে সংগঠন বাড়াতে তৎপর হয় তৃণমূল কংগ্রেস। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতা প্রয়াত সন্তোষ মোহন দেবের মেয়ে সুস্মিতা দেবকে ত্রিপুরার দায়িত্ব দেয় তৃণমূল। পরবর্তীতে তাঁকে রাজ্যসভার সদস্যও করে ঘাসফুল শিবির। প্রাক্তন বিধায়ক সুবল ভৌমিক যোগ দেয় তৃণমূল কংগ্রেসে। ত্রিপুরায় বিস্তর হম্বিতম্বি করে পুরসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস মাত্র একটি আসনে জয় পায়। তবে আশিসবাবুর কথায়, 'ত্রিপুরার মানুষ সেনসিটিভ ও সেন্টিমেন্টাল। ৮০ শতাংশ মানুষ টিএমসি হয়ে গিয়েছিল। বিজেপির বিকল্প শক্তি হিসাবে তৃণমূলকে ধরে নিয়েছিল। কিন্তু ত্রিপুরার মানুষের পালস বুঝতে পারল না দল। এদিকে মানুষ বিজেপি থেকে মুক্তি চাইছে। বিজেপি জোট, কংগ্রেস, সিপিএম বাদ দিয়ে এখানে তৃতীয় অপশন হবে তৃণমূল।'
কেন তাঁকে অবহেলা করা হচ্ছে? এই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন আশিস দাস। তাঁর আক্ষেপ, 'আমি গ্রাম থেকে এসেছি। বিজেপিতে থেকেও দুবছরের মধ্যে প্রতিবাদী মুখ হয়েছি। সারা রাজ্যের মানুষ আমাকে চেনে। আমার কোনও কালিমা নেই। আমাকে দায়িত্ব দিলে আমি আগরতলায় থাকব। সেখানে থাকলে অল্পদিনে রাজনীতিতে এসে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে গেলে বিভিন্ন নেতৃত্বের কেরিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে। তাই সমস্ত পরিকল্পনা করে আমাকে আটকে রেখেছে।' আশিসবাবুর দাবি, 'ত্রিপুরায় ভারতীয় জনতা পার্টি সরকার গড়ার পথ আমি দেখিয়েছি। ২০১৫-তে উপনির্বাচেন ২৫ শতাংশ ভোট পেয়েছি। সেই উপনির্বাচন পরাজিত হলেও তখন থেকেই বিজেপির জয়ের শুরু ত্রিপুরায়। অথচ তৃণমূলে আমাকেই গুরুত্বহীন করে রাখা হয়েছে।'