ভোট-রাজনীতিতে কংগ্রেসের ক্ষয় অব্যাহত। এককভাবে ৩টি রাজ্য থেকে দেশের মাত্র ২টি রাজ্যে এখন কংগ্রেস শাসন ক্ষমতায় (ছত্তিগঢ় ও রাজস্থান)। ২০১৪ সালে মোদী সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার সময় ৯টি রাজ্যে হাতশিবিরের দখলে ছিল। কিন্তু, ক্রমেই দলের হার হয়েছে। বহু নেতা, কর্মী দল ছেড়েছেন। যা দেখে হতাশ দলে 'বিদ্রোহী'গোষ্ঠীর অন্যতম গুলাম নবী আজাদ। বললেন, 'দলের হাল দেখে আমার হৃদয়েও রক্ত ঝরছে।' পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফলে ধরাশায়ী দেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দলটি। যার ফলে নেতৃত্ব ও দলীয় কাঠামো বদলের দাবিতে কংগ্রেসের অন্দরে বিস্ফোরণের অপেক্ষা বলেই মনে করা হচ্ছে।
কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে দল কোন পথে এগিয়ে যাবে তা নির্ণয়ে শীঘ্রই দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকা হবে। যা নিয়ে অধিকাংশ কংগ্রেস নেতাই সন্দিহান। আলোচনার বদলে বাস্তবে যা করলে দলের ক্ষয় রোধ হয় তা করা হচ্ছে না বলে দাবি তাঁদের।
কংগ্রেস কার্যকরী কমিটির নেতা গুলাম নবী আজাদের মতে, 'আমি হতবাক, রাজ্যের পর রাজ্যে দলের হার দেখে আমার হৃদয় দিয়ে রক্ত ঝরছে। আমরা আমাদের সম্পূর্ণ জীবনটাই দলের কাজে নিয়োজিত করেছি। আমি নিশ্চিত যে পার্টির নেতৃত্ব সমস্ত দুর্বলতা এবং ত্রুটিগুলি বিবেচনা করবে যা আমার সহকর্মীরা এবং আমি বেশ কিছুদিন ধরে কথা বলে আসছিলাম।'
আরেক 'বিক্ষুব্ধ' কংগ্রেস নেতা শশী থারুরতো বৃহস্পতিবারই তোপ দেগেছেন। উস্কে দিয়েছেন দলের নেতৃত্ব বদলের বিষয়টি। টুইটে তাঁর দাবি, 'আমরা যারা কংগ্রেসের নীতি-আদর্শে বিশ্বাস করি তাঁরা সকলেই সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখে হতাশ। কংগ্রেস ভারতের জন্য যা ভাবছে এবং যে সদর্থক নীতির কথা তুলে ধরছে তা জোর দিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সময় এসেছে। নেতৃত্বের সংস্কারসাধনের মাধ্যমে জাতিকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। এতে সফলতা এলে পরিবর্তন অনিবার্য।হলে পরিবর্তন অনিবার্য।'
সূত্রের খবর, ভোটে বিপর্যয়ের পর হাতগুটিয়ে বসে নেই কংগ্রেসের 'বিক্ষুব্ধ'রা নেতারা। আজই তাঁরা আজাদের বাড়িতে আলোচনায় বসতে পারেন।
আরও পড়ুন- ‘উত্তরপ্রদেশে EVM-এর ফরেন্সিক তদন্ত হোক’, দাবি মমতার, ফের বিরোধী জোটেই আস্থা
এই পরাজয়ের পর দলকে সংঘবদ্ধ রাখা ও দলত্যাগ রোধই নেতৃত্বের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ। এক তরুণ কংগ্রেস নেতার দাবি, 'বিজেপি হিন্দু-মুসলিম কার্ড বা মেরুকরণ খেলে জিতেছে, এসব নিয়ে আর তর্ক-বিতর্ক চলতে পারে না। এভাবে ভাবতে থাকলে আমরা নিজেদেরই ক্ষতি করছি। পাঞ্জাবে মুসলমান কোথায়? উত্তরাখণ্ড, মণিপুর বা গোয়াতেও কোথায় মুসলিমরা? আসলে আমাদের নেতৃত্বের বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব রয়েছে। আমাদের সেই সত্যকে মেনে নিতে হবে। কিন্তু আমাদের দলীয় কাঠামো বারে বারে সেই ভাবনা ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।'
লখিমপুর খেরি, হাতরাসে রাহুল গান্ধী গিয়েছিলেন। সেখানে এতকিছুর পরও কংগ্রেস দাগ কাটতে ব্যর্থ।
জাত-পাতের রাজনীতি এড়িয়ে উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের উপর বিশেষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করা হয়েছিল। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী উত্তরপ্রদেশে ২০৯টি ব়্যালি করেছে। কিন্তু তাতেও লাভ হল না। আসলে নেতারা ভোটারদের ভরসা দিতে ব্যর্থ।
আপ পাঞ্জাবে জিতেছে। এবার হিমাচল প্রদেশ, গুজরাটেও ঝাঁপাবে। একাধিক কংগ্রেস বিধায়ক, নেতা দল ছাড়তে পারেন। নেতৃত্ব এই চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে অবহিত কিনা তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দর থেকে।
মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বান দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, 'হতাশজনক বিষয়। আমাদের সিরিয়াসলি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কোনো ইচ্ছা ছিল না। আমাদের উচিত ছিল নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহর মতো পূর্ণ শক্তি নিয়ে লড়াই করা। নেতৃত্ব পরিবর্তনে পাঞ্জাবে সংগঠনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আমাদের মত প্রবীণদের ইনিংস প্রায় শেষের পথে। তবে কংগ্রেসে তরুণদের ভবিষ্যত ঝুঁকির মুখে।'
কংগ্রেসের বিপর্যয়ে যখন বিতর্ক উঠে দলের অন্দর থেকেই, তখন পরাজয় স্বীকার করে রাহুল গান্ধী টুইট লিখেছিলেন, 'জনগণের রায়কে বিনীতভাবে গ্রহণ করুন। যারা বিজয়ী হয়েছেন তাদের জন্য শুভ কামনা। সমস্ত কংগ্রেস কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং উৎসর্গের জন্য আমার কৃতজ্ঞতা। আমরা এর থেকে শিক্ষা নেব এবং ভারতের জনগণের স্বার্থে কাজ করে যাব।'
Read in English