Advertisment

কুর্সি কার, ঠিক করে দিচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার চোরাবালি

প্রার্থী কোন সম্প্রদায়ের, তার ভিত্তিতেই সমর্থন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
UP_ELECTION

সম্ভালে কংগ্রেসের নিদা আহমদের প্রচার চলছে।

ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতির কথা যতই চলুক, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কিন্তু, সাম্প্রদায়িকতা আর রাজনীতি এমনভাবে মিশে আছে, যে তাদের আলাদা করা কঠিন। যেমন, যে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে, তার অন্যতম উত্তরপ্রদেশের কথাই ধরা যাক। এখানে, মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় ঘুরলেই বোঝা যায়, সাম্প্রদায়িকতা ছাড়া রাজনীতির কথা ভাবা কঠিন।

Advertisment

যেমন সম্ভাল জেলা। মুসলিম অধ্যুষিত এই জেলায় চারটি বিধানসভা আসন। তার মধ্যে গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি জিতেছিল গান্নৌর এব চান্দৌসি। সমাজবাদী পার্টির দখলে ছিল আসমোলি এবং সম্ভাল শহর। এই চারটে কেন্দ্রের একটাই মিল। ভোটাররা এখানে কাকে সমর্থন করবেন, সবটাই ঠিক হয় সাম্প্রদায়িকতার মাপকাঠিতে।

তেমনই ছবি স্পষ্ট ধরা পড়ল সোমবার দুপুরে। সদ্য ফাগুন ধরেছে দেশে। শীতের ছোঁয়া তার মধ্যেই বারবার অনুভব করছেন দেশবাসী। বেলা গড়াতেই সম্ভালের মোতি মসজিদে জড় হতে শুরু করেছেন প্রার্থনাকারীরা। মোতি মসজিদ, সম্ভাল থেকে আসমোলি যাওয়ার রাস্তার ঠিক ওপরে। সকালের শীতের চাদর সরিয়ে রোদ একটু মিঠে লাগতেই এই মসজিদের পুরনো কাচকে সূর্যের আলো যেন স্নান করায়। সোমবারও অন্যথা হয়নি।

তবে, সোমবার সম্ভাল থেকে আসমোলি যাওয়ার রাস্তা অন্যদিনের তুলনায় বেশি ব্যস্ত দেখাল। কারণ, নির্বাচনী প্রচারের জন্য এই পথ দিয়ে ঘনঘন প্রার্থীদের বড় বড় কনভয় যাতায়াত করছে। তার মধ্যেই রাস্তার পাশ ধরে প্রার্থনাকারীরা আসছিলেন মসজিদে। তাদেরই অন্যতম বছর ৬০-এর মহম্মদ ফাহিম। মসজিদের পাশের গলিতেই বাড়ি। বহু নির্বাচনের সাক্ষী। বললেন, এখানে হাতেগোনা কয়েকটা হিন্দু পরিবার থাকে। বিজেপি প্রচারে কিন্তু, তাদের ওপরই জোর দেয়। পরিস্থিতি এমনই যে প্রার্থী যদি সাম্প্রদায়িক তাস খেলে, মুহূর্তে এক অংশের মানুষ তাঁর দিকে সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দেন।

এবারও সম্ভালে সমাজবাদী পার্টি এবং রাষ্ট্রীয় লোকদলের জোটপ্রার্থী ইকবাল মেহমুদ। সমাজবাদী পার্টির হয়ে চারবার সম্ভাল জিতেছেন ইকবাল। এলাকায় উন্নয়ন করেছেন বলেই তাঁর সমর্থকদের দাবি। সমর্থকদের একাংশ আবার তাঁকে ডাকেন, 'সম্ভাল কা বাদশা' নামে। কিন্তু, এত উন্নয়ন করলেও শহরে ডিগ্রি কলেজের সংখ্যা কম। পার্ক পর্যন্ত নেই।

কংগ্রেস এখানে প্রার্থী করেছে প্রাক্তন সাংবাদিক নিদা আহমদকে। তাঁর দল নারীর ক্ষমতায়নের ওপর প্রচারে জোর দিয়েছে। সেই সূত্রেই প্রার্থী করা হয়েছে নিদাকে। নিদাও নিজেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে 'সম্ভালের মেয়ে' বলেই পরিচয় দিচ্ছেন। পাশাপাশি, দিচ্ছেন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। বলছেন, জিতলে এলাকায় ডিগ্রি কলেজের সংখ্যা বাড়াবেন। পাশাপাশি, শিশুদের খেলাধূলার জন্য পার্ক তৈরি করে দেবেন।

আরও পড়ুন- উড়ছে সবুজ আবীর, চারে ৪ তৃণমূল

বহুজন সমাজ পার্টি এখানে প্রার্থী করেছে মাংস ব্যবসায়ী শাকিল আহমদকে। হাতেগোনা কয়েকজন হিন্দু বাসিন্দা। ভোটে জিততে পারবে না প্রার্থী। একথা জেনেও বিজেপি এখানে কোনও মুসলিম প্রার্থী জোটাতে পারেনি। সম্ভাল শহরে এবার গেরুয়া শিবির প্রার্থী করেছে রাজেশ সিংঘলকে। তিনিও দিচ্ছেন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। তবে, তাঁর অতিবড় সমর্থকও জানেন যে সাম্প্রদায়িকতার তাসে বিশ্বাসী সম্ভাল শহরের অধিকাংশ বাসিন্দা বিজেপি প্রার্থীকে ভোট দেবেন না।

এটা শুধু সম্ভালের ছবিই না। এখান থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে মোরাদাবাদ। সেটাও মুসলিম অধ্যুষিত। সেখানেও কিন্তু ধরা পড়বে একই ছবি। শুধু মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা বলেই না। উত্তরপ্রদেশের হিন্দুপ্রধান এলাকাতে গেলেও দেখা যাবে সেই একই ছবি। মুসলিম প্রার্থীর চেয়ে হিন্দু প্রার্থীদের প্রতি আস্থা আরও বিশ্বাস বেশি স্থানীয় ভোটারদের। সাম্প্রদায়িকতার শিকড় এভাবেই গেঁথে আছে যোগীর রাজ্যে।

Read story in English

uttar pradesh Uttar Pradesh Election Muslim
Advertisment