Advertisment

অবিনাশী মুক্তছন্দে বিপ্লবগাথা: নকশালবাড়ি কৃষক অভ্যুত্থানে ২৪-২৫ মে ১৯৬৭

নকশালবাড়ি আন্দোলন আজও প্রাসঙ্গিক, নকশালবাড়ি দিবসে দাবি করছেন এই আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা চারু মজুমদারের পুত্র তথা সিপিআইএমএল লিবারেশনের নেতা অভিজিৎ মজুমদার।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NAXALBARI-STATUE 05-00

নকশালবাড়ির বঙ্গাইজোতের কাছে বিশ্ববন্দিত বামপন্থী নেতাদের সঙ্গেই রয়েছে চারু মজুমদারের আবক্ষ মূর্তি (এক্সপ্রেস ফোটো- পার্থ পাল)

অভিজিৎ মজুমদার

Advertisment

কেউ কেউ বলেন বটে যে নকশালবাড়ি আন্দোলন পরাস্ত হয়েছে, কিন্তু আমি তেমনটা মনে করি না। নকশালবাড়ি আন্দোলন ধাক্কা খেয়েছে কেবল। নকশালবাড়ি আন্দোলনের যে মরমবস্তু, তা আজও বহাল। চিনের থেকে শিক্ষা নিয়ে দেখা গিয়েছিল ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে মূল উৎপাদিকা শক্তি রয়েছে কৃষকদের হাতে। সে কথা তখনও সত্যি, আজও একই ভাবে সত্যি। এখনও এখানে মূল সম্পদ তৈরি করছেন কৃষকরা। এখনও এদেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ কৃষিনির্ভর অর্থনীতির উপর ভিত্তি করেই বেঁচে আছেন। এই তথ্যগুলো মাথায় রাখলে বোঝা যাবে নকশালবাড়ির প্রাসঙ্গিকতা কেন আজও রয়েছে।

ইতিহাসের পাতা

বিগত শতাব্দীর ছয়-সাতের দশকে এই বাংলায়, পরবর্তীতে সমগ্র দেশ জুড়ে শ্রমজীবী মানুষের শোষণের শেকল ছেঁড়ার এক অভাবিত মুক্তি-সংগ্রাম শুরু হয়েছিল। ভারত-নেপাল সীমান্তে, শিলিগুড়ি মহকুমার এক অখ্যাত গ্রাম নকশালবাড়ির বিপ্লব স্পন্দিত রণভূমিতে মাথা তুলেছিলেন ৬০ হাজার কৃষক- শোষণ, শাসন, অনাহার, অত্যাচার, অমর্যাদার শতাব্দীপ্রাচীন স্থবিরতাকে চূর্ণ করে শ্রমিক-কৃষকের রাজ প্রতিষ্ঠা করতে। শ্রেণি সংগ্রাম জন্ম দিয়েছিল এই গভীর প্রত্যয়ের যে কণ্ঠরোধী নির্মম সামন্তশোষণ এবং আধা-উপনিবেশ ভারতের মুৎসুদ্দি পুঁজি পরিচালিত উৎপাদন সম্পর্কের প্রতিষ্ঠানগুলিকে শুধুমাত্র প্রত্যাখ্যান নয়, বরং তার ভিত উপড়ে ফেলে শোষণমুক্ত স্বাধীন, গণতান্ত্রিক, মানবিক সমাজ নির্মাণের। জন্ম হয়েছিল এক অবিনাশী মুক্তছন্দের- যার অনুরণনে প্রাণিত শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-যুব-মধ্যমবর্গের এক ব্যাপক অংশ সশস্ত্রতার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে আত্মদানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

নকশালবাড়ির পর দেশের কোনওকিছুই আর আগের মতো রইল না। ইতিহাসবোধ, জাতি রাষ্ট্রের অবধারণা, বিজ্ঞানচেতনা ও নৈতিকতার নতুন দৃষ্টিকোণ নতুন প্রজন্মকে মাথা উঁচু করে, যৌবনের ঔদ্ধত্যকে সম্মান জানিয়ে প্রশ্ন করতে শিখিয়ে দিয়েছিল। সমাজের নিম্নবর্গের খেটে খাওয়া মানুষদের প্রতিদিনের জীবনসংগ্রামকে অসম্ভব শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার চোখে দেখা, বোঝা ও পাল্টে দেওয়ার অন্য নাম হয়ে উঠেছিল নকশালবাড়ি। সংসদীয় গণতন্ত্রের মেকি ভড়ংকে নস্যাৎ করে মানুষের বুকের ব্যথা আর মুখর অভিব্যক্তির রাজনীতির নাম নকশালবাড়ি।

NAXALBARI BELGACHI TEA ESTATE 03-001 নকশালবাড়ির এই চাবাগানগুলিই ছিল বিদ্রোহের আঁতুড়ঘর (এক্সপ্রেস ফোটো- পার্থ পাল)

আরও পড়ুন, নন্দীগ্রামে দ্বিধাবিভক্ত হয়েছিলেন লেখক-শিল্পীরাও

কৃষকবিদ্রোহের প্রস্তুতিপর্ব

প্রাক স্বাধীনতা পর্বে ১৯৪৬-এর তেভাগা আন্দোলনের আলোকে দার্জিলিং জেলার সমতলে শুরু হয় বর্গাচাষিদের আন্দোলন। গড়ে ওঠে কৃষকসভা। ১৯৫১ সাল থেকে মজুরি বৃদ্ধি ও বোনাসের দাবিতে চা শ্রমিকরা ধারাবাহিক জঙ্গি আন্দোলনে নেমে পড়েন। ১৯৫৯- সালে প্রাদেশিক কৃষকসবা জমিদারি বিলোপ আইনে উল্লিখিত ২৫ একরের বহির্ভূত জমি জোতদার জমিদারদের কবলমুক্ত করার ডাক দিলে দার্জিলিং জেলায় এই আন্দোলন গরিব ভূমিহীন কৃষক ও ভাগচাষিদের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। কিন্তু আন্দোলন সংঘর্ষের রূপ নিলে ভীত হন প্রাদেশিক নেতৃত্ব। আন্দোলন গুটিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। দার্জিলিং জেলার কৃষকদের কাছে এ সিদ্ধান্ত প্রায় বিশ্বাসঘাতকতার নজির হিসেবে সাব্যস্ত হয়। নবগঠিত সিপিএম পার্টির সর্বোচ্চ নেতৃত্বের এই সংশোধনবাদী ঝোঁক মেনে নিতে পারেননি চারু মজুমদার। ১৯৬৫ থেকেই সিপিএমের মধ্যে থেকে এই গণআন্দোলনবিমুখ নেতৃত্বের সংশোধনবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে রচিত হতে থাকল একের পর এক অতি মূল্যবান আটটি দলিল। ভিত নির্মিত হল এক ঐতিহাসিক কৃষক অভ্যুত্থানের।

লড়াইয়ের আশু ও দীর্ঘস্থায়ী কর্মসূচি গণতান্ত্রিকভাবে স্থির করতে ১৮ মার্চ, ১৯৬৭ খড়িবাড়ির রামভোলা গ্রামের দক্ষিণের মাঠে ‘তরাই কৃষক সভা’-র সম্মেলন ডাকা হল। নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ি ও ফাঁসিদেওয়া এই তিনটি ব্লকের কয়েকহাজার কৃষক সেদিন দুপুর ২টোর মধ্যে সেই মাঠে হাজির হলেন। তর্ক-বিতর্কে উদ্দাম সম্মেলন শেষে ঘোষিত হল কর্মসূচি। জোতদারদের সমস্ত জমি দখল করা হবে। গ্রাম মুক্ত করতে ঘরোয়া হাতিয়ার দিয়ে এবং জোতদারদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া রাইফেল নিয়ে গণমুক্তি ফৌজের সশস্ত্রীকরণ চলবে। এর পরই অনেক জোতদার তাদের রাইফেল কৃষক সমিতিতে জমা দিয়ে দেয়। অনেক জোতদার গ্রাম ছেড়ে পালাতে থাকে। পুলিশ কোনও কোনও এলাকায় গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করলে কৃষকদের সশস্ত্র প্রতিরোধের মুখে পিছু হঠতে বাধ্য হয়।

আরও পড়ুন, মার্ক্সকে ‘মার্ক্সবাদী’দের বিকৃতি থেকে বাঁচাতে হবে

Naxalbari station in West Bengal . Express photo by Partha Paul.18.05.2017 নকশালবাড়ি রেলস্টেশন (এক্সপ্রেস ফোটো- পার্থ পাল)

সশস্ত্র কৃষক প্রতিরোধের সূত্রপাত

কৃষক সম্মেলনের সিদ্ধান্ত ছিল যে গ্রামে পুলিশ ঢুকতে দেওয়া হবে না। ১৯ মে থেকে ২৩ মে পুলিশবাহিনী কখনও মার জাংলা গ্রামে ও জমিদারগুড়ি গ্রামে কখনও বিজয়নগর চা বাগানে আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে ডেরাবাধা পুলিশ ক্যাম্প থেকে গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করলে কৃষক পুরুষ ও রমণীদের সশস্ত্র প্রতিরোধে পড়ে ব্যর্থ হয়।  বিজয়নগর বাগানের সীমান্তবর্তী ঝড়ুজোতে কৃষকদের পাহারায় নেতৃত্বে থাকতেন পাঞ্জাব রাও, কমলাকান্ত সিংহ, মণ্ডল কর্মকার, পাঞ্জাব রাওয়ের স্ত্রী কৃষ্ণমায়া ও জঙ্গি মহিলা নেত্রী সাবিত্রী দাস। এবারে ক্যাম্পে পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়ে দুই শতাধিক করে ২৪ মে কৃষকদের ঠেলে ধাক্কা দিয়ে গ্রামে ঢোকে পুলিশ। পুলিশের কাছে এ ছিল এক বিরাট বিজয়। বিজয়ের আনন্দে অফিসার সোনম ওয়াংদির নেতৃত্বে ৬ দারোগা নকশালবাড়ি থানায় ছোটে এ কথা জানাতে যে তারা গ্রামে ঢুকে পড়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশবাহিনীর আক্রমণের কথা জেনে নিয়ে হাতিঘিষার অন্যান্য গ্রামগুলি থেকে কয়েকশত কৃষক রেলগেট পেরিয়ে ঝরুজোতে ঢোকার মুখে দারোগাদের মুখোমুখি হয়। তিরধনুকে সজ্জিত কৃষকবাহিনির মারমুখী চেহারায় ভয় পেয়ে দারোগারা হাত তুলে আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পড়ে। হঠাৎই এক আদিবাসী কৃষকের ছোড়া সবল তিরের আঘাতে সোনম ওয়াংদি মাটিতে পড়ে যায় এবং থানায় নিয়ে গেলে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। নারায়ণ চক্রবর্তীসহ অন্যান্য দারোগারা বিদ্রোহী নেতাদের পায়ে ধরে প্রাণভিক্ষা করতে থাকে। বিশাল পুলিশ বাহিনী শান্তি মুণ্ডার নেতৃত্বে আরও অজস্র সশস্ত্র কৃষকদের সংঘবদ্ধ হতে দেখে এবং ক্যাম্পের দিকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনার অব্যবহিত পরে নেতারা কৃষক জনতাকে অকুস্থল থেকে সরিয়ে নিয়ে বীরসিংহ জোতে জমায়েত করেন। সেই দিনই নকশালবাড়ির তারাবাড়ি, জয় সিং জোত, ঘুঘুঝোরা গ্রাম থেকে প্রায় হাজার কৃষক সশস্ত্রে মিছিল নিয়ে ঝরুজোতে ঘুরে যান। মিছিলের নেতৃত্বে থাকেন মুজিবর রহমান, ফাগু ওঁরাও, আলি মহম্মদ প্রমুখ। রাষ্ট্রশক্তিকে সশস্ত্র লড়াইয়ে পর্যুদস্ত করার সংগ্রামের ঐতিহাসিক নান্দীপাঠ ঘটে ঝরুজোতের ময়দানে।

আরও পড়ুন, প্রান্তিক মানুষের ইতিহাস ও এক বিস্মৃত বই

পরের দিন ২৫ মে প্রতিশোধস্পৃহায় মরিয়া রাষ্ট্রীয় বাহিনী, ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলসের আধা সামরিক বাহিনী নিয়ে নকশালবাড়ির গ্রামে, প্রান্তরে তাণ্ডব চালাতে নেমে পড়ে। তবু দয়ারাম জোত, ঘুঘুঝোরা, মেচবস্তি, কাটিয়া জোতে কৃষকরা প্রতিরোধে শামিল হলে ছোট ছোট পুলিশের দল আক্রমণে না গিয়ে কৃষকদের কাছে ফিরে যাওয়ার অনুমতি চায়। ট্রাকে চেপে বেঙ্গাইজোত হয়ে পানিট্যাঙ্কির ফিরতি পথে এই পুলিশরা প্রসাদুজোতে রাজবংশী কৃষকনেত্রী ধনেশ্বরী দেবীর নেতৃত্বে চলা নিরস্ত্র মহিলাদের মিছিলে বিনা প্ররোচনায় গুলি চালাতে থাকে। এখানে দুজন কোলের শিশু ও একজন কিশোরসহ ১১ জন কৃষকরমণী শহিদ হন। যে ১১ জন শহিদ হয়েছিলেন, তাঁরা হলেন, ধনেশ্বরী দেবী, ফুলমতী দেবী, গাউদ্রাউ শৈবানী, নয়নেশ্বরী মল্লিক, সুরুবালা মল্লিক, সোনামতি সিংহ, খড়সিং মল্লিক ও দুটি শিশু। এই ন্যক্কারজনক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশব্যাপী শ্রমিক-কৃষক, ছাত্র-যুব, বুদ্ধিজীবী সাহিত্যিক শিক্ষকরা নারীঘাতী শিশুঘাতী সিপিএম নেতৃত্বে চলা যুক্তফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল মিটিং মারফৎ ধিক্কার জানাতে থাকে। পুলিশি সন্ত্রাসের মুখে কৃষক নেতৃত্বের মূল অংশটি গা ঢাকা দিয়ে থাকতে বাধ্য হলেও পুলিশের পক্ষে সাধারণ কৃষকদের জঙ্গিপনাকে অগ্রাহ্য করে গ্রামগুলিতে ঢুকে পড়ে অত্যাচার চালানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি অনেক ক্ষেত্রেই। অন্যত্রও মুক্তাঞ্চলগুলি রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অগম্য থেকে যায়।

আরও পড়ুন, সংবাদ জগতের একাল-সেকাল

 naxal-001 নকশালবাড়ির স্মরণে অনুষ্ঠান, ৫০ বছর পরেও (এক্সপ্রেস ফোটো- নন্দগোপাল রাজন)

আজও প্রাসঙ্গিক

নকশালবাড়ি আন্দোলন ভারতের ইতিহাসে কৃষক-শ্রমিকের ঐক্যবদ্ধ সশস্ত্র ও গণ আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক আত্মঘোষণার মাধ্যমে নিম্নবর্গের মানুষের বিপুল গণজাগৃতিকে সূচিত করেছিল। আজ পাঁচ দশক পেরিয়ে একবিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে রাষ্ট্রের প্রযোজনায় ‘উন্নয়ন’-এর ঢক্কানিনাদ সামাজিক, সাংস্কৃতিক বৈষম্য ও অর্থনৈতিক অসাম্যের দুর্বহ ভারকে বিন্দুমাত্র লাঘব করে তুলতে অক্ষম। পক্ষান্তরে, ব্রাহ্মণ্যবাদের পূজারী ৫৬ ইঞ্চির রাষ্ট্রবাদীরা সাম্প্রদায়িক বিভাজন ও অসাম্যের শিকার সংখ্যালঘু-দলিত-আদিবাসীদের দমন-পীড়নের মাধ্যমে দেশীয় ও বিদেশি কর্পোরেট পুঁজির কাছে ভারতের প্রাকৃতিক সম্পদ ও বিপুল শ্রমসম্পদকে সম্পূর্ণভাবে বিলিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর।

১০০ দিনের কাজের দিকে তাকালেই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। দাবি ছিল, ৩৬৫ দিনের মধ্যে ২০০ দিনের কাজ ও ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি দিতে হবে। পরিবর্তে কী হল? আমরা দেখলাম, ১০০ দিনের কাজের পরিসরটাকে আরও সংকুচিত করে ফেলা হল। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও কৃষকরা তাদের আন্দোলন থেকে সরে যাচ্ছেন না। নাসিক থেকে মুম্বইয়ের মিছিলের কথা এতদিনে সকলেরই জানা, যে মিছিল সরকারকে নড়ে বসতে বাধ্য করেছিল। আগামী ১ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত কিছু জায়গায় কৃষকরা আরেকটা নতুন ধরনের আন্দোলনে নামছেন। যেখানে তাঁদের দাবি, তাঁদের উৎপাদনের কোনও কিছুই তাঁরা শহরে যেতে দেবেন না। কেন তাঁরা এ পথ বেছে নিচ্ছেন? কারণ রাজনীতির পলিসি মেকাররা শহরে বাস করেন, গ্রামীণ মানুষের উপর ভিত্তি করে বেঁচে থাকলেও তাঁরা নীতিনির্মাণের সময়ে উপেক্ষিতই হয়ে থাকেন। এই অসাম্যের দিকে নজর কাড়তেই এই পদক্ষেপ নিচ্ছেন তাঁরা। অসাম্যের কথাই যখন উঠল, তখন একটা তথ্যের দিকে নজর দেওয়া যাক। সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ভারতবর্ষের কয়েকটি পরিবারের হাতে কুক্ষিগত রয়েছে ৭৩ শতাংশ সম্পদ। নকশালবাড়ি আন্দোলন যখন শুরু হয়েছিল, সে সময়ের থেকে এই অনুপাত বেড়েছে বই কমেনি।

NAXALBARI AVIJIT 01-004 নকশালবাড়ি আন্দোলনের অন্যতম নেতা চারু মজুমদার পুত্র অভিজিৎ মজুমদার (এক্সপ্রেস ফোটো- পার্থ পাল)

সাম্প্রতিক ভাঙড় আন্দোলনের দিকেই যদি তাকানো যায়, তাহলে দেখা যাবে প্রতিরোধের জন্য তাঁরা নকশালবাড়ির বুনিয়াদি শিক্ষাকেই কাজে লাগাচ্ছেন। তাঁদের লড়াই সফল হবে কিনা সে কথা এখনও বলার সময় আসেনি। তবে ৫০ বছরেরও বেশি আগের পথই যে আজও সমকালীন, সে কথা নিশ্চিত ভাবেই বুঝছেন তাঁরা।

ভাঙড় থেকে মন্দসৌর, নাসিক থেকে মুম্বই, পস্কো থেকে তুতিকোরিন, দেশজোড়া শ্রমিক ধর্মঘট থেকে দিল্লির মহাপড়াব-এর জনতা সমাবেশে প্রতিরোধেরই পদধ্বনি শুনতে পাওয়া যাচ্ছে।

নকশালবাড়ি এভাবেই বারংবার সাম্প্রতিক হয়ে ওঠে, উঠবে।

Naxalbari Left Movement
Advertisment