ব্রিটেনের জেলে বন্দী একদা পলাতক হীরে ব্যবসায়ী নীরব মোদীকে বাঁচানোর "যথাসাধ্য চেষ্টা" করছে কংগ্রেস, বৃহস্পতিবার এই অভিযোগ জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (পিএনবি) জালিয়াতি মামলায় লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেটস কোর্টে বর্তমানে চলছে নীরব মোদীর প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত একটি মামলা।
প্রসাদ অভিযোগ করেছেন যে কংগ্রেস পার্টির সদস্য তথা হাইকোর্টের এক প্রাক্তন বিচারপতি নীরব মোদীর বিরুদ্ধে প্রত্যর্পণ মামলায় বিবাদী (অর্থাৎ মোদীর) পক্ষের সাক্ষী হিসেবে আদালতে হাজির ছিলেন।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই প্রসাদকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, "নীরব মোদীকে যে বাঁচানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করছে কংগ্রেস, এই ধারণার স্বপক্ষে কিছু অতীব সন্দেহজনক ঘটনা রয়েছে।" মন্ত্রী আরও বলেছেন, "এক প্রাক্তন বিচারপতি কংগ্রেসের হয়ে ব্রিটেনের বিচারব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু আমাদের তদন্তকারী সংস্থা এর যোগ্য জবাব দেবে।"
প্রসাদ ওই বিচারকের নাম না করলেও তাঁর বিজেপি সতীর্থ সম্বিৎ পাত্র অভিযোগ করেছেন যে বম্বে হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভয় থিপসে মোদীর মামলায় সাক্ষী হিসেবে জড়িত রয়েছেন।
यहाँ भारत में राहुल गाँधी नीरव मोदी को ले,सरकार से सवाल पूछते है ..
दूसरी तरफ़ राहुल के ख़ास एवं Congress के Abhay Tipsay (पूर्व judge) नीरव मोदी के पक्ष में गवाह बनते है
आख़िर ऐसा क्या है जो राहुल नहीं चाहते नीरव भारत आए?
उस रात पार्टी में राहुल और नीरव में क्या लेन देन हुई थी? pic.twitter.com/jrHDeDP6B2— Sambit Patra (@sambitswaraj) May 14, 2020
টুইটারে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে থিপসের একটি ছবি পোস্ট করে পাত্র লিখেছেন, "এদিকে ভারতে বসে নীরব মোদীকে নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রশ্ন তুলছেন রাহুল গান্ধী। অন্যদিকে, রাহুলের ডানহাত তথা কংগ্রেস নেতা অভয় থিপসে (প্রাক্তন বিচারপতি) নীরব মোদীর হয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন। এমন কী ঘটেছে যে রাহুল চাইছেন না যে নীরব ভারতে ফিরুক? সেই পার্টিতে কী লেনদেন হয়েছিল রাহুল এবং নীরবের মধ্যে?"
পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের কাছ থেকে জাল 'লেটার অফ আন্ডারটেকিং' এবং 'লেটার অফ ক্রেডিট' দেখিয়ে তাঁর মামা মেহুল চোকসির সঙ্গে মিলে ১৩,৫০০ কোটি টাকার জালিয়াতির দায়ে অভিযুক্ত নীরব মোদীকে ভারতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) জানতে পেরেছে যে এই টাকার বহুলাংশ মোদী তাঁর পরিবারের সদস্যদের হাতে চালান করে দেন, এবং ব্যক্তিগত কাজে লাগান।
আরও পড়ুন: 'রোজ যাঁরা কঠোর পরিশ্রম করছেন, তাঁদের প্রতি নিষ্ঠুর আঘাত’, আর্থিক প্যাকেজকে নিশানা চিদাম্বরমের
মোদীর বিরুদ্ধে পাঁচদিনের শুনানি চালু হয় ১১ মে। গতবছর তাঁর প্রত্যর্পণের আবেদন জানিয়ে ব্রিটেনকে চিঠি দেয় ভারত সরকার, এবং সেই আবেদন স্বীকৃত হয়। এবং গতবছরই তাঁর গ্রেফতারির পর থেকে লন্ডনের ওয়ান্ডসওয়ার্থ কারাগারে রয়েছেন ৪৯ বছর বয়সী এই অভিযুক্ত।
ইতিমধ্যে নীরব মোদীর ১,৮৭৩ কোটি টাকার সম্পত্তি আটক করেছে ইডি, এবং বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৪৮৯.৭৫ কোটি টাকার সম্পত্তি। এর মধ্যে রয়েছে হংকং, সুইজারল্যান্ড, ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে অবস্থিত ৯৬১.৪৯ কোটি টাকার সম্পত্তি।
'সাক্ষীগোপাল' ডিরেক্টরদের হুমকি নীরব মোদীর, ভিডিও জমা দিল সিবিআই
অন্যদিকে ব্রিটেনের আদালতে একটি ভিডিও জমা দিয়েছে সিবিআই, যাতে দেখা যাচ্ছে, মোদীর নামের সঙ্গে যুক্ত একাধিক সংস্থার 'সাক্ষীগোপাল' ডিরেক্টররা দাবি করছেন যে তাঁদের প্রাণনাশের হুমকি দেন মোদী।
ভিডিওতে মোট ছ'জন ভারতীয়কে দেখা যাচ্ছে, এবং প্রত্যেকেই বলছেন যে তাঁরা দুবাই ছেড়ে মিশরের রাজধানী কায়রোতে আসতে বাধ্য হন, যেখানে তাঁদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়, এবং তাঁদের দিয়ে কিছু সন্দেহজনক নথি সই করান মোদীর ভাই নেহল মোদী।
জুন ২০১৮-র এই ভিডিও রেকর্ডিংয়ে একজন বলছেন, "আমার নাম আশিস কুমার মোহনভাই লাড়, আমি হংকংয়ের সানশাইন জেমস লিমিটেড এবং দুবাইয়ের ইউনিটি ট্রেডিং-এর নামমাত্র মালিক।" হিন্দিতে ওই ব্যক্তি আরও বলছেন, "নীরব মোদী আমাকে ফোন করে এবং বলে যে আমাকে চুরির দায়ে ফাঁসাবে। অকথ্য গালিগালাজ করে বলে যে আমাকে খুন করিয়ে দেবে... কত কী করেছে আমাদের সঙ্গে।"
এই সমস্ত সাক্ষীর পেছনে রয়েছে ইডি-র তদন্তে উঠে আসা হংকং এবং দুবাইয়ে ছড়িয়ে থাকা অজস্র ভুয়ো সংস্থা, যেগুলির নাম কা ওয়াস্তে ডিরেক্টর/মালিক/ম্যানেজার থাকলেও সরাসরি মালিকানা ছিল মোদীরই।
ভারত সরকার অভিযোগ দায়ের করেছে যে পিএনবি-র একাধিক কর্মী মোদীর সঙ্গে চক্রান্ত করে নিশ্চিত করে যে যথাযথ তদন্ত ছাড়াই এইসব ভুয়ো কোম্পানির নামে লেটার অফ আন্ডারটেকিং জারি করা হবে, যেগুলি নথিভুক্ত পর্যন্ত করা হবে না। পাশাপাশি এই লেনদেনের ওপর বিধিবদ্ধ কমিশনও নেওয়া হবে না। এর খেসারত - প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের জালিয়াতি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন