/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/05/amit-shah-4.jpg)
বিজেপির 'চাণক্য' অমিত শাহ। ছবি - পার্থ পাল
অবশেষে লোকসভা ভোটের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। বিজেপির 'চানক্য' অমিত শাহ দুদিনের বঙ্গ সফর সেরে ফিরে গিয়েছেন দিল্লি। তাঁর কর্মসূচিই জানান দিচ্ছে লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। ২০১৯ সালের লোকসভার ফলাফল ধরে রাখা আদৌ যাবে কি যাবে না সেই বিতর্কে না গিয়েও বলা যায় রণকৌশলে যাত্রা শুরু করল গেরুয়া শিবির।
বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, অরবিন্দ মেননরা 'বানপ্রস্তে' গিয়েছেন। গতবছর ২ মে-এর পর একদিকে যেমন ব্যাপক হারে তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন নেতৃত্ব, পাশাপাশি বিজেপির স্থানীয় কর্মীদের বড় অংশ শাসকদলে নাম লিখিয়েছেন। অন্যদিকে আদি বিজেপির একটা অংশ চুপচাপ নজর রাখছেন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ওপর। এক বছর পেরিয়ে গিয়েছে আর দেরি করা ঠিক নয়, অতএব জমি উর্বর করতে লাঙল নিয়ে ময়দানে নামতেই হল বিজেপির সর্বভারতীয় প্রাক্তন সভাপতিকে। কারণ জেপি নাড্ডা দলের সভাপতি হলেও বাংলার হালচাল অন্যদের থেকে একটু বেশি নখদর্পণে অমিত শাহর।
উত্তরবঙ্গে গত লোকসভা ও তারপরে বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফল করেছে বিজেপি। অমিত শাহ জনসভা করলেন উত্তরবঙ্গে আর দক্ষিণবঙ্গে নৈশ ভোজ সারলেন ক্রিকেটের 'মহারাজ' সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে। তারই মাঝে 'আমি তোমাদেরই লোক' প্রমানে হাজির হয়েছেন কাশিপুরে দলীয় যুব কর্মীর মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনোত্তর সংঘর্ষে বিজেপির কর্মীদের ওপর লাগাতার অত্যাচার হয়েছে, বহু কর্মীকে খুন করা হয়েছে বলেও বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্ব বারে বারে অভিযোগ করে এসেছেন। দলীয় কর্মীরাই অভিযোগ করেছেন, তাঁদের খোঁজ নেয়নি শীর্ষ নেতৃত্ব। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলকে চাঙ্গা না করলে লোকসভার নির্বাচন আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে গেরুয়া শিবিরের কাছে, অভিমত অভিজ্ঞ মহলের।
বাংলায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এমনই একজন ব্যক্তিত্ব সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই তাঁর সুসম্পর্ক সুবিদিত। কয়েকদিন আগেই নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছেন সৌরভ। তারইমধ্যে অমিত শাহ ভোজ সারলেন বিসিসিআই সভাপতি তথা প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়কের বাড়িতে। সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সৌরভ তা-ও সকলের জানা। বিদ্বজনের বাড়িতে জনসংযোগ রক্ষা করাও বিজেপির অন্যতম কর্মসূচি। সৌরভের বাঙালিয়ানা, বাংলার আইকন সৌরভ এমন কথা প্রচারিত। রাজনৈতিক মহলের মতে, সেক্ষেত্রে এমন একজনের বাড়িতে বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বকে নিয়ে নৈশ ভোজ সেরে এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন অমিত শাহ। 'বহিরাগত,' 'বঙ্গবিরোধী' বিজেপি নেতৃত্ব শেষমেশ সৌরভের বাড়িতে নৈশভোজে!
কংগ্রেস-সিপিএম বারে বারে দাবি করে আসছে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের আঁতাত রয়েছে। তা নাহলে চিটফান্ড-সহ নানা মামলায় অনেকেই জেলের ভিতরে থাকতো। তৃণমূল সরকার আসার পর এরাজ্যে বিজেপি-আরএসএসের সংগঠনের বিস্তার হয়েছে। যদিও তৃণমূল নেত্রী দাবি করেছেন, সিপিএমই বিজেপির বি-টিম। তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, ফের পঞ্চায়েত ভোটে ঝাঁপিয়ে পড়ে লোকসভা নির্বাচনে ফায়দা তুলতে সক্রিয় বিজেপি। ভোট পেতে গেলে ময়দানে তো থাকতে হবে। আম আদমি পার্টি এরাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে অভিযান শুরু করে দিয়েছে। তৃণমূলও কর্মসূচি শুরু করেছে। ২০২৪-এ বাংলায় ১৮ আসন ধরে রাখাই বিজেপির কাছে বড় চ্যালেজ্ঞ।