সিএএ, এনআরিস এবং এনপিআর নিয়ে রাজ্যে আন্দোলন অব্যাহত। কিন্তু মোদী-মমতা বৈঠক, দিল্লিতে সোনিয়ার ডাকা বৈঠকে মমতার গরহাজিরা, সর্বোপরি বিধানসভায় এনআরসি নিয়ে প্রস্তাব না পেশ হওয়ায় রাজ্যের বেশ কয়েকটি মুসলিম সংগঠনের নেতৃত্ব ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাঁদের কেউ বলছেন ভোটের সময় বিষয়টা দেখে নেওয়া হবে। কারও বক্তব্য, এই সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক না করলেও পারতেন। সে ক্ষেত্রে বিজেপি সুবিধা পাবে। যদিও রাজ্যের গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর বক্তব্য, "আমাদের একটাই উদ্দেশ্য, বিজেপিকে রোখা।" তাছাড়া কংগ্রেস-সিপিএম নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন অনেকটা নরম মনোভাব দেখাচ্ছেন বলে তাঁর দাবি।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য মৌলানা আবু তালিব রহমানি বলেন, এনআরসি, সিএএ ও এনপিআর-এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলের সাহায্যের জন্য় দেশের জনগণ বসে নেই। তিনি বলেন, "রাজনৈতিক দল নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচানোর জন্য নিজেরা নেমেছে। তাঁদের দরকার নেই। সাধারণ জনতা নিজেই নেমে গিয়েছে। আমি একজন ভোটার। ভোটার হিসাবে সময়ে দেখে নেব। আমি রাজনৈতিক দলের মত একদম দেখছি না। ভোটের সময় যাকে ভোট দেওয়া উচিত হবে অবশ্যই দেওয়া হবে।"
আরও পড়ুন: ‘গতবার অমিত শাহ নাম বলেছিলেন, এবারও সই করে দিয়েছি’
পার্কসার্কাসে মহিলারা অবস্থান করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের সময় টানা দুদিন ধর্মতলায় অবস্থান, বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকা ছিল না। এমনকী সেই বিক্ষোভে মোদীর সঙ্গে মমতার বিরুদ্ধেও স্লোগান দেয় বিক্ষোভকারীরা। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রানি রাসমনি রোডের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনেও বিক্ষোভ হয়। মোদী-মমতার বৈঠকের বিষয়ে বাধ্যবাধকতার কথা বলেও জামাতে ইসলামি হিন্দের মসিহুর রহমান স্পষ্ট জানান, এই বৈঠকের জন্যই মোদী গো-ব্যাকের সঙ্গে মমতাকেও গো-ব্যাক ধ্বনি শুনতে হল।
মসিহুর রহমানের মতে, "মোদীর সঙ্গে বৈঠকে বসার কোনও প্রয়োজন ছিল না। কোনও দাবি থাকলে পরে বলতে পারতেন। এই পরিস্থিতিতে এড়িয়ে যেতে পারতেন। আর বিধানসভায় এনআরসি বিরোধী বিল না আনায় পশ্চিমবাংলার মানুষের মনের মধ্যে সত্যিকারের খটকা বা সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। একইসঙ্গে সোনিয়ার ডাকা দিল্লির বৈঠকে না যাওয়াতেও মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।"
আরও পড়ুন: আমাদের নাক-কান কাটিয়ে এসেছে…ননসেন্স…নেমকহারাম: বিস্ফোরক দিলীপ
ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড কমিউনাল অ্যামিটি’র আবদুল আজিজ সরাসরি অভিযোগ করেন, বাংলায় বিজেপিকে নিয়ে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, "বিজেপির সঙ্গে গাঁটছাড়া রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। এনআরসির বিরুদ্ধে আছি। আর মোদীর সঙ্গে আলাপও চলছে। অথচ বিরোধীদের বৈঠকে গেলেন না। কথায় ও কাজে মিল নেই। কেরালায় কংগ্রেস-সিপিএমের মতো দল এক সঙ্গে বিধানসভায় বিল পাশ করিয়েছে। নারদ, সারদা বা অন্য কী আছে যে ভয় পাচ্ছে?"
তবে এইসব সংগঠনের নেতৃত্বের বক্তব্যের সঙ্গে এতমত নন রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। এই মতামতকে তিনি বিশেষ পাত্তাও দিতে চাইছেন না। সিদ্দিকুল্লরা বক্তব্য, "প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মমতার সাক্ষাত প্রোটোকল বা নিয়মনীতি। আমরা দেখেছি, ইন্দিরা গান্ধী ও জ্যোতি বসুর সঙ্গে আদায় কাঁচকলায় ছিল। তবু ইন্দিরার সঙ্গে দেখা করার জন্য় জ্যোতিবাবু চুপি চুপি লোক পাঠাতেন। এই সাক্ষাৎ অসাংবিধানিক নয়। মান-অভিমান আছে। চলতে চলতে কেটে যাবে"।
আরও পড়ুন: ‘মোদীর হাতে তির ধরান ধনকড়, যাকে ইচ্ছে উড়িয়ে দেবে’
এনআরসি নিয়ে সিপিএম ও কংগ্রেস কখনও একসঙ্গে, কখনও পৃথকভাবে আন্দোলন করছে। দিল্লিতে সোনিয়া গান্ধীর ডাকা বৈঠকেও সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব হাজির ছিলেন। তৃণমূল কংগ্রেস একেবারেই পৃথকভাবে আন্দোলন করছে। সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী বলেন, "আগে মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস বা সিপিএমের বিরুদ্ধে ক্ষুরধারভাবে বক্তব্য রাখতেন। এখন মাত্রাটা কমেছে। এই কারণে চলতে চলতে এক হবে। কংগ্রেসকে দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের দিদিও ভাবছেন, তাঁর ভাবনারও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তিনি লক্ষ্য করছেন বিজেপিকে একা তাড়ানো যাবে না। সোনিয়া উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে উষ্মা প্রকাশ করে জলঘোলা করে কিছু হবে না।"