পশ্চিমবঙ্গে যখন নাগরিক পঞ্জি নিয়ে সরগরম উঠছে রাজ্য-রাজনীতি, সেই সময়ে এনআরসি ইস্যু নিয়ে বৃহস্পতিবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিছিলকে নিয়ে সরব হলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ। তৃণমূল নেত্রীকে নিশানা করে দিলীপ ঘোষ বলেন, "এটা সরকার চলছে না সার্কাস চলছে? চাকরির ক্ষেত্রে যাঁরা পয়সা দিচ্ছেন তাঁরা চাকরি পাচ্ছেন। সরকারের বিরুদ্ধে আমরা বার বার রাস্তায় নেমেছি। সেই দেখেই মমতা আজ পথে নেমেছেন"। এখানেই থেমে থাকেননি রাজ্য বিজেপির সভাপতি। বঙ্গে এনআরসি করতে বাধা দেওয়া নিয়ে মমতার বক্তব্যর প্রেক্ষিতে দিলীপ বলেন, "তিন তালাক, জিএসটি, ৩৭০ ধারা রদ সব কিছুরই বিরোধিতা করেছিলেন উনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)। কিন্তু কিছুই লাভ হয়নি। ওঁর ক্ষমতা আমাদের জানা আছে। বাংলায় এনআরসি হবেই। বেঁচে থেকেই সেটা ওকে দেখে যেতে হবে। এটা দিলীপ ঘোষ বলে যাচ্ছে। সারা বাংলায় উনি আগুন জ্বালাচ্ছেন। কাশ্মীরের চেয়েও ভয়ংকর অবস্থা। তা নিয়ে হেঁটে কী হবে?"
আরও পড়ুন- যতদিন বাঁচব এনআরসি করতে দেব না: মমতা
এদিন এনআরসি নিয়ে বঙ্গে পদ্ম শিবিরের অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, "আমরা কাউকে তাড়াতে চাইছি না। বাংলাদেশ থেকে যে মুসলিম রোহিঙ্গারা এসেছেন তাঁরা যা ইচ্ছা তাই করছে এই রাজ্য। ১ কোটিরও বেশি মুসলিমরা এখানে এসেছেন। অনেকে আবার এখান থেকেই দিল্লি, চেন্নাই পাড়ি দিয়েছেন। আমরা সবাইকে চিহ্নিত করব। তবে যাঁরা ওপার বাংলায় সংখ্যালঘু, পীড়িত, তাঁদের ভারতে নাগরিকত্ব দেব আমরা"। প্রসঙ্গত, এনআরসি ইস্যুতে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আরেকটা বঙ্গভঙ্গ করার চেষ্টা করবেন না। বাংলাকে যাঁরা হিংসা করেন, তাঁরা জেনে রাখুন, বাংলা মাথা নত করবে না। আগুন নিয়ে খেলবেন না। আমরা সবাই রয়েছি দেশকে রক্ষা করার জন্য। আরেকবার ভারত ভাগ করতে দেব না’’।
আরও পড়ুন- মমতার উপর ‘হামলা’য় বেকসুর খালাস লালু আলম
অন্যদিকে, এনআরসি-র পাশাপাশি দেশের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে শ্যামবাজারের মিছিল থেকে এদিন মোদী সরকারকে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, "রেল, সেল, বিএসএনএল সব বিক্রি করছে। এখান থেকে ব্যাঙ্কের হেড কোয়ার্টার তুলে নিয়ে যাচ্ছে। গাড়ি কিনছেন না কেউ এখন। ভারতবর্ষে হাহাকার চলছে। দেশে অর্থনৈতিক ধস নেমেছে, তা ধামাচাপা দিতে অন্য ইস্যু নিয়ে চর্চা করছেন"। মমতার এই বক্তব্যর প্রসঙ্গেই রাজ্য বিজেপির সভাপতির মন্তব্য, "ব্যাঙ্ক সংযুক্তি নিয়ে উনি আগে সারদা নারদার টাকার ফেরত দিন তারপর মোদী সরকার নিয়ে ভাববেন। ওঁর মাথায় তো সারদা নারদার চিন্তা থাকে তাই এসব বলছেন।"
আরও পড়ুন- বিজেপি কর্মী খুনে ‘ফেরার’ অভিযুক্ত হাজির অনুব্রতর বৈঠকে! ছবি ফাঁস করে দাবি অনুপমের
এনআরসি ছাড়াও বিজেপি কর্মী স্বরূপ গড়াইকে খুনের ঘটনায় অনুপম হাজরার ফেসবুকে দেওয়া ছবি নিয়ে দিলীপের সাফ জবাব, "তৃণমূলের খুনীদের সর্বদাই হয় জেলাশাসকেরা বা পুলিশের মাঝে বসতে দেখা যায়। তৃণমূলের খুনীদের পুলিশ প্রহরা দিচ্ছে। আর কী বলার থাকে?" তবে সাম্প্রতিক বাংলায় রাজনীতির আরেকটি বিবাদের জায়গা ছিল দুর্গাপুজো। পুজো উদ্বোধন নিয়ে তৃণমূল বিজেপির দড়ি টানাটানির মাঝেই দিলীপ ঘোষ জানান, "অমিত শাহকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি পুজোতে আসার জন্য। যদিও তিনি এখনও কিছু কনফার্ম করেননি। আর মমতা মোদীজিকে পাথরের লাড্ডু আরও অনেক কিছু খাইয়েছেন। আর পুজোয় অমিত শাহকে খিচুড়ি খাওয়াবেন বলেছেন। একটু ধৈর্য ধরুন। এরপর অমিত শাহকে রসগোল্লা খাওয়াবেন মমতা নিজেই"।