'সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে এর অপব্যবহার করেছেন এনআরসির রাজ্য সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা। রাজ্যে সুষ্ঠুভাবে এনআরসি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে, সুপ্রিম কোর্ট ওই পদটিকে যে সমস্ত ক্ষমতা দিয়েছিল, তার দুর্ব্যবহার করে ইচ্ছাকৃতভাবে একটি অসম্পূর্ণ তালিকা তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ১৮০০ কোটি টাকা খরচ করেও একটি শুদ্ধ এনআরসি বানানো গেল না শুধুমাত্র এক ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতার জন্য। আসল ভারতীয়রা এনআরসি থেকে বাদ পড়ে আদালতে গিয়েই যদি নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করবেন, তাই এই প্রক্রিয়ার কোনও মানে ছিল না। হাজেলা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারা অনুমোদিত তাই তার বিরুদ্ধে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না। তবে ভারতবর্ষ গণতান্ত্রিক দেশ এবং আমরা প্রয়োজনে তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবো'। এভাবে হুমকির সুরে এনআরসি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায়।
৩১ আগস্ট এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল এবং এতে ১৯ লক্ষ লোক বাদ পড়েছিলেন। তবে এই তালিকাটি ছিল গত বছর চূড়ান্ত খসড়া থেকে বাদ পড়া ৪০ লক্ষ মানুষের অন্তর্ভুক্তির। শনিবার অনলাইনে সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে এনআরসিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির নাম। তবে তালিকাটি মোটেও ত্রুটিমুক্ত নয়, অনেকেই নিজের নামে সংশোধনের জন্য দিয়েছিলেন কিন্তু সেটা হয়নি। পাশাপাশি যাদের নাম বাদ পড়েছে তাদের এখনও বাদ পড়ার কারণ জানানো হয়নি, এতে জনমনে অস্বস্তি রয়েছে। এনআরসি থেকে ভারতীয় নাগরিকের নাম থেকে বাদ দেওয়ার বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের তরফে প্রথম সরব হয়েছিলেন শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায়। তারপর একে একে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সহ অনেকেই প্রতীক হাজেলা বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। সাংসদ রাজদীপ রায় শিলচরে এক সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে তার কথাগুলো তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: স্ত্রী অসুস্থ, সময় চাইলেন রাজীব কুমার, নারাজ সিবিআই
তিনি বলেন, 'সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে নাগরিকপঞ্জি তৈরির প্রক্রিয়াটি হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যে প্রতীক হাজেলাকে সমন্বয়ক হিসেবে নিযুক্ত করেন এবং তাঁকে কিছু বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়। তবে প্রতীক হাজেলা প্রথম থেকেই ক্ষমতাগুলোর অপব্যবহার করেছেন। এমনও সময় গেছে, মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্যপাল তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি মানা করে দিয়েছেন। আমাদের সরকারের সব মেনে নিয়েছিল কারণ আমরা চাইছিলাম একটি শুদ্ধ এনআরসি তালিকা প্রকাশ হোক। তবে গত বছর যখন চূড়ান্ত খসড়া থেকে ৪০ লক্ষ লোক বাদ পড়েছিলেন, তখনই আমরা বুঝে গেছিলাম প্রক্রিয়াটি যেভাবে হওয়ার কথা ছিল সেটা হচ্ছে না। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে সুপ্রিমকোর্টের কাছে এব্যাপারে আবেদনও জানানো হয়েছিল। মহামান্য আদালত প্রতীক হাজেলাকে বেশ কয়েকবার হুঁশিয়ারিও দেন। কিন্তু এতে কোনো কাজ হয়নি, এনআরসি চূড়ান্ত তালিকা ভুলে ভরা এবং এর জন্য দায়ী সমন্বয়ক প্রতীক্ষা জেলা।'
স্বাধীনতার জন্য যারা লড়াই করে গেছেন তাদের উত্তরসূরিরা আজ এনআরসির তালিকার বাইরে, এটা ভারতবর্ষের কাছে লজ্জার বিষয়। প্রাক্তন সৈনিক থেকে শুরু করে ইসরোর বিজ্ঞানী, সবার নাম বাদ পড়ছে। এনআরসি আধিকারিকদের ভুলের জন্য সাধারণ মানুষকে কোর্টের কাছে গিয়ে নিজের ভারতীয়ত্ব প্রমাণ করতে হবে। এটাই যদি হওয়ার ছিল, তাহলে এত টাকা খরচ করে এই বিশাল প্রক্রিয়া করার কোনও দরকার ছিলনা। আমি এনআরসির বিরুদ্ধে নই, আমরা চাই সারাদেশে প্রত্যেক রাজ্যের এনআরসি হোক। কিন্তু এভাবে অসম্পূর্ণ প্রক্রিয়ায় নয় অত্যন্ত সুন্দর এবং সুষ্ঠভাবে হতে হবে। আমাদের রাজ্যে এনআরসির কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল তাদের কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি। একই নথি কোন কোন জায়গায় গ্রহণ করা হয়েছে আবার কেউ কেউ গ্রহণ করেনি। সুপ্রিম কোর্ট থেকে বলা হয়েছিল রিফিউজি কার্ড এবং ক্যাম্প রেজিস্ট্রেশন কার্ডকে গ্রহণযোগ্য বলে ধরা হবে। কিন্তু বিভিন্ন এনএস খেতে আধিকারিকরা এই কথা মানতে রাজি হননি। হলে আজ সাধারণ মানুষ হেনস্তার সম্মুখীন হচ্ছেন।
আমরা দেখলাম প্রতীক হাজেলা নিজেই ঠিক করলেন কোন কোন এলাকায় রিভেরিফিকেশন হবে এবং সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া মাত্র ২৭ শতাংশ রিভেরিফিকেশন করা হলো। সীমান্ত এলাকাগুলোতে বাদ পড়া আর মাত্র ৬ শতাংশ অথচ নাম্বার ১৬ শতাংশ। আমরা সবাই জানি অনুপ্রবেশকারীরা সীমান্তবর্তী এলাকায় বেশি থাকেন তবু বেছে বেছে তাদের রক্ষা করেছেন প্রতিক হাজেলা। এর বিরুদ্ধে একটি বিরাট চক্রান্ত রয়েছে এবং আমি একে ধর্মের ভিত্তিতে দেখতে রাজি নই। আমরা অনেক লড়াই করে আজ ক্ষমতায় এসেছি এবং সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে আমাদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। আমাদের কাছে জনগনের সুরক্ষাই শেষ কথা, তাই প্রতীক হাজেলাকে স্পষ্ট বলে দিতে চাই, আপনি যদি এই ভুলগুলো শুধরে না নেন তাহলে আমরা সারা রাজ্যে আমরা বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবো।
আরও পড়ুন: দিলীপ ঘোষদের ক্ষতে মলম? পদ পেলেন বাংলার ১৬ বিজেপি সাংসদ
সম্প্রতি কাছাড় জেলায় এনআরসিতে নাম থাকা ৮২জন ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে বিদেশি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এর বিরুদ্ধে শুক্রবার খুব ব্যক্ত করেছিলেন সাংসদ রাজদীপ রায় সহ জনপ্রতিনিধিরা। শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে এ প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এনআরসি এবং ডি-ভোটার সনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের ভুলত্রুটি রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় আধিকারিকরা এধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করছেন। আমরা এব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিক বিষয়ে কথা বলেছি এবং স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি এই ঘটনা যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়।
২০ সেপ্টেম্বর শিলচরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা রাজদীপ রায়ের পিতা প্রয়াত বিমলাংশু রায়ের জন্ম বার্ষিকী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা রাম মাধব শিলচর আসছেন। ২৩ সেপ্টেম্বর রাজ্যের ১৪টি জায়গায় আর্টিকেল ৩৭০ এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিশেষ আলোচনা আয়োজন করেছে বিজেপির রাজ্য কমিটি। শিলচরে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসবেন নেডার আহ্বায়ক তথা অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। বরাক উপত্যকায় এসে এনআরসি নিয়ে তারা কি বলেন এটা দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন অঞ্চলের সাধারণ মানুষ।