যত দিন গড়াচ্ছে, এনআরসি ইস্যুকে হাতিয়ার করে ততই তেতে উঠছে বঙ্গ রাজনীতি। সম্প্রতি আসামে এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর এ ইস্যু আরও জল-হাওয়া পেয়েছে। বিজেপিকে বিঁধতে আসাম এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকায় বাদ পড়ারই তৃণমূলের কাছে এখন অন্যতম প্রধান ‘অস্ত্র’ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। গত ৩১ অগাস্ট আসামে এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ১৯ লক্ষের নাম। যাঁদের মধ্যে ১২ লক্ষ হিন্দু। বিজেপিকে দুষতে এই তথ্যই হয়ে উঠেছে তৃণমূলের হাতিয়ার, এমনটাই ব্যাখ্যা রাজনীতির কারবারিদের একাংশের।
এ প্রসঙ্গে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘আসামে এনআরসিতে ১২ লক্ষ বাঙালি ও হিন্দুর নাম বাদ পড়েছে। এতে এটাই স্পষ্ট হল যে, বাঙালিদের টার্গেট করা হচ্ছে। কীভাবে হিন্দু ও বাঙালিদের নাম বাদ পড়ল, আগে এই প্রশ্নের জবাব দিক বিজেপি। এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে যে, ওরা বাঙালিদের টার্গেট করছে’’।
EXCLUSIVE: ‘শোভন-বৈশাখী যাবে জানলে আমি পরের দিন যেতাম’
প্রসঙ্গত, বাংলায় এনআরসি করা নিয়ে প্রথম থেকেই সওয়াল করে আসছেন বিজেপি নেতারা। কয়েকদিন আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ জানিয়েছেন, সারাদেশেই এনআরসি করা হবে। এদিকে, শাহর সঙ্গে বৈঠকের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলায় এনআরসি করা হবে না। এনআরসি-র বিরোধিতা জানিয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর কলকাতার রাজপথে পদযাত্রা করেন মমতা।
আরও পড়ুন: রাজীব কুমারকে খুন করতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: অর্জুন সিং
তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘বিজেপি বলেছে, যদি ওরা বাংলায় ক্ষমতায় আসে, তাহলে এনআরসি করবে। মানুষ সচেতনভাবেই বুঝতে পারছে, কোনটা তাঁদের জন্য ভাল আর কোনটা খারাপ। আসামে এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা থেকে কেন বাঙালি ও হিন্দুদের নাম বাদ পড়ল, তার ব্যাখ্যা দিক আগে ওরা’’।
আরও পড়ুন: ফের ধর্নার হুমকি, পথে নামছেন মমতা
অন্যদিকে, এনআরসি আতঙ্কে ইতিমধ্যেই রাজ্যে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি। এ ঘটনায় বিজেপির ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছে তৃণমূল। এ ব্যাপারে বঙ্গবাসীকে আশ্বাসের সুরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাংলায় কোনওভাবই এনআরসি হবে না।
উল্লেখ্য, লোকসভা নির্বাচনে এনআরসি ইস্যুকে সামনে রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বিজেপি। উনিশের নির্বাচনী রায়ে বাংলায় ‘অভূতপূর্ব’ জয় পেয়েছে পদ্মবাহিনী। আর তাই বাংলায় এনআরসি করতে মরিয়া গেরুয়াশিবির। তবে আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা থেকে হিন্দুদের নাম বাদ পড়ায় ‘ধাক্কা’ খেয়েছে পদ্ম শিবির। এমতাবস্থায়, আগে নাগরিকত্ব বিল বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছে তারা। এ প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘‘বাংলায় প্রথমে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বাস্তবায়িত করব, তারপর এনআরসি করা হবে। রাজনৈতিক ফায়দা লুঠতে তৃণমূল এ নিয়ে অযথা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করছে’’।
সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে তৃণমূলের এক নেতা জানিয়েছেন, লোকসভা ভোটের ভরাডুবির পর একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে টেক্কা দিতে আমাদের কাছে এনআরসি একটা অন্যতম ইস্যু। বিজেপি নেতাদের একাংশের মতে, আসামে এনআরসি তাঁদের কাছে একটা ধাক্কা। রাজনৈতিক মহলের মতে, এনআরসি ইস্যুর বিরোধিতা জানিয়ে বাঙালি মুসলিমরা মমতা বাহিনীর পাশেই রয়েছেন। বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের মত, এনআরসি ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে যতই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুক না কেন মমতা ব্রিগেড, ২০২১ সালে রাজ্য পরিবর্তন চায়। এদিকে, রাজ্যের অপর দুই বিরোধী দল কংগ্রেস ও সিপিএমের মতে, তৃণমূল-বিজেপি নিজেদের স্বার্থে এনআরসি ইস্যুকে কাজে লাগাচ্ছে।
Read the full story in English