খরচ বাঁচানোর দোহাই দিয়ে এবার শহিদ জওয়ানদের স্মৃতিতে দশকের পর দশক ধরে প্রজ্বলিত 'অমর জওয়ান জ্যোতি' শিখা নেভানোর সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় সরকারের। 'অমর জওয়ান জ্যোতি'র অগ্নিশিখাকে এবার জাতীয় যুদ্ধ স্মারকের অগ্নিশিখার সঙ্গে মেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। মোদী-শাহ-রাজনাথদের এই সিদ্ধান্তের তুমুল সমালোচনায় সরব বিরোধীরা। দেশের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টায় মোদী সরকার, এমনই অভিযোগ রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে শশী থারুর, মল্লিকার্জুন খাড়গেদের।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে শহিদ জওয়ানদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাজধানী দিল্লিতে 'অমর জ্যোতি জওয়ান' শিখা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ইন্ডিয়া গেটের পাদদেশে উল্টো করে রাখা রাইফেলের মাথায় সেনার ব্যাবহার করা একটি হেলমেট থাকে। সেটিই বসানো রয়েছে একটি স্তম্ভের উপর। তারই পাশে প্রজ্বলিত আগুনের শিখা। বছর পর বছর ধরে জ্বলছে সেই আগুনের সিখা। গত ৫০ বছর ধরে ভারতের ইতিহাস বহন করে চলেছে এই শিখা। ভারতের ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে গিয়েছে 'অমর জ্যোতি জওয়ান' শিখা।
সম্প্রতি ইন্ডিয়া গেট থেকে 'অমর জ্যোতি জওয়ান' শিখা সরানোর সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের যুক্তি, জাতীয় যুদ্ধ স্মারকেও এমনই একটি শিখা জ্বলছে। এরই পাশাপাশি 'অমর জ্যোতি জওয়ান' শিখাও প্রজ্বলিত। দুটি শিখা দিনের পর দিন ধরে প্রজ্বলিত রাখার খরচ বাড়ছে। সেই কারণেই এবার 'অমর জওয়ান জ্যোতি' শিখাকে জাতীয় যুদ্ধ স্মারক শিখার সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হবে।
মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তকেই তুলোধনা করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে শশী থারুর-সহ বিরোধী নেতারা। টুইটে কেন্দ্রের তুমুল সমালোচনা করে রাহুল গান্ধী লিখেছেন, ''এটি অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে আমাদের সাহসী সৈন্যদের জন্য যে অমর শিখা জ্বলতো তা আজ নিভে যাবে। কিছু লোক দেশপ্রেম এবং আত্মত্যাগ বুঝতে পারেন না। কিছু মনে করবেন না… আমরা আবার আমাদের সৈন্যদের জন্য অমর জওয়ান জ্যোতি জ্বালিয়ে দেব!''
কংগ্রেস নেতা শশী থারুরও মোদী সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। টুইটে তিনি লিখেছেন, ''সংসদে হোক বা বাইরে, এই সরকারের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও প্রতিষ্ঠিত কনভেনশনের প্রতি কোনও শ্রদ্ধা নেই। অমর জওয়ান জ্যোতির ৫০ বছর পরে অর্জিত পবিত্রতা ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে।… ২০১৪-এর পরে সব কিছুকেই নতুন করে আবিষ্কার করতে হবে?!'' বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারিও বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
আরও পড়ুন- গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় কাবু প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ, অনেকটাই বাড়ল মৃতের সংখ্যা
বিরোধীদের উপর্যুপরি বিরোধিতা সত্ত্বেও সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কোনও পরিকল্পনা নেই মোদী সরকারের। বরং এক্ষেত্রে কেন্দ্রের যুক্তি, ''অমর জওয়ান জ্যোতির শিখা নিভে যাচ্ছে না। এটি জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতিসৌধের শিখার সঙ্গে একত্র করা হচ্ছে।'' বিষয়টি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে বলেও দাবি মোদী সরকারের।
Read story in English