Parliament Winter Session: লোকসভায় গৃহীত 'ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন' বিল , পক্ষে ২৬৯ ভোট। জল্পনা মতোই জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটি (জেপিসি) বা যৌথ সংসদীয় কমিটিতে যাচ্ছে ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ বিল। মন্ত্রিসভায় আলোচনা চলাকালীন বিলটি জেপিসি-তে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই মতোই এদিন বিল পেশের পরে লোকসভায় বিশেষ ভোটাভুটির মাধ্যমে বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। সংসদে বিলটি উত্থাপনের প্রস্তাবের পক্ষে ২৬৯ জন সাংসদ ভোট দিয়েছেন, যখন ১৯৮ জন এর বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। বিল দুটি সংসদের যৌথ কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
লোকসভায় পেশ হল 'ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন' বিল
'ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন' বিলটি লোকসভায় পেশ করেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পরামর্শের পরে, আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে এই বিলটি আলোচনার জন্য সংসদের যৌথ কমিটিতে পাঠানোর অনুরোধ করেন। এদিকে বিল নিয়ে তুমুল হট্টোগোলের জেরে লোকসভার কার্যক্রম বিকেল ৩টা পর্যন্ত মুলতবি করে দেওয়া হয়।
সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে আজ (১৭ ডিসেম্বর ২০২৪), উভয় কক্ষের (লোকসভা এবং রাজ্যসভা) কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে 'ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন' বিল পেশ করা হল লোকসভায়, অন্যদিকে রাজ্যসভায় সংবিধান নিয়ে বিতর্ক চলবে।
কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল লোকসভায় 'ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন' বিল পেশ করেন। বিল পেশের পর হাউসে ব্যাপক হট্টোগোল সৃষ্টি হয়। এসপির ধর্মেন্দ্র যাদব বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেছেন, যারা এক সঙ্গে ৮টি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন করতে পারেনি, তারা সারা দেশে একযোগে নির্বাচনের কথা বলে। কংগ্রেস, তৃণমূল সহ বেশ কিছু বিরোধী দল এই বিলের বিরোধিতা করছে।
'ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন' এর জন্য গঠিত কমিটিতে রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবী আজাদ, ১৫ তম অর্থ কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এন কে সিং, লোকসভার প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক ডাঃ সুভাষ কাশ্যপ, সিনিয়র আইনজীবী হরিশ সালভে এবং চিফ ভিজিলেন্স কমিশনার সঞ্জয় কোঠারি। এছাড়াও বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে আইন প্রতিমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্ব) অর্জুন রাম মেঘওয়াল এবং ড. নিতেন চন্দ্রকে।
এদিকে আজ অধিবেশনের শুরুতেই 'ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন' বিল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করেছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সংসদে বলেন, "আজ যখন সংসদে সংবিধান নিয়ে বিতর্ক চলছে, ঠিক তখন বিজেপি সংবিধান সংশোধনী বিল আনার নির্লজ্জ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যা গণতন্ত্রের উপর নির্লজ্জ আক্রমণ। 'ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন' বিল এমন এক বিল যা মানুষের মৌলিক অধিকারকে কেড়ে নিতে চায়। এতে বাংলা চুপ থাকবে না।"
'জনগণের প্রতি কোনও দায়বদ্ধতা নেই', বিজয় দিবসে ইউনূস সরকারকে ফের আক্রমণ হাসিনার
সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে আজ (১৭ ডিসেম্বর ২০২৪), কেন্দ্রীয় সরকার লোকসভায় 'এক দেশ, এক নির্বাচন' বিল পেশ করা হয়। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল এই বিলটি পেশ করেন। বিরোধীরা এই বিল নিয়ে প্রশ্ন তুললেও ক্ষমতাসীন দল বলছে জাতীয় স্বার্থে এই বিল আনা হয়েছে।
রিপোর্ট অনুসারে, আজ বিলটি পেশ করার পর আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে বিলটি বিশদে আলোচনার জন্য সংসদের যৌথ কমিটিতে পাঠানোর অনুরোধ করবেন। সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শেষ হবে ২০ ডিসেম্বর।
নাম থেকেই পরিষ্কার এই বিল গোটা দেশে একযোগে নির্বাচনের পক্ষে। ভারতে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন, দেশের লোকসভা নির্বাচন এবং নাগরিক ও পঞ্চায়েত নির্বাচন সময়ে সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। নরেন্দ্র মোদী সরকার চায় যে দেশে বিধানসভা, লোকসভা, পঞ্চায়েত এবং স্থানীয় পুরসভা-পঞ্চায়েত নির্বাচন একই সাথে অনুষ্ঠিত হোক।
'ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন' বিল বহুদিন ধরে ক্ষমতাসীন বিজেপির এজেন্ডায় রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সভাপতিত্বে একটি কমিটি গঠন করেছিল। এই কমিটি ১৪ মার্চ ২০২৪ তারিখে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে তাদের রিপোর্ট পেশ করে।
কংগ্রেস শুরু থেকেই 'ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন' এর বিরোধিতা করে আসছে। কংগ্রেস বলেছে, একযোগে নির্বাচন হলে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে, যা সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরোধী। এর বাইরে আম আদমি পার্টি সহ আরও কয়েকটি দল এর বিরোধিতা করছে।
এদিকে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সংসদের ভিতর বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিরোধী সাংসদরা।
#WATCH | Delhi: Opposition MPs carry placards and tote bags displaying messages against atrocities on minorities in Bangladesh, and protest at the Parliament premises. pic.twitter.com/WLTAmBmyL0
— ANI (@ANI) December 17, 2024
প্রতিবাদ করেছে টিএমসি
ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন বিলের বিরোধিতা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এই বিল সংবিধানের মূল চেতনার পরিপন্থী।
জয়রাম রমেশের নিশানায় বিজেপি
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "এক দেশ , এক নির্বাচন" বিলের আসল উদ্দেশ্য হল দেশে নতুন সংবিধান আনা৷ সংবিধান সংশোধন করা এক জিনিস, আরএসএস এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীর আসল উদ্দেশ্য দেশে নতুন সংবিধান আনা।"
প্রতিবাদ করেছে শিবসেনা
শিবসেনা উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠীর সাংসদ অনিল যশবন্ত দেশাই ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন বিলের বিরোধিতা করেছেন।
প্রতিবাদ করলেন গৌরব গগৈ
'ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন'-এর বিরুদ্ধে কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ বলেন, এটা সংবিধান ও জনগণের ভোটাধিকারের উপর আক্রমণ। একই সঙ্গে এই বিলের বিরোধিতা করেছে সিপিআই এম।
শরদ কন্যা সাংসদ সুপ্রিয়া সুলের প্রতিবাদ
এনসিপি শরদ পাওয়ার গোষ্ঠীর সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন বিলের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছেন, এটা দেশের গণতন্ত্রের উপর সরাসরি আক্রমণ।
প্রতিবাদ করলেন ওয়াইসি
ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশনের বিরোধিতা করেছেন এআইএমআইএম সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। তিনি বলেছেন- এটা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর উপর আক্রমণ। রাজনৈতিক ফায়দা নিতেই এই বিল আনা হয়েছে।
ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন বিল সমর্থন করল জেডিইউ
ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন বিল নিয়ে জেডিইউ সাংসদ সঞ্জয় কুমার ঝা বলেছেন, "আমরা আগেও বলেছিলাম যে এই বিলে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। যখন দেশে নির্বাচন ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল তখন এক দেশ,এক নির্বাচন কার্যকর ছিল। কাজেই এটা নতুন কিছু নয়'।
#WATCH | On One Nation One Election Bill, JD(U) MP Sanjay Kumar Jha says, "...We had said that we completely support this that Lok Sabha and Vidhan Sabha elections should be held together. Panchayat elections should be held separately. When elections began on this country, it was… pic.twitter.com/fZQRbc0Ht5
— ANI (@ANI) December 17, 2024
জেপি নাড্ডা সংরক্ষণ নিয়ে বিতর্কের দাবি জানিয়েছেন
জেপি নাড্ডা রাজ্যসভায় বলেন, "ডঃ বিআর আম্বেদকর নিজেই বলেছিলেন যে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ করা উচিত নয়, তবুও বিরোধীরা তাদের তুষ্টির রাজনীতির জন্য সংবিধানকে বিকৃত করছে।" নাড্ডা সংরক্ষণের ইস্যুতে বিতর্কের দাবি করলেও বিরোধী সাংসদরা মৌখিকভাবে প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন।
'এক দেশ, এক নির্বাচন' বিল পাস করা সরকারের পক্ষে খুব এক সহজ কাজ নয়
ওয়ান নেশন, ওয়ান ইলেকশন বিল পেশ হল লোকসভায়। 'এক দেশ, এক নির্বাচন' সংবিধান সংশোধনী বিল পাস করা সরকারের কাছে নিঃসন্দেহে এক কঠিন কাজ হতে চলেছে। জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের (এনডিএ) সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই।
সংবিধান সংশোধনের জন্য বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন। এই অবস্থায় উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য থাকা এবং ভোটে ৫০% এর বেশি ভোট পাওয়া প্রয়োজন। যেখানে এনডিএ-র সমস্যা হল ইন্ডিয়া জোটের সব দল এক দেশ এক নির্বাচনে্র বিরুদ্ধে।
'এক দেশ, এক নির্বাচন' বিল সম্পর্কে জানুন-
এই বিলটি সারা দেশে একটি নির্বাচন করার পথ প্রশস্ত করেছে 'ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন' বিলে একযোগে নির্বাচনের জন্য গঠিত কমিটির সুপারিশ গৃহীত হয়।
‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ এর জন্য দুটি বিল আনছে সরকার। এর মধ্যে একটি সংবিধান সংশোধনী বিল। যার জন্য প্রয়োজন দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। NDA বর্তমানে ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২৯২ টি আসন রয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ৩৬২ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন। এনডিএ বর্তমানে রাজ্যসভার ২৪৫ টি আসনের মধ্যে ১১২ টি আসন রয়েছে, যেখানে ৬ জন মনোনীত সাংসদের সমর্থনও পেয়েছে। যেখানে বিরোধীদের আসন সংখ্যা ৮৫ টি। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ১৬৪ সাংসদের সমর্থন প্রয়োজন।
সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকার এখন বিল নিয়ে ঐকমত্য গড়ে তুলতে চায়। সরকার বিস্তারিত আলোচনার জন্য যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসিতে পাঠাতে পারে।
বিলের বিষয়ে গঠিত রামনাথ কোবিন্দ কমিটিতে ৪৭টি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত দিয়েছে। এর মধ্যে ৩২টি দল বিলকে সমর্থন করলেও এবং ১৫টি দল বিলের বিরোধিতা করে। বিরোধী দলগুলির লোকসভা সাংসদের সংখ্যা ২০৫ জন। তার মানে ইন্ডিয়া জোটের সমর্থন ছাড়া সংবিধান সংশোধনী বিল পাশ করা কঠিন।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই বছরের সেপ্টেম্বরে লোকসভা, রাজ্য বিধানসভা এবং পুরসভা-পঞ্চায়েতের জন্য পর্যায়ক্রমে নির্বাচনের জন্য 'এক দেশ, এক নির্বাচন' বাস্তবায়নের অনুমোদন দিয়েছিল।