বিদ্রোহের আগুন ধিকি ধিকি জ্বলছিল অনেক দিন ধরেই। জেনেও গুরুত্ব দেননি মুখ্যমন্ত্রী। আর তারই খেসারত এখন দিচ্ছেন উদ্ধব ঠাকরে। দলের বিধায়ক-মন্ত্রীদের উপর রাশ আলগা হয়ে গিয়েছিল কোভিডের সময়ই। নিজেও দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার কারণে রাজনীতির বাইরে ছিলেন। তলে তলে বিদ্রোহের আগুন বড় হয়েছে, এখন তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে শাসকজোটের অন্য শরিকদের মধ্যেও।
মহারাষ্ট্রে মহা-নাটকের কয়েক মাস আগেই এনসিপি সুপ্রিমো মারাঠা রাজনীতির প্রবাদপ্রতীম পুরুষ শরদ পওয়ার সাবধান করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধবকে। তাঁর দল শিবসেনার নেতা-মন্ত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। যে কোনও মুহূর্তে বিদ্রোহ হতে পারে, আগাম সতর্ক করেছিলেন পওয়ার। কিন্তু তাঁকে গুরুত্বই নাকি দেননি উদ্ধব, এমনটাই সূত্র মারফত জানতে পেরেছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
সূত্র জানিয়েছে, শরদ পওয়ার উদ্ধব ঠাকরেকে সতর্ক করেছিলেন চার-পাঁচ মাস আগেই। তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন, দলের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করতে। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করেননি উদ্ধব। সূত্রের খবর, পওয়ার মহা বিকাশ আঘাড়ি সরকারের অন্দরে অসন্তোষ বাড়ার গন্ধ পেয়েছিলেন। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেত না। যে কোনও মুহূর্তে বিদ্রোহ হতে পারে, সাবধানও করেন পওয়ার। কিন্তু উদ্ধব সে কথা শুনলে তো!
আরও পড়ুন সঙ্গে রয়েছে ৪০ বিধায়ক! শিণ্ডের দাবিতে থরহরি কম্প উদ্ধব, ডাকলেন মন্ত্রিসভার বৈঠক
বেশ কিছু ক্ষেত্রে পওয়ারও উদ্ধবের দেখা পেতেন না। মুখ্যমন্ত্রী যদি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন তাহলে তো সমস্যার। পওয়ার নিজেও এটা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে সময় কাটাতেন না উদ্ধব। নিজের দলেরই নেতা-মন্ত্রীরা এখন তাই মুখ ফিরিয়েছেন।
আরেক সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, উদ্ধব মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন না। পওয়ার তা নিয়ে উদ্ধবকে সতর্কও করেন। কারণ তাঁর দলের লোকজন বিষয়টা ভাল ভাবে নিচ্ছেন না। বেশ কিছু শাসকজোটের বিধায়ক পওয়ারকে জানান, মুখ্যমন্ত্রীর তাঁদের কথা শোনেন না। উদ্ধবের সঙ্গে কথা বলা মুশকিল। একেক সময় একাকীত্ব এবং অবহেলিত বোধ করতেন বিধায়করা।
কংগ্রেস নেতারা বলেছেন, দলের বিধায়ক এবং মন্ত্রীরা অন্তত দুবার ইস্যুটি নিয়ে সরব হন। দিল্লিতে হাইকমান্ডেও নালিশ জানান। কিছু প্রকল্প বা নীতিতে যখন মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, তখনই মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যেত।
আরও পড়ুন শিন্ডের দেখা পেলেন উদ্ধবের দূত, কিন্তু সঙ্কট এখনও সেই তিমিরেই
আরও একটা বিষয়ে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের উদ্ধবের নেতৃত্ব নিয়ে অসন্তোষ জন্মায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আলোচনার অভাব এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় উদ্ধবের ব্যর্থতা। ছোট শরিক দল এবং নির্দল বিধায়করাও একই অভিযোগে সরব। এক নির্দল বিধায়কের দাবি, "আমি ৪৫ বার মুখ্যমন্ত্রী দফতরে ফোন করেও দেখা করার অনুমতি পাইনি।" এই কারণেই রাজ্যসভা এবং এমএলসি নির্বাচনের সময় ছোট শরিক দল, নির্দল বিধায়করা শাসকজোটের থেকে দূরত্ব তৈরি করেন।
যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে শিবসেনা নেতৃত্ব। তাঁরা জানিয়েছে, কোভিডের সময়ও অসুস্থ শরীরে মুখ্যমন্ত্রীর সবসময় সক্রিয় থেকেছেন। সবার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে কথা বলেছেন। দলের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করেছেন।