নরেন্দ্র মোদী যে দুর্নীতিগ্রস্ত সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী শনিবার এ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ৩৬ টি ফরাসি দেশে তৈরি বিমান ক্রয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে নিজের অবস্থান জানাতে হবে।
নয়া দিল্লিতে আয়োজিত একটি সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘‘আমরা সম্পূর্ণ নিশ্চিত যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিগ্রস্ত। দেশের মানুষের কাছে এখন পরিষ্কার যে ‘দেশ কা চৌকিদার চোর হ্যায়’।’’
প্রাক্তন ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ-র বক্তব্য প্রাকশিত হওয়ার একদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ফের এক হাত নিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি। ওলাঁদ ফরাসি সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন, রাফালে জেট যুদ্ধবিমান চুক্তিতে ডসাল্ট অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে অংশীদারিত্বের জন্য অনিল আম্বানির রিলায়েন্স জেট কোম্পানির নাম প্রস্তাব করেছিল ভারত সরকারই। এ ব্যাপারে ফ্রান্সের কোনও বক্তব্য রাখার সুযোগই ছিল না বলে জানিয়েছেন ওলাঁদে।
আরও পড়ুন, রাফালে ডিলে ভারতীয় পার্টনার ফরাসি সরকার বাছে নি: ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ
ফরাসি সংবাদের ওয়েবসাইট Mediapart.fr-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওলাঁদ জানিয়েছেন, “আমাদের মতামত দেওয়ার জায়গা ছিল না। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে রিলায়েন্সের নাম প্রস্তাব করা হয়, এবং Dassault আম্বানীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে। আমাদের কোনো পছন্দ অপছন্দের প্রশ্ন ছিল না, মধ্যস্থতা করতে যাকে দেওয়া হয়েছিল, তাকেই নিয়েছিলাম।”
প্রাক্তন ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্য ভারত সরকারের তরফ থেকে এ নিয়ে যে দাবি করা হয়েছিল, তার উল্টো। ভারত সরকার বলেছিল, ডসল্ট এবং রিলায়েন্সের চুক্তি সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক চুক্তি এবং সরকারের এ ব্যাপারে কোনও হাত ছিল না।
কংগ্রেস সভাপতি এদিন বলেন, ‘‘এখন হয় প্রধানমন্ত্রীকে ওলাঁদের বক্তব্য মেনে নিতে হবে, অথবা বলতে হবে যে ওলাঁদ যা বলছেন তা মিথ্যা, এবং তাঁকে সত্যিটা জানাতে হবে।’’ তিনি বলেন, ‘‘এই প্রথমবার একজন প্রাক্তন ফরাসি রাষ্ট্রপতি আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে চোর বলছেন। এটা প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সম্মানের প্রশ্ন। এটা আমাদের দেশের সেনা ও বিমানবাহিনীর ভবিষ্যতের প্রশ্ন।’’
রাহুল আরও বলেন, ‘‘ফ্রান্সের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। রাফালে চুক্তি নিয়ে তিনি বলেছেন, ’আমাদের এ ব্যাপারে কিছু বলার ছিল না। ভারত সরকার এই প্রস্তাব দিয়েছিল।’ এখন প্রধানমন্ত্রীকে এই বিবৃতি সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে হবে।’’
কংগ্রেস সভাপতি এ ব্যাপারে যৌথ সংসদীয় কমিটির নেতৃত্বে তদন্তের দাবি করেছেন। তদন্তের জন্য প্রয়োদনে ওঁলাদেকে ডাকা যেতে পারে বলেও অভিমত প্রকাশ করেছেন তিনি।’’
ওলাঁদের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক একটি টুইটবার্তায় জানিয়েছে, এ ব্যাপের খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে মন্ত্রকের তরফে এও বলা হয়েছে যে ভারত সরকার বা ফরাসি সরকার কোনও পক্ষেরই বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে কোনও বক্তব্য ছিল না।
৩৬টি রাফালে যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি ২০১৫ সালের ১০ এপ্রিল প্যারিস সফরকালে ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই চুক্তির ফলে পূর্ববর্তী ইউপিএ সরকারের ১২৬টি যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি বানচাল হয়ে যায়। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬-য় এ দেশের তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্কর এবং ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রস্তুতিতে সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতাহীন আম্বানির সংস্থাকে অবৈধভাবে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তখন থেকেই অভিযোগ তুলেছিল কংগ্রেস সহ বিরোধী দলগুলি।