গতকালের নির্বাচনী ফলাফলের ভিত্তিতে ছত্তিসগড়, মধ্যপ্রদেশ, এবং রাজস্থানে সম্ভবত সরকার গড়তে চলেছে কংগ্রেস, কাজেই অবধারিতভাবেই প্রশ্ন উঠছে, তিন রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন কারা? নির্বাচনের আগে যেহেতু মুখ্যমন্ত্রীদের সম্ভাব্য তালিকা তৈরি করে নি কংগ্রেস, শীর্ষনেতারা মুখে কুলুপ এঁটে গোটা ব্যাপারটাই ছেড়েছেন হাই কমান্ডের ওপর।
আমাদের হিসেব বলছে, সম্ভাব্য তালিকায় থাকছেন এঁরা:
রাজস্থান
অশোক গেহলোট: অভিজ্ঞতার অভাব নেই। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত, ফের ২০০৮ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত। রাজ্য রাজনীতিতে ফিরে এসে এই বর্ষীয়ান নেতা মুখ্যমন্ত্রীত্বের দাবী জানাতেই পারেন। এই নির্বাচনে সর্দারপুরা কেন্দ্র থেকে জিতেছেন তিনি। যদিও বর্তমানে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক প্রধান হিসেবে দলে যথেষ্ট উচ্চপদের অধিকারী এই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু রাজ্যে তরুণ কংগ্রেস নেতা শচীন পাইলটের সঙ্গে ক্ষমতার লড়াইয়ের জল্পনা সম্পূর্ণ নাকচ করে দিলেও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে নস্যাৎ করে দেন নি গেহলোট। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী তাঁকে যে দায়িত্বই দিন না কেন, দলের স্বার্থে তিনি তা পালন করতে রাজি।
শচীন পাইলট: আপাতদৃষ্টিতে গেহলোটের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি, শচীন হলেন প্রয়াত কংগ্রেস নেতা রাজেশ পাইলটের পুত্র। অনেকের মতেই তিনি মোটামুটি একা হাতেই কংগ্রেসকে রাজস্থানে আবার প্রাসঙ্গিক করেই তোলেন নি, ক্ষমতায়ও ফিরিয়ে এনেছেন। লোকসভার স্বরাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য শচীন অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের উপদেষ্টা কমিটিরও সদস্য ছিলেন। আজমের এবং দৌসা কেন্দ্র থেকে এর আগে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। গতকাল তিনি টংক কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী ইউনুস খানকে ৫৪,১৭৯ ভোটে পরাজিত করেন। প্রথমবার সাংসদ নির্বাচিত হন ২৬ বছর বয়সে, ৩১-এ হন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বর্তমানে রাজস্থান কংগ্রেসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৩৫ বছর বয়সে। রাহুল গান্ধী কি এই তরুণ তুর্কীকে বাছবেন রাজ্যে দলের মুখ হিসেবে?
আরও পড়ুন: পাপ্পু পাশ হো গ্যয়া, 'জনতা বুঝেছেন মোদীর প্রতিশ্রুতি মিথ্যা'
মধ্যপ্রদেশ
কমল নাথ: লোকসভায় দলের সবচেয়ে সিনিয়র এবং অভিজ্ঞ সদস্য, যাঁকে এই বিধানসভা নির্বাচনের আগে মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছিল। ১৯৮০ সালে সপ্তম লোকসভায় প্রথমবার সংসদ সদস্য হিসাবে নিৰ্বাচিত হওয়া কমল নাথ তারপর থেকে কখনও হারেননি, লোকসভায় রয়েছেন একটানা। মধ্যপ্রদেশে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সরকার গঠনের সময় রাহুল গান্ধী এই পোড়খাওয়া নেতাকে বেছে নিতেই পারেন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে।
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া: হার্ভার্ডের গ্র্যাজুয়েট, রাজরক্ত বইছে শরীরে। ২০০২ সালে লোকসভায় প্রবেশ গুনা কেন্দ্র থেকে জিতে, যে কেন্দ্র থেকে লড়তেন তাঁর বাবা, প্রয়াত মাধবরাও সিন্ধিয়া। ২০০৪ সালে পুনর্নিবাচিত হয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় যোগদান তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে।
শিবরাজ সিংহ চৌহানের শাসনের অবসান ঘটাতে রাজ্যের ১১৫ টি বিধানসভা কেন্দ্রে চষে বেড়িয়েছেন বলে সিন্ধিয়ার দাবি। কংগ্রেস জিতলে কি তিনি মুখ্যমন্ত্রীত্বের দৌড়ে অন্যতম দাবিদার? নির্বাচনের আগে এই প্রশ্নের উত্তরে জ্যোতিরাদিত্য জানিয়েছিলেন, ভোটের আগে এই কাল্পনিক প্রশ্ন অর্থহীন। মধ্যপ্রদেশের মসনদ কংগ্রেসের দখলে যাওয়া যখন একরকম নিশ্চিত, তখন প্রশ্নটা আর অর্থহীন নয়, বরং প্রাসঙ্গিক। রাহুল যদি সরকারের নেতৃত্বে চান তারুণ্যের দাপট, জ্যোতিরাদিত্যের মাথায় উঠতেই পারে মুখ্যমন্ত্রীর মুকুট।
আরও পড়ুন: "বিজেপিকে নিয়ে হতাশ মানুষ, বিধানসভার ফলাফল সে দিকেই ইঙ্গিত করছে"
ছত্তিশগড়
তমরধ্বজ সাহু: দুর্গ বিধানসভা থেকে নির্বাচিত এই ৬৯ বছর বয়সী সাংসদ প্রভাবশালী সাহু গোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ দলিত নেতা। সাহু এবার জিতেছেন দুর্গ (গ্রামীণ) কেন্দ্র থেকে। সাহু সমাজের উন্নতিকল্পে এবং 'রামায়ণ কথা'-র প্রসারে উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে এই নেতার, যিনি শক্তি, শিক্ষা এবং জলসম্পদ মন্ত্রকের দায়িত্ব অতীতে সামলেছেন ছত্তিসগড় সরকারে।
টিএস সিংদেও: ছত্তিসগড় বিধানসভার বর্তমান বিরোধী দলনেতা, অম্বিকাপুর কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত। এঁর নামও ঘোরাফেরা করছে সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে।
ভূপেশ বাঘেল: ছত্তিসগড়ের বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বাঘেল দুর্গ জেলার পাটান কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত। দিগ্বিজয় সিংয়ের মন্ত্রীসভায় রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে যোগদান ১৯৯৮-তে, পরিবহণ মন্ত্রকের পূর্ণ দায়িত্ব পান ১৯৯৯-তে। ২০০০-এর জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেন মধ্যপ্রদেশ সড়ক পরিবহন পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসাবে। যখন ছত্তিসগড় আলাদা রাজ্য হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে ২০০০-এর নভেম্বরে, বাঘেল পান রাজস্ব, জনস্বাস্থ্য কারিগরি এবং ত্রাণ মন্ত্রকের দায়িত্ব। যে দায়িত্বে ছিলেন ২০০৩ পর্যন্ত।