দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে আরও বিস্ফোরক উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল। জানিয়ে দিলেন, 'দলের পচা মুখগুলোকে সরাতে হবে। না হলে তৃণমূলে কোনও ভালো লোক থাকতে পারবেন না।' দলে অন্তর্কলহ বাড়ছে, এমনকী তৃণমূল নেত্রীর কথাতেও কাজ হচ্ছে না না বলে অকপট মমতা ঘনিষ্ট এই বিধায়ক। নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বোমা ফাটিয়ে তৃণমূলের সাংগঠনিক সব পদ থেকে মঙ্গলবার ইস্তফা দিয়েছেন প্রবীর ঘোষাল।
তবে, এখনই তৃণমূল বা বিধায়ক পদ ছাড়ছেন না উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক। এলাকাবাসীর কথা ভেবেই তাঁর বিধায়.ক পদ থেকে ইস্তফা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন প্রবীরবাবু। অপাতত, তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির সদস্যপদ ও জেলা তৃণমূলের মুখপাত্রের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন তিনি।
বিধায়কের ক্রমাগত 'দল বিরোধী' মন্তব্যের কারণে প্রবীর ঘোষালকে শো-কজ করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। একই সঙ্গে তাঁকে সতর্কও করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- ‘দলের লোকেরাই ভোটে হারানোর চেষ্টা করছে’, বিস্ফোরক তৃণমূল বিধায়ক
হুগলি তৃণমূলের সভাপতি দিলীপ যাদবের সঙ্গে প্রবীর ঘোষালের সম্পর্ক মধুর নয়। দিন কয়েক আগেই একটি রাস্তা মেরামতিকে কেন্দ্র করে সুর চরিয়েছিলেন উত্তরপাড়ার বিধায়ক। তাঁর নিশানায় ছিলেন শাসক দলের জেলা সভাপতির ভাই তথা কানাইপুর গ্রামপঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান আচ্ছেলাল যাদব। তাঁকে ভোটে হারাতে দলেরই একাংশ চক্রান্ত করছে বলে তোপ দাগেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে এদিন প্রবীবর ঘোষাল বলেন, 'গত সপ্তাহে রাস্তা মেরামতি সম্পর্কে ক্ষোভের কথা প্রকাশ্যে বলতেই দলনেত্রী সমস্যা সমাধানের জন্য পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু, নেত্রীর কথাও মানা হচ্ছে না। উল্টে আমাকেই বাজে কথা বলছেন দলের অনেকেই। এসব মেনে নেওয়া যায় না। আমি বিতর্কে থাকতে রাজি নই।'
আরও পড়ুন- এবার সময়সীমা বেঁধে মমতার বাড়িতে পদ্ম ফোটানোর চ্যালেঞ্জ শুভেন্দুর
এরপরই বিস্ফোরক অভিযোগ করেন তৃণমূল বিধায়ক। বলেন, 'দলের অন্তর্কগলের কারণেই লোকসভায় হুগলি আসনে তৃণমূল হেরেছে। এরপর সংগঠনে বদল এসেছে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি।' দলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাশ কমছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, 'নেত্রীর কথাই কেই শোনে না।' প্রশ্ন তোলেন প্রশান্ত কিশোরের ভূমি নিয়ে। সাফ জানান, 'পিকে এসেছে কিন্তু দলের কোন্দল কমার বদলে বেড়ে গিয়েছে।'
জোড়া-ফুলের সামনের সারিতে বহু 'বেনোজল' স্থান পাচ্ছে বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অভিযোগেরই প্রিধ্বনি এদিন শোনা গেল প্রবীর ঘোষালের মুখে। বললেন, 'দলে নোংরামি হচ্ছে। আমি এই রাজনীতিতে থাকতে পারছি না। দলের মধ্যে পচা মুখগুলোকে সরাতে হবে। না হলে তৃণমূলে কোনও ভালো লোক থাকতে পারবেন না।' তাঁর সতর্কতা, পচা মুখ না সরানো হলে এবার হুগলিতে তৃণমূলের ফল খারাপ হতে পারে।
আরও পড়ুন- ‘আর ফেরার চেষ্টা করবে না-নেব না’, ‘দলবদলু’দের কড়া বার্তা মমতার
মমতা একাধিকবার দলের 'বিদ্রোহী'দের বার্তা দিয়ে বলেছেন, 'যেতে চান তাড়াতাড়ি যান। তৃণমূল আপনাদের চায় না, বাংলা আপনাদের চায় না। তৃণমূলের টিকিট পাবে না জেনেই ওদের দলবদলের এত তাড়া।' তাহলে কী এবার ভোটে তাঁর টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই এত অকপট প্রবীরবাবু? জবাবে বিধায়ক বলেছেন, 'আমি আর ভোটে লড়তে চাই না। ইতিমধ্যেই সে কথা নেত্রীকে জানিয়ে দিয়েছি।'
তৃণমলে আগে থেকে 'বেসুরো'র তকমা জুটেছে প্রবীর ঘোষালের। এবার আরও চাঁচাছোলা তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যেয়র পুরশুড়ায় সভাতেও ডাক মেলেনি তাঁর। ফলে দলের সঙ্গে তাঁপর সম্পর্কের ফাটল স্পষ্ট। এই সুযোগে তাঁকে ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিজেপিতে যোগদানের জন্য প্রকাশ্যেই আহ্বান জানিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। এবার কী তবে পদ্ম পতাকা হাতে নিতে পারেন তৃমমূল বিধায়ক? উত্তরে প্রবীর ঘোষাল জানিয়েছেন, 'বিজেপির তরফে আমার কাছে কোনও প্রস্তাব আসেনি।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন