'গডসে দেশভক্ত।' ভোপালের সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুরের মন্তব্য ঘিরে বেকায়দায় বিজেপি। মোদী-শাহের বিরুদ্ধে নতুন অস্ত্র পেয়ে সরব কংগ্রেস সহ বিরোধীরা। তাই ঢোক গিলে এক কদম পিছিয়ে প্রজ্ঞাকে ক্ষমা চাইতে বলে বিজেপি নেতৃত্ব। সরিয়ে দেওয়া হয় সংসদীয় কমিটি থেকে। কিন্তু, বিরোধীদের চুপ করাতে এই পদক্ষেপই যে যথেষ্ট নয় তা বিলক্ষণ জানের গেরুয়া নেতৃত্ব। তাই কৌশলে এবার প্রতি আক্রমণের পথে গেরুয়া শিবির। সোনিয়া গান্ধী, মণিশঙ্কর আইয়ার ও শশী থারুরের বিভিন্ন সময়ের বক্তব্য তুলে ধরা হচ্ছে। পদ্ম শিবির মনে করেছে এতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা সম্ভব। প্রথমত, জনমানসে দলের ভাবমূর্তি সুধরে নেওয়া যাবে। দ্বিতীয়ত, মহারাষ্ট্র ভোটের পর কংগ্রেসের যে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়াস তাও বন্ধ করা যাবে।
আরও পড়ুন: উদ্ধব মুখ্যমন্ত্রী হতেই ফড়নবীশকে সমন
গডসেকে দেশভক্ত সার্টিফিকেট দেওয়ার পরে প্রজ্ঞা ভোপাল চলে যান৷ তাঁকে দলের তরফ থেকে অবিলম্বে দিল্লিতে আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়, লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা ভোপালের সাংসদকে জানিয়ে দেন যে, তাঁকে নিঃশর্তে ক্ষমা চাইতে হবে৷ তা না-হলে তিনি কড়া ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবেন৷ এর পরে শুক্রবার জিরো আওয়ারের শেষে প্রজ্ঞা বলেন, 'আমার বক্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে৷ গান্ধীজির প্রতি আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে৷' এর পরে অনেক কথা বলে প্রজ্ঞা ক্ষমা চান৷ বিরোধীরা এতে সন্তুষ্ট হননি৷ এর পরেই স্পিকারের ঢাকে সর্বদল বৈঠক হয়৷ বিরোধীদের দাবি অনুযায়ী স্থির হয়, প্রজ্ঞা অন্য কোনও প্রসঙ্গ উত্থাপন না-করে শুধুই ক্ষমা চাইবেন৷ ঠিক হয় আড়াইটের সময়ে তিনি ক্ষমা চাইবেন৷ সূত্রের খবর, তাঁকে ডেকে পাঠানোর পরে তিনি সংসদে এসে ক্ষমা চান৷
এর আগে শুক্রবার লোকসভার জিরো আওয়ারের শুরুর দিকে ক্ষমা চাইতে গিয়ে প্রজ্ঞা ঠাকুর আক্রমণ করেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীকে৷ তাঁর উদ্দেশ্য ছিল রাহুলের দিকে বিতর্কটি ঘুরিয়ে দেওয়া৷ বলেন, 'দেশের আগের সরকার ষড়যন্ত্র করে আমাকে জঙ্গি বলার চেষ্টা করেছে৷ কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি৷ একজন মহিলাকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে ধারাবাহিক অত্যাচার করা হয়েছে৷ আমার কোনও মন্তব্যে কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী৷' তার পরেই রাহুলকে নিশানা করে তাঁর অভিযোগ, 'এই সভার এক সাংসদ আমাকে জঙ্গি বলে উল্লেখ করেছেন৷ আদালতে দোষী প্রমাণিত না-হওয়া সত্ত্বেও আমাকে জঙ্গি বলা হয়েছে, এটি আইনত অপরাধ৷ একজন মহিলার সম্মানহানিও বটে৷' রাহুলের করা টুইটের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন প্রজ্ঞা৷
এর আগে লোকসভার প্রচারে প্রজ্ঞা গডসেকে নিয়ে এর আগেও মন্তব্য করেছেন। মোদী যে প্রজ্ঞার বিতর্কিত মন্তব্য পছন্দ করেননি তা আগেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু ভোপালের সাংসদ দমার পাত্রী নন। কিন্তু, পরিস্থিতি বদলেছে। হিন্দুত্ব-জাতীয়তাবাদ ইস্যুর ক্যারিশ্মা ম্লান হতেই বিভিন্ন রাজ্যের ভোট বা উপনির্বাচনে হোঁচট খাচ্ছে পদ্ম শিবির। হরিয়ানায় দল একক সংখ্য়াগরিষ্ঠতা পায়নি। মহারাষ্ট্রে ক্ষমতাচ্যূত ফড়নববীশ সরকার। বাংলাতেও তিন উপনির্বাচনে গো-হারা হার। ঝাড়খণ্ডে ভোট চলছে। দিল্লি ও বিহারে ভোট খুব দেরি নেই। এই অবস্থায় আর কোনও বিতর্ক চাইছেন না দিন দয়াল উপাধ্যয় মার্গের নেতারা। এমনকি এক নেতার কথায়, 'বিতর্ক জিয়িয়ে রাখাও উচিত নয়। তাতে যখন-তখন অস্থ পেয়ে যেতে পারে কংগ্রেস।'
আরও পড়ুন: নাথুরাম গডসেকে দেশভক্ত বলার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন প্রজ্ঞা, চাপের মুখে পড়ে জানাল বিজেপি
তবে বললেই তো বিজেপি বিরোধীতায় প্রজ্ঞার গডসে মন্তব্য ছেড়ে দেবে না কংগ্রে বা অন্য বিরোধীরা। এক্ষেত্রে প্রজ্ঞার লাইনে হেঁটেই প্রতি আক্রমণের কৌশল সাজিয়েছে গেরুয়া দল। যেমন এক নেতার কথায়, 'ঠাকুরের বিরুদ্ধে সত্যিই কোনও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ নেই। কিন্তু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে বাটলা হাউস এনকাউন্টারে যে সন্ত্রাসবাদী নিহত হন তার হয়ে কথা বলেছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। আবার, বর্তমানে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আইয়ার মুম্বই বিস্ফোরণের চাঁই ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। সংসদ হামলার আসামী আফজাল গুরুর ফাঁসি ভুল বলেছিলেন।' কংগ্রেসের প্রজ্ঞা পাশার দান ঠেকাতে জাতীয়বাদের জিগির তুলতে প্রস্তুত বিজেপি।
দিল্লি, বিহার বা ঝাড়খণ্ডের বাকি ভোটে 'কৌশলে' প্রচার করতে বলা হয়েছে। কংগ্রেস প্রজ্ঞার গডসে মন্তব্য তুললে পাল্টা সোনিয়া, থারুর, আইয়ারদের, জাতীয়তাবাদ বিরোধী মন্তব্য নিয়ে প্রচার চালানো হবে। আপাতত এই নির্দেশ-ই দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, জাতীয় উৎপাদনের বৃদ্ধিতে ধসের দায় কী এড়াতে পারবে গেরুয়া শিবির? সন্দিহান বিজেপি নেতৃত্বই।
Read the full story in English