Advertisment

তৃণমূলে পিকের কাজেও নজরদারি?

তৃণমূলের একাংশের দাবি, প্রশান্ত কিশোরের অফিসে সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত অভিষেক ঘনিষ্ঠ এক নেতা বসে থাকেন। তিনি সমস্ত কাজকর্ম পর্যালোচনা করেন। সেই রিপোর্ট যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
mamata banerjee, abhishek banerjee and prashant kishor

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রশান্ত কিশোর (এক্সপ্রেস ফোটো, ফাইল চিত্র)

দু - তিন মাস ধরেই বাংলার রাজনীতিতে জোর চর্চায় পিকে। রাজনীতি জগতের বাইরের লোকজন এই নাম শুনে চলচ্চিত্র বা ক্রীড়াজগতের কথা ভাবতে শুরু করে ছিলেন। যদিও প্রচারের ঢক্কা নিনাদে সেই ভুল ভাঙতে সময় লাগেনি। তাঁর পরিচালনায় ১০০ শতাংশ সাফল্য না এলেও তিনি ভোটগুরু। নেতা না হয়েও ভোটগুরু! যাই হোক এই প্রশান্ত কিশোরই যে ঘাসফুলের আশা-ভরসার জায়গা তাও নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তৃণমূল কংগ্রেস ও তার ঘোর বিরোধী বিজেপি দু-দলেই নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে আলোচনা যেন কিছুতেই থামছে না। রাজনীতির কারবারীদের মতে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে উতরে দেওয়ার জন্যই তাঁর বাংলায় আগমন। তৃণমূলের অন্দরের খবর, প্রশান্ত ও তাঁর দলবল আই প্যাকের সঙ্গে সর্বক্ষণ শলাপরামর্শ চালিয়ে যাচ্ছেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর খাস ঘনিষ্ঠ বসে থাকছেন আই প্যাকের দফতরে।

Advertisment

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে তৃণমূল কংগ্রেসের পুরনো ও অভিজ্ঞ নেতৃত্বের একাংশ অনেকটাই চুপসে গিয়েছেন। অনেকে বাধ্যবাধকতায় সক্রিয়তা দেখাচ্ছেন। দলের তাতে আদৌ কোনও লাভ হচ্ছে কি না তাও বড় প্রশ্ন। শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন, তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রায়শই প্রশান্ত কিশোর বৈঠক করছেন। দলের ভাগ্য নির্ধারণ করার জন্যে এটাই পথ বলে মনে করছে শীর্ষ নেতৃত্ব। এই নিয়েই দলের অন্দরে চলছে আলাপ-আলোচনা। তৃণমূল কংগ্রেস মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে আজ এই রাজনৈতিক অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাইরে অন্য কাউকে মেনে নিতে পারেন না দলের একটা বড় অংশ।

আরও পড়ুন ‘দিদিকে বলো’-র পর এবার তৃণমূল নেতাদের গতিবিধিতে নজর প্রশান্ত কিশোরের

কান পাতলেই শোনা যায়, একটা সময় তৃণমূলের তৎকালীন সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মুকুল রায় দলের রাশ ধরতে চেয়েছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন সরকারের কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, তখন এই প্রক্রিয়া চলছিল বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে। তাঁর হাত ধরেই যুব সভাপতি করা হয়েছিল দলবদল করে আসা কংগ্রেস বিধায়ক সৌমিত্র খানকে। পরে সৌমিত্র যোগ দেন বিজেপিতে। মুকুল পুত্র শুভ্রাংশুকেও নিয়ে আসা হয়েছিল যুব তৃণমূলের রাজ্য কমিটিতে। এছাড়াও দলবদলের মাধ্যমে বিভিন্ন দল থেকে লোক নিয়ে এসেছিলেন তিনি। তৃণমূল কংগ্রেসে মুকুল লবির ভির বাড়ছিল। এমন তথ্য কিন্তু ধীরে ধীরে পৌঁছেছিল তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। পরবর্তীতে সরকারের সঙ্গে ফের দলের হাল ধরেন মমতা। নেতৃত্বে বদল ঘটান। যুব তৃণমূলের সভাপতি করে দেন যুবার সভাপতি, নিজের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মিশিয়ে দেন যুব ও যুবাকে। পাকাপাকিভাবে নেতৃত্বে অভিষেক ঘটে যুবরাজের। দলের নানা অনুষ্ঠানে ও সাংবাদিক বৈঠকে অভিষেককে সামনে নিয়ে আসা হয়।

আরও পড়ুন ‘ব্যস্ত’ মুকুল-দিলীপ-বিজয়বর্গীয়, বঙ্গে পদ্ম ফোটানোর দায়িত্বে প্রশান্ত কিশোরের ‘বন্ধু’

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সামনে আসার পরে মুকুল রায় লবির শক্তি হারিয়ে ফেলে। পরে সারদা মামলা নিয়ে অন্য অধ্যায় শুরু হয়। কিন্তু যুবরাজকে নিয়েও রাজ্য এবং বিভিন্ন জেলা নেতৃত্বের একটা বড় অংশ প্রকাশ্যে অসন্তোষ না জানালেও তাঁকে মন থেকে মানতে পারেননি। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের আসনগুলোতে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। সেই জেলাগুলোর দায়িত্বে ছিলেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোটের ফল বেরোনোর পর যখন পর্যলোচনা চলে, তখন প্রায় সমস্ত দায়িত্ব থেকেই অভিষেককে অব্যহতি দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সেই সব জেলায় দায়িত্বে নিয়ে আসেন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে। কিন্তু এখন দলের অভ্যন্তরে প্রশ্ন উঠেছে আদৌ কি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়েছে? পরবর্তীতে দেখা যায় প্রশান্ত কিশোর যে বৈঠকগুলো করেছেন সেখানে হাজির অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। পিকে ও তাঁর টিমের যাবতীয় কাজকর্ম সম্পর্কে যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবগত, তেমনই একইসঙ্গে পুরো বিষয়টি নিয়ে অবগত থাকেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদও। অর্থাৎ তাঁকে কিছু জেলা থেকে পর্যবেক্ষক হিসেবে সরিয়ে দেওয়া হলেও সামগ্রিকভাবে দলের কার্যক্রমের সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। বিশেষত পিকে বাহিনীর নিত্য দিনের কাজ তাঁর নজরে থাকে বলেই খবর।

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বাইরের রাজনৈতিক পরিবেশ যাইহোক তৃণমূলের অন্দরমহল কিন্তু এই বিষয়ে সম্পূর্ণ অবগত রয়েছে। তাঁরা মনে করছে, ঘুরিয়ে দলের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই। পিকে একটি পর্দামাত্র। যদিও প্রকাশ্যে  এ নিয়ে নালিশ জানানোর মত, বা এ নিয়ে কথা তোলার ক্ষমতা একজন তৃণমূল নেতা-নেত্রীরও নেই, ক্ষোভপ্রকাশ তো দূরের কথা।

তৃণমূলের একাংশের দাবি, প্রশান্ত কিশোরের অফিসে সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত অভিষেক ঘনিষ্ঠ এক নেতা বসে থাকেন। তিনি সমস্ত কাজকর্ম পর্যালোচনা করেন। সেই রিপোর্ট যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, আপাতত এই ধরনের স্ট্র্যাটেজি নিয়েই চলতে চাইছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। একদিকে শুভেন্দু অধিকারী দলের নিচুতলায় কাজ করবেন। আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই ভাবেই দলকে পরিচালনা করবেন।

Mamata Banerjee tmc
Advertisment