রাফাল চুক্তির নামে ৩০ হাজার কোটি টাকা চুরি হয়েছে। সোজা কথা, চৌকিদার চোর। রাফাল মামলায় শুক্রবার সন্ধ্যায় স্পষ্ট করে দিলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। উল্লেখ্য, এদিন সকালে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, রাফাল চুক্তি প্রক্রিয়ায় আদালত সন্তুষ্ট এবং এ বিষয়ে তারা কোনও রকম হস্তক্ষেপ করবে না। রাফাল চুক্তিতে দুর্নীতি হয়েছে দাবি করে দায়ের হওয়া মামলা খারিজ করে দিয়ে আদালত আরও বলে, যুদ্ধ বিমানের দামের তুলনামূলক বিচার আদালতের কাজ না।
শীর্ষ আদালতের এমন সিদ্ধান্তে স্বস্তি ফিরে আসে পদ্ম শিবিরে। রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিসগড়ে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে চূড়ান্ত ব্যাকফুটে চলে যাওয়া মোদী-শাহের বিজেপিকে রীতিমতো অক্সিজেন দেয় শুক্রবারে আদালতের এই রায়। এরপর থেকেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং-সহ গেরুয়া শিবিরের একাধিক নেতা রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেসকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি করেন।
উল্লেখ্য, রাফাল চুক্তি আদতে দুর্নীতি, এমনটা দাবি করে দীর্ঘদিন প্রচার করে চলেছেন রাহুল। তবে বিজেপি স্বস্তি ফিরে পেলেও, সুপ্রিম রায়ের পর কংগ্রেস এ বিষয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়ে তদন্তের দাবি করে। প্রত্যাশিতভাবেই বিজেপি এই দাবি মানতে চায়নি। বরং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা বিশিষ্ট আইনজীবী অরুণ জেটলি এদিন সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করে কংগ্রেসের যৌথ সংসদীয় কমিটি গড়ার দাবি নস্যাৎ করে দেন এবং বলেন, এই কমিটির রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজ করার নজির রয়েছে। জেটলি আরও বলেন, এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম রায়ই সর্বোচ্চ।
আরও পড়ুন: রাফাল ডিল, কোন পক্ষের কী মত
জেটলি-সহ গেরুয়া ব্রিগেডের এমন দাবির মুখে শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করেন রাহুল গান্ধী। এদিন দৃশ্যত আত্মবিশ্বাসে ভরপুর সোনিয়া-তনয় বলেন, যে ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে সুপ্রিম কোর্ট এদিন রায় দিয়েছে, সেটাই এখনও হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের 'তিনটি লাইন' উদ্ধৃত করে রাহুল বলেন, আদালত জানাচ্ছে, রাফাল বিমানের দাম সংক্রান্ত বিষয় ভারতের অডিটর ও কম্পট্রোলার জেনারেল (সিএজি) পরীক্ষা করে দেখেছে এবং তা লোকসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিতেও (পিএসি) উল্লিখিত হয়েছে। ফলে বিষয়টি সর্বসমক্ষেই ('পাবলিক ডোমেইন') রয়েছে।
এরপরই সুর চড়ান রাগা। তাঁর পাশে বসা মল্লিকার্জুন খাড়গেকে দেখিয়ে সাংবাদিকদের এ বিষয়ে প্রশ্ন করতে বলেন। উল্লেখ্য, লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা খাড়গে, এবং পদাধিকার বলে তিনিই পিএসি-র চেয়ারম্যান। খাড়গে এ বিষয়ে কিছু জানেন কি না, সে প্রশ্নই করতে বলেন রাহুল। এরপর খাড়গে বলেন, তাঁর কমিটির হাতে রাফালের দাম সংক্রান্ত কোনও নথি আসেনি। তিনি আরও বলেন, এদিনই তিনি ডেপুটি সিএজি-কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেন এবং সেই আধিকারিক জানান, তাঁদেরও কিছু জানা নেই। এরপরই কটাক্ষের সুরে রাহুল প্রশ্ন করেন, "তাহলে কি অন্য কোনও পিএসি-র কাছে এই রিপোর্ট জমা পড়েছে? সেই পিএসি কি পিএমও থেকে পরিচালিত হয় না কি ফ্রান্সের আইনসভার পিএসি-তে জমা পড়েছে?"
রাফাল চুক্তি প্রসঙ্গে এদিন ফের কয়েকটি প্রশ্ন তুলেছেন রাহুল। তিনি জানতে চেয়েছেন: ৫২৬ কোটি টাকার রাফাল কেন ১৬০০ কোটি টাকায় কেনা হল? হিন্দুস্থান এরোনটিকস লিমিটেড (হ্যাল) কে ছেড়ে কেন অনিল আম্বানির সংস্থাকে বরাত দেওয়া হল? ব্যাঙ্গালোরে রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা হ্যালের যথেষ্ট পরিকাঠামো থাকার পরও কেন এই কাজ? ভারতের যুব প্রজন্মের রোজগার কেন কেড়ে নেওয়া হল? ৩,০০০ কোটি টাকার বৈদেশিক চুক্তি কেন হল?
আরও পড়ুন: সব চুক্তি বোফর্স নয়: রাফালে রায় প্রসঙ্গে বিজেপি মুখপাত্র
এসব প্রশ্নের কোনও উত্তর মোদী সরকার কেন দিচ্ছে না তা জানতে চান রাহুল গান্ধী। এরপরই তিনি বলেন, "ত্রিশ হাজার কোটি টাকা চুরি হয়েছে। কৃষকরা মনে রাখবেন, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিসগড়ে আপনাদের ঋণ মকুব হয়ে যাবে। কিন্তু, চোর যে পয়সা নিয়েছে, সেটা আসলে আপনাদের, অন্য কারও না। সোজা কথা, চৌকিদার চোর। যা বলার বলুক (বিজেপি), আমি প্রমাণ করে দেব, ভারতের প্রধানমন্ত্রী অনিল আম্বানির বন্ধু এবং তাঁকে দিয়ে চুরি করিয়েছেন। এটাই সত্যি। ভারতের মানুষ সত্যি কথাই পছন্দ করেন। মোদীজি আপনি যেখানে লুকোতে চান লুকিয়ে পড়ুন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারবেন না। যেদিন যৌথ সংসদীয় কমিটি তদন্ত করবে সেদিন কেবল দুটি নামই সামনে আসবে - নরেন্দ্র মোদী এবং অনিল আম্বানি।"
তিন রাজ্যের বিধানসভায় পর্যুদস্ত হওয়ার পর কোণঠাসা বিজেপি সুপ্রিম কোর্টের এদিনের রায়ে অনেকটা জল বাতাস পেয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ। অন্যদিকে, সম্প্রতি তিন রাজ্যে কংগ্রেসের জয়ের সব কৃতিত্ব পেলেও রাফাল রায় রাহুলকে বেকায়দায় ফেলবে বলেও মনে করা হচ্ছে। কারণ, রাফাল 'দুর্নীতি' নিয়ে মোদীকে বারংবার আক্রমণ করে চলেছেন রাহুল। কিন্তু, এদিন সন্ধ্যায় 'প্রত্যয়ী' রাহুল এ বিষয়ে নিজের পূর্বের অবস্থান থেকে এক চুল না নড়ে বরং যেভাবে আক্রমণকে আরও উচ্চগ্রামে নিয়ে গেলেন, তাতে রীতিমতো আলোড়িত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। এদিনের পর এ কথা স্পষ্ট, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে এই রাফালই হতে চলেছে অন্যতম বড় ইস্যু।