গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা নিয়ে আজ মঙ্গলবার প্রশাসনের সঙ্গে বিজেপির বৈঠকের ভিডিও জমা দেওয়ার নির্দেশ দিল বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর সিঙ্গল বেঞ্চ। পাশাপাশি বিচারপতি ওই যাত্রা কি ভাবে নিয়ন্ত্রিত করবে বিজেপি, তা লিখিত রিপোর্ট আকারে জমা দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। বুধবার ১২ টার মধ্যে দুটি রিপোর্ট জমা পড়ার পর ফের শুনানি চলবে আদালতে।
রথযাত্রা নিয়ে বিজেপির পরিবর্তিত তারিখেও ফের পরিবর্তন হতে পারে। হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে শুনানি চলছে বিজেপির কর্মসূচি নিয়ে। এদিন একইসঙ্গে আদালত জানিয়ে দিয়েছে, নতুন করে যাত্রার তারিখ উল্লেখ করতে। কারণ, এই শুনানি শেষ হতে দেরি হলে গণতন্ত্র যাত্রার যে তারিখ আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে সেই তারিখে শুরু হওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। তাই এই বিকল্প তারিখ চেয়েছে আদালত। উল্লেখ্য, বিজেপির যাত্রার সূচনার পরিবর্তিত সর্বশেষ তারিখ ছিল ২২, ২৪ ও ২৬ ডিসেম্বর। রথ যাত্রার সূচনার প্রথম তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল ৩, ৫ ও ৭ ডিসেম্বর।
আরও পড়ুন: রথযাত্রায় বিড়ম্বনা, তাই পদযাত্রায় ভরসা বঙ্গ বিজেপির
১৩ ডিসেম্বর লালবাজারে রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিক ও বিজেপি নেতৃত্বের মধ্যে গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ওই আলোচনা হয়েছিল হাইকোর্টের নির্দেশেই। ওই আলোচনারই ভিডিও জমা দিতে বলেছে হাইকোর্ট। ওই কর্মসূচির ওপর বিজেপি কিভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখবে, তাদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী কী থাকবে, এ বিষয়ে বুধবার আদালতে বন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন বিচারপতি চক্রবর্তী।
বিজেপির আইনজীবী এস কে কাপুর আদালতে সওয়াল করতে গিয়ে বলেন, "এটা তো কোনও ধর্মীয় সভা নয়। বারেবারে এটাকে সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিতে চাইছে রাজ্য প্রশাসন। এটা তো রাজনৈতিক কর্মসূচি। প্রশাসন বজরঙ্গ দল, আরএসএসের উল্লেখ করেছে তাদের চিঠিতে। এই সংগঠনগুলো প্রত্যেক রাজ্যেই মিছিল মিটিং করে। কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি। যদি এরা যাত্রায় যোগও দেয় তাহলে এখানে কেন সমস্যা হবে?" রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত তখন আদালতে বলেন, "ওঁরা মৌখিক ভাবে বলছেন। এ বিষয়ে হলফনামা জমা দিন।"
আরও পড়ুন: ‘দুহাজার উনিশ, বিজেপি ফিনিশ’
সোমবার বিজেপির রথযাত্রা নিয়ে জোড়া মামলা দায়ের হয়েছিল হাই কোর্টে। এর আগে ৭ ডিসেম্বর কোচবিহার থেকে বিজেপির গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা সূচনার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আদালতের রায়ের পর আর সেই যাত্রা শুরু হয়নি, আসেন নি দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। যদিও আগের দিন সভা হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বিপরীত মন্তব্য করেছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়। শেষমেশ বিজেপি নেতৃত্ব সেদিন জানিয়ে দেন, তাঁরা আদালতের রায় মেনেই সভা করছেন না। আদালতের নির্দেশ মেনেই গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা করবে গেরুয়া শিবির।
১৫ ডিসেম্বর রাজ্য প্রশাসন বিজেপির রাজ্য দপ্তরে চিঠি মারফত জানিয়ে দেয়, রথযাত্রা বা গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রার অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ হিসাবে নানা বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। ওই চিঠিতে এক জায়গায় বলা হয়েছে, এই যাত্রার দরুন সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়াতে পারে। এই যাত্রা শুরু হওয়ার পর তাতে যোগ দিতে পারে বজরঙ্গ দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মত সংগঠনও। তাছাড়া, এই সময়ে উৎসবের মরসুম। তাই বিজেপির ওই কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে না। হাতিয়ার করা হয় গোয়েন্দা দপ্তরের পাঠানো রিপোর্টকে। সোমবার ফের অনুমতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় বিজেপি।