হিন্দি বলয়ের হৃদয়ে মোদী! আবারও এই মিথ একেবারে একশোয় একশো পেয়ে সসম্মানে উত্তীর্ণ। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীশগড়, রাজস্থানে গেরুয়া ঝড়ে লন্ডভন্ড দশা কংগ্রেস-সহ বিরোধীদের। তিন রাজ্যেই কংগ্রেসের সঙ্গে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিল বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনের আগে এই তিন রাজ্যের নির্বাচনী লড়াইকে 'অ্যাসিড টেস্ট' বলে দেগে দিয়েছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং ছত্তীশগড়ে গেরুয়া দলের বাজিমাতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নয়া অঙ্ক কষতে শুরু করে দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, এবার লোকসভা নির্বাচনের জন্য আরও উচ্চতর লক্ষ্যে পৌঁছনোর চেষ্টায় প্রস্তুতি শুরু করে দিল পদ্ম শিবির।
গেরুয়া ঝড়ে তিন রাজ্যে কার্যত খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে কংগ্রেস। বিকেল ৩.২০ পর্যন্ত যে নির্বাচনী পরিসংখ্যান প্রকাশিত তাতে দেখা যাচ্ছে ১৯৯ আসনের রাজস্থান বিধানসভায় বিজেপি একাই এগিয়ে ১১৪টি আসনে। কংগ্রেস মরুরাজ্যে এগিয়ে রয়েছে ৭০টি আসনে। অন্যদিকে ৯০ আসনের ছত্তীশগড় বিধানসভায় বিজেপি এগিয়ে ৫৪টি আসনে, কংগ্রেস ৩৩টিতে। ছত্তীশগড়ও হাত ছাড়া হওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র। যে মধ্যপ্রদেশে এবার কংগ্রেসের সম্ভাবনা নিয়ে এত আলোচন চলছিল, সেখানেও ফের একবার গেরুয়া ঝড়। ক্ষমতাসীন বিজেপি ২৩০ আসনের মধ্যপ্রদেশে এগিয়ে ১৬০টিতে। কংগ্রেস সে রাজ্যে এগিয়ে ৬৮টি আসনে। অর্থাত হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে দাঁত ফোটাতেই পারেনি কংগ্রেস।
একমাত্র তেলেঙ্গনাতেই সাফল্যের মুখ দেখেছেন সোনিয়া-রাহুলরা। সেখানে বিরোধী দল ভারত রাষ্ট্র সমিতির (বিআরএস) বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ে নেমেছিল হাত শিবির। এই দলটি বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটে যোগ দিতে অস্বীকার করেছিল। বিজেপি-বিরোধী এবং কংগ্রেস-বিরোধী শক্তিকে একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্মে একত্রিত করে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছিল কেসিআর-এর দল। তবে সাফল্য আসেনি এবার। এর আগে কর্ণাটকেও হারের মুখ দেখেছিল বিজেপি। ফের একবার দক্ষিণের রাজ্যেই বিরাট বিপর্যয়। তাই লোকসভা ভোটের আগে বিজেপিকে তার দক্ষিণী কৌশল নিয়ে আরও বেশি সচেতন হতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
হিন্দি বলয়ে কোন বিষয়টি এগিয়ে রাখল বিজেপিকে?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলিতে দলের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য সূক্ষ্ম পরিকল্পনার রূপায়ন কাজে দিয়েছে। বিজেপির সূত্রগুলি বলেছে যে কংগ্রেসের 'গ্যারান্টি' রাজনীতির মোকাবিলায় মোদীর 'গ্যারান্টি'গুলিতে আরও বেশি মনোনিবেশ করেছেন ভোটাররা। একদিকে বিজেপির কৌশল এবং সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলির মধ্যে কংগ্রেস যে ধরনের প্রচার চালিয়েছিল, তার পাল্টা হিসেবে তুষ্টিকরণের রাজনীতির অভিযোগ আউড়ে তেড়েফুঁড়ে গেরুয়া প্রচার বেশ কাজে দিয়েছে। তাতেই ফের একবার হিন্দি বলয়ে বিরাট সাফল্যের মুখ দেখেছে পদ্ম শিবির।
আরও পড়ুন- তেলেঙ্গনার মন পড়তে ‘মাস্টারপ্ল্যান’ রেডিই ছিল কংগ্রেসের! কোন ম্যাজিকে কেল্লা ফতে?
ভোটের ফল নিয়ে বিজেপির মত…
বিজেপির মতে, আজকের ভোটের ফল এটিই দেখায় হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে একটি শক্তিশালী দ্বিতীয় স্তরের নেতৃত্ব আনতে অক্ষমতা সত্ত্বেও বর্তমান জাতীয় নেতৃত্ব - মোদী, শাহ এবং পার্টির সভাপতি জে পি নাড্ডা - দলের ক্যাডারদের শক্তিশালী করতে অত্যন্ত সফল হয়েছেন। তাঁদের বাতলে দেওয়া ছকই শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে এই তিন রাজ্যেই একটি বিশাল ব্যবধান রেখে জয় আনতে সাহায্য করেঠে দলকে।
আরও পড়ুন- ফুৎকারে উড়ল প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার স্বর! মধ্যপ্রদেশে কোন ‘দাওয়াই’-এ ফের ‘ফিট’ বিজেপি?
দাঁতে দাঁত চেপে কেন্দ্রের শাসকদলের বিরুদ্ধে শেষ অবধি প্রচার চালিয়ে যাওয়ার জন্য কংগ্রেসের কাছে তেমন মেশিনারি ছিল না। দলের সাংগঠনিক ব্যর্থতাই এক্ষেত্রে অনেক বেশি দায়ী। বিজেপিকে ব্যাকফুটে ঠেলতে ইস্যুভিত্তিক বিরোধিতা তুলে ধরার ক্ষেত্রেও কংগ্রেসে খামতি ছিল। অন্যদিকে, সময় যত এগিয়েছে বিজেপি কিন্তু তার বুথ-স্তরের কর্মীদের ভোটারদের একত্রিত করার জন্য ক্যাডারদের চাপ দিতে সক্ষম হয়েছিল।
'সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কংগ্রেসের অসুবিধা'
প্রবীণ বিজেপি নেতা পি মুরলিধর রাও মধ্যপ্রদেশে দলের নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর মতে, তিনটি রাজ্যে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল বিজেপির। নির্বাচনের এই ফলাফলে তাই দারুণ উত্সাহিত হয়েছেন কর্মীরা। সরাসরি লড়াইয়ে লড়াইয়ে নেমে কংগ্রেস প্রার্থীদের হারিয়ে বিজেপি প্রার্থীদের বিপুল জয়ে দারুণ উত্সাহিত কর্মীরা। তাঁদের এই উত্সাহ আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনেও বড়সড় প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন তিনি। বিজেপির সঙ্গে সরাসরি লড়াইয়ে ভোট-ভাগজনিত সমস্যা তৈরি না হওয়ায় কংগ্রেসের অসুবিধাই হয়েছে বলে মনে করছে অনেকে।
আরও পড়ুন- কৌশল তৈরিতে মরিয়া কংগ্রেস, ফলাফল সামনে আসতেই ‘ইণ্ডিয়া’ জোটের পরবর্তী বৈঠকের দিন নির্ধারণ