তৃণমূল বনাম সব্যসাচী সংঘাত নয়া মোড় নিল। শেষ পর্যন্ত বিধাননগরের মেয়র পদ থেকে বৃহস্পতিবার ইস্তফা দিলেন সব্যসাচী দত্ত। পুরসভার চেয়ারপার্সন, কমিশনার ও ৩৯ জন কাউন্সিলরকে ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন বলে এদিন জানান সব্যসাচী দত্ত। সব্যসাচীর ইস্তফা ঘিরে জোর জল্পনা বঙ্গ রাজনীতিতে। তাহলে কি সব্যসাচীর বিজেপিতে যোগদান স্রেফ সময়ের অপেক্ষা? যদিও এদিনও এ প্রশ্নের জবাব অত্যন্ত কৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক। এদিনও সব্যসাচী জানান, ‘‘এখনই এ বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা হয়নি, দেখা যাবে’’। দলের সদস্যপদ কি ছাড়ছেন? এ প্রসঙ্গে সব্যসাচী বলেন, ‘‘এখনই এ বিষয়ে কিছু ভাবিনি’’।
আরও পড়ুন: হাইকোর্টের রায়ে উচ্ছ্বসিত সব্যসাচী, বিধাননগর পুরনিগমে তৃণমূল কাউন্সিলরদের জরুরি বৈঠক
ইস্তফা প্রসঙ্গে কী বললেন সব্যসাচী দত্ত?
এদিন সাংবাদিক বৈঠক করে রাজারহাট-নিউটাউনের তৃণমূল বিধায়ক জানান, ‘‘মানুষের পাশে থেকে আমি যে কথা বলেছি, আগামী দিনেও যতদিন বাঁচব, ততদিন আমি বলে যাব। বিধাননগরে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ অসৎ কাজে যুক্ত। রাজারহাট-গোপালপুর অঞ্চলে বেআইনি কাজে বাধাদান করছিলাম। বিশেষত, জলা ভরাট করা হচ্ছিল। বেআইনি নির্মাণে বাধা দিচ্ছিলাম। এ নিয়ে পিটিশনেও দাখিল করেছি। রাজ্য সরকারের দফতরেও জানিয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছিলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও সদিচ্ছা দেখতে পাইনি। এই পরিস্থিতিতে এখানে থেকে আন্দোলন করা সম্ভব নয়। মানুষের দ্বারা মনোনীত পৌর প্রতিনিধি এবং পৌর প্রতিনিধিদের দ্বারা নির্বাচিত মেয়র হিসেবে পুর আইন রক্ষা করতে যদি না পারি, সে পদে থাকার মানে হয় না। তাই ইস্তফা দিচ্ছি’’।
আরও পড়ুন: ‘‘সব্যসাচীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হিম্মত নেই মমতার’’
উল্লেখ্য, বেশ কয়েকদিন ধরেই নিজের দল তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে সব্যসাচীর সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছিল। কয়েকদিন আগে বিদ্যুৎভবনে সরকারি কর্মচারী ইউনিয়নের বিক্ষোভে অংশ নিয়ে দলেরই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন সব্যসাচী। এরপরই সব্যসাচীকে কোণঠাসা করার প্রক্রিয়া শুরু করে তৃণমূল নেতৃত্ব। বিধাননগরের মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন ৩৫ জন কাউন্সিলর। অনাস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন সব্যসাচী। সেই মামলায় সব্যসাচীকে স্বস্তি দিয়ে হাইকোর্ট বিধাননগর পুরনিগমে আস্থা ভোট বাতিল করার নির্দেশ দেয়। তার পরের দিনই মেয়র পদ থেকে সব্যসাচীর সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। অনাস্থা নিয়ে হাইকোর্টের রায়কে এদিন ‘নৈতিক জয়’ বলে বর্ণনা করেছেন সব্যসাচী।
আরও পড়ুন: সব্যসাচীকে লড়াইয়ের কৌশল বাতলে দিলেন মুকুল রায়
অন্যদিকে, সব্যসাচীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ হওয়ার পরই আসরে নেমেছিলেন একদা তৃণমূলের ‘ডান হাত’ তথা বর্তমান বিজেপি নেতা মুকুল রায়। অনাস্থা পেশের পরই সব্যসাচীর সঙ্গে দুবার বৈঠক করেন মুকুল রায়। যে বৈঠক ঘিরে তুমুল চর্চা চলে বঙ্গ রাজনীতিতে। সাংবাদিকদের মুকুল এও জানান, ‘‘সব্যসাচীকে পরামর্শ দিলাম। লড়াইয়ের স্ট্র্যাটেজি বলে দিলাম’’। মুকুল রায়ের সেই ‘স্ট্র্যাটেজি’ মেনেই অনাস্থা নিয়ে সব্যসাচী আইনি লড়াইয়ে শামিল হয়েছিলেন বলে ব্যাখ্যা রাজনীতির কারবারীদের একাংশের। এদিন সব্যসাচীর ইস্তফার নেপথ্যেও ‘দাদা’ মুকুলের পরামর্শ থাকতে পারে পারে বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।