দলের রাজ্য কমিটি নিয়ে বঙ্গ বিজেপির অন্দরে চরম কোন্দল। দিন যত এগোচ্ছে ততই যেন তা প্রকট হচ্ছে। হোয়াটঅ্যাপ গ্রুপ ত্যাগ, প্রকাশ্যে রাজ্য বিজেপির ক্ষমতানীন নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দাগার পর শনিবার কার্যত বোমা ফাটালেন মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর।
কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের গেস্ট হাউসেই দলের বিক্ষুব্ধদের নিয়ে বৈঠকে বসেন শান্তনু ঠাকুর। সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন দলের প্রাক্তন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু থেকে সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের মতো নেতারা। ছিলেন, রীতেশ তিওয়ারি, তুষার মুখোপাধ্যায়, দেবাশিস মিত্র, বিধায়ক সুব্রত ঠাকুররাও। বৈঠক শেষে শান্তনুর দাবি, 'নয়া রাজ্য কমিটি গঠনের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতারা আখের গুছিয়ে নিচ্ছেন।' তাঁর প্রশ্ন, 'যেসব নেতৃত্ব রাজ্য়ে বিজেপিকে ২ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে নিয়ে গেলেন, কীভাবে তাঁদের ৯০ শতাংশকে বাদ দিয়ে রাজ্য কমিটি তৈরি হল?' সাংসদের অভিযোগ, 'কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল বার্তা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজ্য কমিটি তৈরি হয়েছে।'
কী বলেছেন শান্তনু ঠাকুর?
'বিজেপি ও মোদীজির হাত শক্ত করাই লক্ষ্য। কিন্তু বিজেপির রাজ্য কমিটি দেখে মনে হচ্ছে না সেই কমিটি দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। শীর্ষ নেতাদের ভুল বার্তা দিয়ে এই কমিটি তৈরি হয়েছে। বঙ্গ বিজেপির নতুন কমিটিতে ক্ষতি হচ্ছে দলের। দলকে কুক্ষিগত করতে চাইছেন সংগঠনের এক নেতা। মনে হচ্ছে, অন্য দলের সঙ্গে যোগ রয়েছে ওই নেতার। অন্য ক্ষমতাশীন নেতারা আখের গোচ্ছাচ্ছেন। এই অপচেষ্টা বানচাল করবই।'
পাশাপাশি গেরুয়া শিবিরের নয়া রাজ্য কমিটিতে মতুয়াদের বাদ না রাখা নিয়েও সরব হন বনগাঁর সাংসদ। তাঁর দাবি, শুধু মতুয়া নয়। কমিটিতে স্থান মেলেনি অনগ্রসর, তফসিলি জাতি-উপজাতিদেরও। শান্তনু ঠাকুরের সংযোজন, 'যেসব নেতৃত্ব রাজ্যে বিজেপিকে ২ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে নিয়ে গেলেন,তাঁদের ৯০ শতাংশকে বাদ দিয়ে নতুন রাজ্য কমিটি তৈরি হল। এরা আসলে বিজেপিকে নষ্ট করার খেলা শুরু করেছে।'
আরও পড়ুন- বঙ্গ বিজেপির বাদ পড়াদের নজরে উদ্বাস্তু হিন্দুরা, বৈঠকের পর বৈঠক!
তবে 'একজন ব্যক্তি' বলতে তিনি কাকে বোঝাতে চেয়েছেন তা এদিন খোলসা করেননি 'বিদ্রোহী' নেতা শান্তনু ঠাকুর। তবে তাঁর নিশানায় যে বর্তমানে যিনি রাজ্য বিজেপির সংগঠনের দায়িত্বে তাঁর দিকেই- ইঙ্গিতে তা বুঝিয়েছেন এই সাংসদ।
তাহলে কী পার্টি ছাড়বেন তিনি? হুঁশিয়ারির সুরে মতুয়া সঙ্ঘাধিপতির জবাব, 'ইতিমধ্যেই সব কথা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছি। কিন্তু বোমাব্লাস্ট মানেই দল ছাড়া নয়। তবে দলের কতিপয় নেতার কুক্ষিগত ক্ষমতা ভাঙতে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।'
আরও পড়ুন- ‘প্রকাশ্যে বিবৃতি নয়, শৃঙ্খলা ভাঙলে কঠোর পদক্ষেপ’, কল্যাণদের সতর্ক করলেন পার্থ
রাজ্য কমিটি নিয়ে তরজার মাঝেই গতকয়েকদিন ধরে বাদ যাওয়া বিজেপি নেতারা পৃথক বৈঠক করছিলেন। ইঙ্গিত ছিল জোড়াল বিদ্রোহের। পোর্ট ট্রাস্টের শনিবাসরীয় 'বিদ্রোহী'দের সভায় তারই যেন সুর বাঁধা হল।
যদিও একে বিদ্রোহ বলে দেখছেন না রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেছেন, 'এসব সাংগঠনিক সমস্যা। আমরা আলোচনা করে সব সমস্যার সমাধান করে নেব।'