রাজ্য বিধানসভায় কংগ্রেস এবং সিপিএম তথা বামেরা হরিহর আত্মা। বিলের বিরোধিতা থেকে বিক্ষোভ, ওয়াক আউট, সবেতেই তারা একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বক্তব্য়ের ঝাঁঝ কার কত বেশি তা নিয়ে রীতিমত প্রতিযোগিতা চলে। অন্য় দিকে যে সংখ্য়ায় কংগ্রেস বিধায়ক তৃণমূল ভাঙিয়ে নিয়েছে তাতে কংগ্রেসের বিরোধী দলের তকমা থাকার কথা নয়। এখানে এখনও মমতা-অধীর বাকযুদ্ধ জারি রয়েছে। কিন্তু দিল্লিতে তৃণমূল সুপ্রিমো গেলেই সনিয়ার দরজা খোলাই থাকে। এবার তো সনিয়া এবং রাহুল, দুজনের সঙ্গেই খোস মেজাজে গল্প করেছেন। রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে তা বৈঠক থেকে বেরিয়ে জানিয়েও দিয়েছেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী কিন্তু সনিয়া-মমতা সাক্ষাতকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি তার আগের মনোভাব থেকে সরে এসেছেন তাও নয়। অধীর বলেন, "সনিয়া গান্ধির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন, তিনি কি বলতে পারেন, আমার সঙ্গে দেখা করতে এসো না? আর কিছুই হয়নি। লোকসভা ভোট এলে দেখা যাবে। নিয়মিত কংগ্রেস বিধায়ক ভেঙে নিয়ে ঘর ভর্তি করছে তৃণমূল। এরাজ্য়ে কংগ্রেস ভাঙছে তার জন্য় আমরা প্রতিবাদও করছি। আমরা তো বসে নেই। আমরা মমতা বন্দ্য়োপধ্য়ায়ের দালালি করতে যাইনি কোথাও।"
আরও পড়ুন: এখানে বিরুদ্ধে ভোট দিলে দিল্লিতে সমর্থন নয়, কংগ্রেসকে হুঁশিয়ারি মমতার
অনেক সময়ই দিল্লিতে প্রদেশ নেতারা নানা কারণে সনিয়া বা রাহুল গান্ধির সঙ্গে দেখা করতে যান। তিনি সাংসদ হোন বা বিধায়ক, দেখা করতে গেলে হা-পিত্য়েশ করে বসে থাকেন। দু'মিনিট দেখা করার জন্য় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। তা ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করেছেন রাজ্য় কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতা। এই নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতার মন্তব্য়, "এটাই দলের এখন বড় সমস্য়া। ভাঙতে ভাঙতে দূরবীনে দেখার অযোগ্য় হয়ে উঠেছে। দিল্লিতে গিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পর্যন্ত থাকে না। মাঝে শুধু রাহুল গান্ধির সঙ্গে বৈঠকে মতামত দিতে হয়েছিল কার সঙ্গে জোট চাই আমরা। কিন্তু বিজেপি বিরোধিতার নামে এই ধরনের বৈঠক হলে রাজ্য় কংগ্রেসের সংগঠন আরও তলানিতে গিয়ে ঠেকতে বাধ্য়।"
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এ রাজ্য়ে কার সঙ্গে জোট করবে এটাই এখন বড় প্রশ্ন। কারণ, মমতা স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ৪২টি আসনে তৃণমূল একাই লড়বে। তাঁর আগ্রহ দেশের অন্য় রাজ্য়ের সঙ্গে বৃহত্তর জোট নিয়ে। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের একটা বড় অংশ সিপিএমের সঙ্গে জোট করতে চাইছেন। এবার যারা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী, তাঁদের নিয়ে গুঞ্জন, তৃণমূলপন্থী কংগ্রেসিরা আসলে তৃণমূলে ভিড়তে চান। রাজ্য় কংগ্রেসে মধুর ভান্ডার শেষ।
আরও পড়ুন: NRC নিয়ে বক্তব্যের জেরে মমতার নামে পুলিশে অভিযোগ
এদিকে পাঁচজন কংগ্রেস বিধায়ক ২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ দিবসের মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন। তাঁরা তৃণমূলে যোগ দিলেও বিধান সভায় এখনো বসছেন পুরনো আসনে। কংগ্রেস নেতৃত্ব এখানে দলবদলের ফল ভবিষ্য়েতের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। প্রবীণ কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, "এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক অবক্ষয়। গণতন্ত্রের অমর্যাদা। এভাবে দলবদল সভ্য় গণতান্ত্রিক রীতিনীতি নয়। ইতিহাস কিন্তু কাউকে ছাড়ে না। ত্রিপুরায় কংগ্রেস বিধায়কদের ভাঙালো তৃণমূল, তাঁরা সব চলে গেলেন বিজেপিতে।"