যে দিকেই দেখা যায়, ডানে-বায়ে-ওপরে সর্বত্র সূর্যের ঝলকানি। লক্ষ লক্ষ সূর্য উঠেছে দক্ষিণ দমদম পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে। সারাবছর কীভাবে মানুষের পাশে থাকেন নির্দল প্রার্থী, তার বর্ণনা মিলবে ব্যানারগুলিতে। এদিকে এই ওয়ার্ডে বিজেপি, কংগ্রেস ও সিপিএম প্রার্থীর নাম ব্যানারে খুঁজে পাওয়া গেলেও তৃণমূল প্রার্থীর নাম খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য বিষয়। তবে তৃণমূল প্রার্থীর বক্তব্য, 'বাড়ি বাড়ি প্রচারের ওপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।' সকলের নজর এখন দমদমের এই ওয়ার্ডে।
দমদম স্টেশন থেকে অনতিদূরেই দক্ষিণ দমদম পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ড। জপুর রোড, ৩ হরকালি কলোনী, ৪ দাগা কলোনী, তানোয়ার কলোনীসহ ওয়ার্ডের অলিতে-গলিতে শুধুই সূর্য চিহ্নে ভোট দেওয়ার আবেদন। সাদার ওপরে লালে লেখা। ব্যানার, ফেস্টুন, দেওয়াল লিখন সবেতেই শতগুনে অন্য প্রার্থীদের এগিয়ে রয়েছেন দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, এখানকার নির্দল প্রার্থীর প্রচার দেখলে সারা রাজ্যের তৃণমূলসহ অন্য রাজনৈতিক দলের পুরপ্রার্থীরা ঈর্ষান্বিত হতে পারেন! প্রচারের ঢক্কানিনাদে ১০৮টি পুরসভার যে কোনও প্রার্থীকে টেক্কা দিতে পারে এই সূর্য চিহ্নের প্রচার। তবে নির্দল প্রার্থী এখানে নিজে প্রচারে বের হচ্ছেন না। নির্দলদের নিয়ে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের হুঁশিয়ারির পর আর নাকি কোনওরকম প্রচার করেননি ওই নির্দল প্রার্থী। প্রার্থীর ঘনিষ্ঠ মহল জানিয়েছে, নির্বাচন সংক্রান্ত অফিসিয়াল কাজকর্ম করা হচ্ছে। তবে কোনওরকম প্রচার করা হচ্ছে না। যা হয়েছে তা আগের প্রচার। নির্দল প্রার্থীর অনুগামীরা নিজেদের তৃণমূল বলেই দাবি করছেন।
রাজনৈতিক মহলের মতে, দক্ষিণ দমদম পুরসভার এই ওয়ার্ডে লক্ষ লক্ষ সূর্য সমাগম জানান দিচ্ছে নির্দল প্রার্থীর প্রচারের ধক কতটা। এই ওয়ার্ডে দেওয়াল লিখনে ঘাসফুলের অস্তিত্ব থাকলেও প্রার্থীর নাম খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না প্রচারে। ফেস্টুন, ব্যানার বা দেওয়াল লিখনে দেখা গেল না তৃণমূল প্রার্থীর নাম। এদিকে তৃণমূল প্রার্থী অজয় মুখার্জী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'আমি বাড়ি বাড়ি প্রচারের ওপর বেশি জোর দিচ্ছি। আমার সঙ্গে এখানে লড়াই হবে নির্দল প্রার্থীর। তিনি এক্স কাউন্সিলর। তবে এই ওয়ার্ডে বিজেপিও একটা ফ্যাক্টর। মানুষের মনে কী আছে তা এখন বলতে পারব না।' এখানে হেভিওয়েট নির্দল প্রার্থী নিজে প্রকাশ্যে প্রচার না করলেও ব্যানার, ফেস্টুনে প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছেন। এই ওয়ার্ডে ভোট নিয়ে কথা উঠলেই মুখে কুলুপ আঁটছেন বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ। তবে যেভাবে নির্দল প্রার্থীর গুনগান করছেন কেউ কেউ তাতে তৃণমূল প্রার্থী যে যথেষ্ট চাপে রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে তৃণমূল প্রার্থীর বিশ্বাস, 'সিম্বল একটা ফ্যাক্টর। নির্দল প্রার্থীকে হারানো খুব কঠিন নয়।' জয়ের বিষয়ে আশাবাদী অজয়বাবু।
তৃণমূল সূত্রের খবর, রাজ্যের এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ট ছিলেন চেয়ারম্যান পরিষদের প্রাক্তন সদস্য দেবাশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়। খাদ্যমেলা নালে-ঝোলেসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজক দেবাশিস ওরফে ফুচুদা। দেবাশিসবাবুর বাড়ি নিয়ে দলের অভ্যন্তরেই একসময় নানা প্রশ্ন উঠেছিল। তাঁর ঘনিষ্টমহল জানিয়েছে, সে বিষয়েও লিখিত জবাব দেওয়া হয়েছিল দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। কেন দেবাশিসবাবুকে পুরপ্রার্থী করা হল না তা নিয়ে এখনও ওয়ার্ডে আলোচনায় মশগুল তৃণমূলের নীচুতলার কর্মীরা। তবে নির্দল প্রার্থী নিজেই চুপ। নিজে সশরীরে কোনও প্রচার করছেন না। দেবাশিস বন্দ্যাোপাধ্যায়ের বক্তব্য, 'আমি প্রচার করছি না। বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি না। ফল বের হলে দেখা হবে।' ওয়ার্ডে অনেকেই বলছেন ২৭ তারিখ খেলা হবে।