Advertisment

বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত শোভন-বৈশাখীর, 'অপমান সহ্য করে পুরানো দলেই থাকা যেত'!

‘‘শোভনবাবুকে ডাকলে বৈশাখীকেও ডাকতে হবে সবসময়। এটা বিজেপি দলে হয় না। এটা তৃণমূলে হয়। আমাদের দলে এসব হবে না’’।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
sovan, baisakhi, শোভন, বৈশাখী

বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত শোভন-বৈশাখীর। অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস।

বিজেপিতে যোগ দিতে না দিতেই বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘‘আমদের নিষ্কৃতি দেওয়া হোক’’, এ ভাষাতেই শনিবার 'মোহভঙ্গে'র কথা জানান বৈশাখী। সংবাদমাধ্যমে বৈশাখীকে এ কথা বলতে শোনা গেলেও তিনি যে তাঁর ও শোভনবাবুর কথা বোঝাতেই 'আমাদের' শব্দটি ব্যবহার করেছেন, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisment

বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছেই যে তাঁরা এই 'নিষ্কৃতির আর্জি' জানিয়েছেন, সে কথাও এদিন জানিয়ে দিয়েছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি নেতৃত্বের উপর ক্ষোভ থেকেই যে এই সিদ্ধান্ত তা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন অধ্যাপিকা তথা শোভনের বান্ধবী বৈশাখী। গত বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ের সঙ্গে বৈঠক হয় শোভন-বৈশাখীর। সেই বৈঠকেই এই ‘চরম সিদ্ধান্ত’ বৈশাখী নেন বলে খবর। জানা যাচ্ছে, বান্ধবী বৈশাখীর পাশে দাঁড়িয়ে এই একই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একদা প্রিয় ‘কানন’ও।

ঠিক কী বলেছেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়?

বিজেপি ছাড়ার ব্যাপারে বৈশাখী বলেন, ‘‘যোগদানের পর থেকে কিছু ঘটনায় বিরক্ত আমরা। রাজ্যের পর্যবেক্ষকের সঙ্গে বৈঠক হয় সম্প্রতি। আমাদের যোগদানে দলের একাংশের খারাপ লেগেছে। বারবার অসত্য কথা বলে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করা হচ্ছে। শোভনবাবুরও ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়টি বারবার বিজেপি নেতৃত্বকে জানিয়েছি। সেই যদি পুরানো দলের চটিতেই পা গলাবে বিজেপি, তাহলে তো অপমান সহ্য করে পুরানো দলেই থাকা যেত। রাজনৈতিক কথার বদলে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে। এই পরিবেশে কাজ করা অসম্ভব। আমি আমার সিদ্ধান্ত জানাই। আমার তরফ থেকে বলেছিলাম, এক মুহূর্ত বিজেপি দলে থাকা উচিত নয়। আমায় নিষ্কৃতি দিন। শোভনবাবু বলেন, সংগঠনের কাউকে বিব্রত করতে চাই না, আমাদের নিষ্কৃতি দেওয়া হোক’’।

এক্সক্লুসিভ শোভন: মমতাকে তৈরি করতে সব নষ্ট করে জীবন দিয়েছিলাম, আর উনিই রাজনীতি করলেন

sovan baisakhi , শোভন, বৈশাখী শোভন-বৈশাখী। ছবি: টুইটার।

শোভন-বৈশাখীর বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘সবার কাজ করার সুযোগ ও অধিকার আছে। দল সবার জন্য দরজা খোলা রেখেছে। কারও কোনও অসুবিধে হলে আলোচনা করে মেটানো হবে। যাঁরা এসেছেন, তাঁরা সিদ্ধান্ত নিক কী করবেন’’। রাজ্যের এক শীর্ষ বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘শোভনবাবুকে ডাকলে বৈশাখীকেও ডাকতে হবে সবসময়, এটা বিজেপি দলে হয় না। এটা তৃণমূলে হয়। আমাদের দলে এসব হবে না’’। বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপিতে থাকতে হলে, নিয়ম মানতে হবে, বিজেপির নীতি-আদর্শ মানতে হবে’’।

উল্লেখ্য, ১৪ অগাস্ট দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে শোভন-বৈশাখীর যোগদান পর্ব থেকেই জটিলতার সূত্রপাত। সেদিন বিজেপি সদর দফতরে শোভন-বৈশাখীর যোগদানের কয়েক মুহূর্ত আগে নাটকীয়ভাবে সেখানে হাজির হন রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়। 'প্রাক্তন বান্ধবী’কে দেখে চমকে যান শোভন। ‘দেবশ্রী রায় যোগ দিলে, আমরা যোগ দেব না’, বিজেপি নেতৃত্বকে এ কথা স্পষ্ট করে দেন শোভন। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতেও দেবশ্রীকে দলে নিলে, সেদিনই শোভনের বিজেপিতে শেষদিন হবে বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানান বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। এখান থেকেই বিজেপির সঙ্গে শোভন-বৈশাখীর ‘মন কষাকষির’ সূত্রপাত বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।

আরও পড়ুন: মমতাকে ‘আমন্ত্রণ’ মুকুলের, ‘তবে মুখ্যমন্ত্রী একই থাকবে, এর কোনও মানে নেই’!

sovan chatterjee, debashree baisakhi, শোভন-দেবশ্রী-বৈশাখী শোভন-দেবশ্রী-বৈশাখী।

এদিকে, শোভন-বৈশাখীর ‘আপত্তি’-তে ১৪ অগাস্ট বিজেপি দফতর থেকে দেবশ্রীকে খালি হাতে ফিরতে হলেও পরবর্তী কয়েক দিনে তাঁর বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা ক্রমশ বাড়তে থাকে। উল্লেখ্য, বিজেপি দফতরে দেবশ্রীর ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’ প্রসঙ্গে দিলীপ ঘোষ তাৎপর্যপূর্ণভাবে বলেছিলেন, ‘‘বাজার থেকে আমরা অনেক কিছু কিনি, সবটা রান্না করি না, কিছু ফ্রিজে রাখি’’। সেই ইঙ্গিতবাহী মন্তব্যের পরই চলতি সপ্তাহে বেশ কয়েকদিন ‘উধাও’ থাকার পর সল্টলেকে দিলীপের বাড়িতে পৌঁছে যান দেবশ্রী। পরে সংবাদমাধ্যমের ভিড় দেখে গাড়ি থেকে না নেমে প্রায় ৪০ মিনিট অপেক্ষা করার পর ফিরে যান টলিউডের একসময়ের ‘পয়লা নম্বর নায়িকা’। পরের দিনই সাংবাদিক বৈঠকে দিলীপ বলেন, ‘‘উনি কী চান, আমরা কী চাই, সে নিয়ে বোঝাপড়া হলেই দলে নিয়ে নেব’’। এদিন, রাজ্য বিজেপির আরেক নেতা বলেন, ‘‘দেবশ্রী যোগ দিয়ে দেবেন বিজেপিতে’’। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের এই মন্তব্যের পর দেবশ্রীর বিজেপিতে যোগ দেওয়া এখন কার্যত সময়ের অপেক্ষা বলে মত রাজনীতির কারবারিদের একাংশের। আর এর ফলে শোভন-বৈশাখীর আপত্তিকে যে বিজেপি কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়েই দেবশ্রীকে দলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে, তা স্পষ্ট। আর এর ফলেই 'স্বাভাবিকভাবে' বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে শোভন-বৈশাখীর, এমনটাই মত।

অন্যদিকে, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর রাজ্য বিজেপি দফতরে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বৈশাখীকে আমন্ত্রণ না জানানো নিয়েও বিস্তর টালবাহানা চলে। সেদিনই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বিজেপি ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে দেন ‘অপমানিত’ বৈশাখী। পরে শোভনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গেলেও ‘মুখ গোমড়া’ করেই সারাক্ষণ বসেছিলেন শোভনের বান্ধবী। এরপর কয়েকদিন আগে রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকেও গরহাজির থাকেন শোভন-বৈশাখী। বিজেপির তরফ থেকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও, এ প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বৈশাখী বলেছিলেন, তাঁদের ডাকা হয়নি। এ ঘটনাপ্রবাহতেই স্পষ্ট হয়েছিল যে, শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে বিজেপির সম্পর্কে চিড় ধরছে। সেই চিড় যে ফাটলে পরিণত হয়েছে এবং এখন সেই ফাটল যে বাড়ছে তা স্পষ্ট।

bjp
Advertisment