পুরভোটের আগেই কি বঙ্গ রাজনীতিতে ফের স্বমহিমায় ‘অবতীর্ণ’ হবেন শোভন চট্টোপাধ্যায়? বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যে মঙ্গলবার তেমন জল্পনাই ছড়াল। হোলির দিন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের পর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে শোভন-বান্ধবী তথা অধ্যাপিকা বৈশাখী বললেন, ‘‘শোভনবাবুর রাজনৈতিক শোকবার্তা লেখার সময় আসেনি। শোভনবাবু কোন দিন, কোথায়, কখন অবতীর্ণ হবেন, তা ভবিষ্যৎ বলবে...পুরভোটের দিন ঘোষণা হয়নি এখনও, প্রার্থী ঘোষণাও হয়নি। দেখা যাক, কোথায় উনি সক্রিয় হন। সময় বলে দেবে’’। রত্না চট্টোপাধ্যায় প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতেই বৈশাখীর মন্তব্য, ‘‘ধার করা রাজনীতির পরিচয়ওয়ালা মানুষকে নিয়ে আলোচনা করি না, করবও না’’।
আরও পড়ুন: শোভন চাইলে আমি হাসিমুখে সরে যাব: রত্না
পুরভোটের আগে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ঘিরে ক্রমশ নাটকীয় মোড় নিচ্ছে বঙ্গ রাজনীতি। শনিবার শোভনের দীর্ঘদিনের জীবনসঙ্গী রত্না চট্টোপাধ্যায়ের কাঁধে কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের ওয়ার্ড (১৩১ নং) ও বিধানসভা কেন্দ্রের (বেহালা পূর্ব) দায়িত্ব তুলে দিয়েছে মমতার দল। মমতা ব্রিগেডের এই সিদ্ধান্ত শোভন চট্টোপাধ্যায়ের তৃণমূলে ফেরার আশায় জল ঢেলে দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। এরপর হোলির দিন কার্যত নয়া জল্পনার জন্ম দিল তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রায় ঘণ্টা দুয়েকের বৈঠক।
আরও পড়ুন: শোভনকে ‘ধাক্কা’ তৃণমূলের! বড় দায়িত্ব পেলেন রত্না
এদিনের বৈঠক প্রসঙ্গে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে বৈশাখী বলেন, ‘‘উনি শিক্ষামন্ত্রী, কলেজ সংক্রান্ত বিষয়ে কথা হয়েছে। দোলের পরের দিন এসেছি, শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। বেশ কিছু কথা ছিল’’।
এরপরই শোভন চট্টোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে বৈশাখী বলেন, ‘‘শোভনদা তৃণমূলে সক্রিয় হবেন কি হবেন না, কোন দলে থাকবেন, তা ওঁর সিদ্ধান্ত। শোভনবাবু একজন রাজ্য ও জাতীয় স্তরের নেতা। ৩৫ বছর ধরে উনি রাজনীতিতে সক্রিয়। আমার মনে হয় না, উনি নিজের সম্পর্কে এতটা অসচেতন যে কেউ সক্রিয় হচ্ছেন বলে উনি নিজে সক্রিয় হবেন না। এমন বিবেচনা করবেন না বলেই মনে করি। উনি এখনও মানুষের মনে আছে। উনি একদমই নিষ্ক্রিয় ও নিস্তেজ নয়। কোনদিন কোথায় অবতীর্ণ হবেন, সেটা তো ভবিষ্যৎ বলে দেবে। আমার মনে হয় না ওঁর রাজনৈতিক শোকবার্তা লেখার সময় এসেছে’’।
আরও পড়ুন: মমতার গুণ রয়েছে…আমার মা ওঁকেই ভোট দিয়েছিল: রূপা
এরপরই রত্নাকে নিশানা করে বৈশাখী বলেন, ‘‘বাংলার গর্ব মমতা’ কর্মসূচিতে কোথায় কে 'কো-অর্ডিনেটর' তাঁদের নাম জানেন? রত্না চট্টোপাধ্যায়ের নামটাই জানানো হল! আসলে রত্না চট্টোপাধ্যায়ের নাম সকলে জানেন শোভনের সূত্রেই। যাঁর অস্তিত্বই আরেকজনকে কেন্দ্র করে, তাঁর নিশ্চয়ই রাজনৈতিক পরিচয় নেই এখনও। আমি সে ধরনের ধার করা রাজনীতির পরিচয়ওয়ালা মানুষকে নিয়ে আলোচনা করি না, করবও না’’।
আরও পড়ুন: মমতা প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে গোপন বোঝাপড়া করছেন, বিস্ফোরক মুকুল
বৈশাখী আরও বলেন, ‘‘পার্থবাবু তো দীর্ঘদিনের রাজনীতি করা লোক। ৩৫ বছরের রাজনৈতিক জীবন যাঁর, তাঁর বিকল্প হিসেবে এমন কারও নাম তুলে ধরার চেষ্টা করছেন, যাঁর ৫ বছরের অভিজ্ঞতা নেই। আমার মনে হয়, একেকটা কমেন্ট করা হয়, একেকটা কনটেক্সটে, সেটাকে অতি গৌরবান্বিত না করাই ভাল। সবাই সবার মতো কাজ করুন’’। উল্লেখযোগ্যভাবে এদিন পার্থর বাড়ি থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে বৈশাখী বলেন, শোভনবাবুর ক্ষেত্রে পার্থবাবুর একটি স্নেহ কাজ করে। আর তাছাড়া পার্থ চট্টোপাধ্যায় চাইলেই তো শোভন তৃণমূলে ফিরতে পারেন না। তৃণমূলে আরও অনেক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও পাওয়ার লবি আছে।
এদিকে, শোভনকে বিজেপিতে সক্রিয় করার চেষ্টা চালাবেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ। এ প্রসঙ্গে শোভন-বান্ধবী এদিন বলেন, ‘‘এটা দিলীপবাবুর ব্যাপার। সত্যিই যদি মনে করে থাকেন, সেটা দিলীপদার আকাঙ্খা। আমিও চাইব উনি সক্রিয় হোন’’।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন